ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ট্রাকের হেলপার থেকে বিসিএস ক্যাডার

ট্রাকের হেলপার থেকে বিসিএস ক্যাডার

পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তি মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই কথা যারা বলে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই বলা যায়, এই কথাটি কখনো ব্যতিক্রম হতে পারে না। যারা এটা মেনে চলছে সাফল্য তাদের হাতে ধরা দিয়েছে। তার প্রমাণ শফিকুল ইসলাম। ট্রাকের হেলপার থেকে আজ বিসিএস ক্যাডার।

শফিকুলের বাবা ছিলেন একজন বিড়ি শ্রমিক আর মা গৃহিণী। অভাবের সংসারে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বাবা। কোনো রকমে চলে তাদের সংসার। কিন্তু থেমে থাকেননি শফিকুল ইসলাম। তাকে থামাতে পারেনি অভাব। তাকে থামাতে পারেনি কোনো বাধা। নানা প্রতিকূলতাকে পেরিয়ে ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন কুড়িগ্রামের এই ছেলে।

বাবা আব্দুল খালেক জানান, পাঁচজন ছেলে সন্তানসহ সাতজনের সংসার। শফিকুল চতুর্থ ছেলে। ছোট থেকেই তার পড়াশুনার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু অভাবের কারণে পড়াশুনার খরচ দিতে পারিনি। টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়াতে পারিনি ওকে। শফিকুল খেয়ে না খেয়ে নিজের চেষ্টা আর মানুষের সহযোগিতায় এতো দূর এসেছে। ওর স্কুলের শিক্ষকরাও টাকা-পয়সা দিয়ে যথেষ্ট সহাযোগিতা করেছে। আমি শফিকুলের সাফল্যে গর্বিত।

শফিকুলের মা ছবেনা বেগম বলেন, অভাবের সংসারে শুধুমাত্র ১৫শতক বসত ভিটে ছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই। টিনসেড ঘর। খুব কষ্টে এখানেই সবাই মিলে বসবাস করি। আমার ছেলে তার পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকুর তিনি অভাবী মায়ের কথা শুনেছেন।

শফিকুল ইসলাম জানান, দারিদ্রতার কারণে সপ্তম শ্রেণিতেই বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল পড়াশুনা। পরে শিক্ষকরা স্কুলে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ করে দেন। তবে খাতা-কলমসহ অন্যান্য খরচের অভাবে কোনো রকমে চলে পড়ালেখা।

২০০৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে সংসার আর পড়াশুনার বাড়তি খরচ জোগাতে কাঠমিস্ত্রির যোগালির হিসেবে দিনে ৩০ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করেন শফিকুল। তার আগে তিনি ট্রাকের হেলপারিও করেন। এভাবেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ প্লাস পেয়ে সবাইকে চমকে দেন।

মানবিক বিভাগ থেকে কুড়িগ্রামে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জিপিএ-৫ পান শফিকুল। কষ্ট করে জীবনে প্রথম সাফল্য পেয়ে পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। শফিকুল ভর্তি হন পার্বতীপুরের খোলাহাট ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে।বিশ্ববিদ্যালয়ে খেয়ে না খেয়ে চলে তার দিন। অর্থের অভাবে এবার শফিকুলের পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একপর্যায়ে লিফলেট বিতরণ, ডাটা এন্ট্রি কাজ, শো-রুমে থাকার কাজ করেন তিনি। এতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় পড়াশুনায়। কম বেতন পেতেন, আর বেশি পরিশ্রম করতে হতো। সবকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা পড়েন। এসময় তার বিভাগের (অব.) প্রফেসর কেএএম সাদ উদ্দিন স্যার তাকে সাহায্য করেন।

তিনি শফিকুলকে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। এভাবেই পরিশ্রম আর নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যেতে থাকেন। পড়াশুনা করতে থাকেন।

এরপরের কথা শুধুই শফিকুলের এগিয়ে যাওয়া। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে লালমনিরহাট সরকারি মজিদা খাতুন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত