ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শাম্মী নেই, বিশ্বাস করব কীভাবে : রফিকউজ্জামান

  মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৫২

শাম্মী নেই, বিশ্বাস করব কীভাবে : রফিকউজ্জামান
শাম্মী আখতার : বামে সাম্প্রতিক, ডানে পুরনো ছবি

শাম্মী নেই। আমি বিশ্বাস করবো কী ভাবে? সময় বয়ে যায়, জানি। কিন্তু আমার যে মনে হয়, এই তো সেদিন, আমার বাসায় শাম্মী - আকরামের বিয়ে দিলাম। উপস্থিত ছিলেন, খোন্দকার নূরুল আলম, সত্য দা (সাহা), অজিত দা (রায়), নুরুজ্জামান দুলাল, সুবীর নন্দী এবং আকরামের সিলেটের কয়েকজন বন্ধু। আমিই কন্যাকর্তা, আমিই উকিল বাবা।

গত ৯ জানুয়ারী আমি মা হারিয়েছি। সেই শোক কোনো দিনই কাটিয়ে উঠতে পারবো না। তারই মধ্যে ১৬ তারিখ, বিকেল চারটার কিছু পরে যশোর বসেই খবর পেলাম, 'শাম্মী এই মাত্র চলে গেলো'। ধক করে উঠলো বুকের ভিতর। আমি মা হারিয়েছি, কোমল(শাম্মীর ছেলে) মা হারালো। কোমল এখন মস্ত চাকরী করে। কিন্তু মাঝখানের সময়টা যে কবে কবে পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।

কতো কথা, কতো স্মৃতি ! কয়েকটি পরিবারের প্রায় এক পরিবার হয়ে ওঠা, -- আমার পরিবার, খোন্দকার ভাইএর পরিবার, সত্যদার পরিবার, শাম্মী-আকরামের পরিবার, রফিকুল আলম - আবিদা সুলতানার পরিবার, সুবীর নন্দী, দুলালের পরিবার --- কখনো আমার বাসায়, কখনো খোন্দকার ভাইএর বাসায়, কখনো সত্যদার বাসায় সমবেত হয়ে সংগীতসহ কতো খুটি-নাটি বিষয় নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টার আড্ডা। এর পরে যোগ হয়েছিলো শাকিলা এবং সুলতানা চৌধুরীসহ আরো অনেক শিল্পী।

মনে পড়ে, ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসের উদ্যোগে সারা দেশ থেকে প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের ঢাকায় নিয়ে এসে গান রেকর্ড করানো। শাম্মীও ছিলো তাদের একজন। তাদের মধ্যে যারা বিশেষ ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো, শাম্মী আখতার তাদেরই একজন। এই নতুন শিল্পীদের জন্যে তখন একের পর এক গানের কবিতা লিখেছি। লিখেছেন আরো অনেকেই। নতুন শিল্পীর কন্ঠে গান দাঁড়াবে কি দাঁড়াবে না, আমরা তা একবারও চিন্তা করিনি। কিন্তু আমাদের সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে তাদের গান মানুষের হৃদয়ে স্থান করেছে। শুধু আমরা নই, বড় মাপের সুরস্রষ্টা প্রায় সবাই শাম্মীকে দিয়ে গান করিয়ে প্রত্যাশিত ফল পেয়েছেন।

আধুনিক বাংলাগানের ভুবনে তখন ওই নতুন শিল্পীরা এক নবজাগরণের সৃষ্টি করে। চলচ্চিত্রেও তারা সফল হয়, দারুণ ভাবে। শেখ সা'দী খানের সুরে, ''ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না'' এই গানটির জন্যে শাম্মী জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। শাম্মী আখতার ব্যক্তিগত ভাবে আমার ছোটবোন। আমার কোনো বোন না থাকায়, শাম্মী সেই শুন্যস্থানটা অধিকার করে নিয়েছিলো নিজের গুণেই। ওর চিরবিদায়ের খবর শুনে, আকরামুল ইসলামকে ফোন করে তার বুকভাঙা কান্না শুনে, নিজেকে স্থির রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সম্ভব-অসম্ভব এমন কিছুই নেই, যা সে তার ভালোবাসার শাম্মীর জন্যে করেনি। কী সান্তনা দিতে পারতাম আমি তাকে? নেই, কোনো সান্তনা নেই, আকরামের জন্যে, কোমলের জন্যে। সান্তনা হিসেবে গৎবাঁধা কিছু কথা বলতে পারিনি আমি। পারবো না কোনোদিন।

আমাদের বাংলাগানের জগতের সবচেয়ে শান্ত-সুশীল মেয়েটি আর নেই। এটাই চিরসত্য। তবু সে বেঁচে থাক তার গানে, অনন্তকাল, এটাই কামনা। শাম্মী, যেখানেই থাকো, চিরশান্তিতে থাকো।

লেখক : বরেণ্য গীতিকবি

(লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া)

  • সর্বশেষ
  • পঠিত