ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

#মি টু: প্রতিবাদকারীদের বাবারাই যখন যৌন হেনস্তাকারী!

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০০

#মি টু: প্রতিবাদকারীদের বাবারাই যখন যৌন হেনস্তাকারী!

যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে বলিউডজুড়ে চলছে ‘#মি টু’ অভিযান। বলিউডের নারীরা সরব হয়েছেন হেনস্তার প্রতিবাদে। প্রকাশ করছেন তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো। প্রতিবাদ জানানো নারীদের পাশে আবার দাঁড়াচ্ছেন অন্য নারীরাও।

কিছু দিন আগেই বলিউডের ১১জন নারী নির্মাতা মিলে যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে একটি জোট করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম নির্মাতা নন্দিতা দাস। কিন্তু এবার অভিযোগের কাঠগড়ায় নন্দিতা দাসেরই বাবা!

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। যেই নন্দিতা দাস যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে ‘#মি টু’ ক্যাম্পেইন করছেন, সেই নন্দিতার বাবা শিল্পী যতীন দাস একজন যৌন হেনস্তাকারী। পদ্মভুষণ খেতাবপ্রাপ্ত এই বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর হেনস্তা করেছিলেন এক নারীকে।

গত ১৬ অক্টোবর নিশা বোরা নামে একজন মহিলা প্রথম টুইটারে যতীন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, চোদ্দ বছর আগে তিনি ওই শিল্পীর হাতে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। যতীন দাসকে ‘মাই মলেস্টর’ বলে অভিহিত করে নিশা বোরা বিশদে বর্ণনা দিয়েছেন, কীভাবে দিল্লিতে নিজের স্টুডিওতে ডেকে পাঠিয়ে শিল্পী তাকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন।

নন্দিতা দাস ও তার বাবা যতীন দাস

তার ওই বিবরণ প্রকাশিত হওয়ার পর গারুশা কাটোচ, মালবিকা কুন্ডু ও অনুশ্রী মজুমদারের মতো আরও অনেক মহিলা প্রকাশ্যে এগিয়ে এসে যতীন দাসের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, জানিয়েছেন শিল্পী কীভাবে তাদেরও বিভিন্ন সময়ে যৌন হেনস্তা করেছিলেন।

বাবার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের কথা শুনে চুপ থাকেননি নন্দিতা দাস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘#মি টু’ আন্দোলনের প্রতি আমি আমার সমর্থন চালিয়ে যাব। এই আন্দোলনের একজন বলিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে আমি আবারও বলতে চাই, যদিও আমার বাবার বিরুদ্ধে কিছু বিচলিত করার মতো অভিযোগ উঠেছে, এবং সেগুলো তিনি অস্বীকার করেছেন। তবুও আমি এই আন্দোলনের পক্ষে সরব থাকবো। প্রথম থেকেই আমি বলে আসছি এটা এমন একটা সময় যখন আমাদের শোনাটা খুব প্রয়োজন, যাতে নারীরা (ও পুরুষরা) মুখ খুলতে ভরসা পায়। পাশাপাশি অভিযোগগুলো নিয়ে নিশ্চিত হওয়াটাও কিন্তু জরুরি, যাতে এই আন্দোলনে বেনোজল না-ঢুকে যায়!

নন্দিতা আরো লেখেন, আমি অভিভূত যে চেনা-অচেনা বহু লোক বিষয়টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমার সততার ওপর আস্থা রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সত্যিটা একদিন সামনে আসবেই। আর এই মুহূর্তে আমার এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।

শুধু নন্দিতা দাসই নয়, অভিযোগ উঠেছে আরেক তারকার বাবার বিরুদ্ধেও। তিনি মল্লিকা দুয়া। ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় কমেডিয়ান এই নারী। তার বাবা ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবপ্রাপ্ত সাংবাদিক বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন নিষ্ঠা জৈন নামের এক চিত্রনির্মাতা ও সাংবাদিক।

১৯৮৯ সালে চাকরির ইন্টারভিউতে ডেকে ও পরে নিজের গাড়িতে বসিয়ে কীভাবে বিনোদ দুয়া তাকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন, প্রায় তিরিশ বছর পর সে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন নিষ্ঠা।

মল্লিকা দুয়া ও তার বাবা বিনোদ দুয়া

বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় কমেডিয়ান মল্লিকা দুয়াও নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ইনস্টাগ্রামে বাবার সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, নিষ্ঠা জৈনের প্রতি : আপনি যা বর্ণনা করেছেন, আমার বাবা যদি সত্যিই সেই অপরাধে দোষী হন, তাহলে সেটা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য, যন্ত্রণাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। ‘#মি টু’ আন্দোলনের প্রতি আমার সহমর্মিতা অটুট থাকবে, এই কন্ঠস্বরগুলোকেও আমি সমর্থন করে যাব। কিন্তু অভিযোগ করতে গিয়ে যেভাবে আপনি আমার নামকেও টেনে এনেছেন সেটা অত্যন্ত কুরুচিকর।

মল্লিকা দুয়া আরো লেখেন, বাকি সবার প্রতি: এই লড়াইটা কিন্তু আমার নয়। এটা আমার কোনও দায় নয়, লজ্জা নয় বা আমার কোনও বোঝাও নয়। এটা পুরোপুরি আমার বাবারই লড়াই। আমি তাকে তার লড়াই লড়তে দেব, এবং অবশ্যই তার পাশে থাকব।

মল্লিকা দুয়া যে নিজের অভিযুক্ত বাবার পাশেই আছেন, সম্ভবত সেটা বোঝাতেই কিছুক্ষণ পর ইনস্টাগ্রামে আর একটি পোস্ট করেন তিনি। যাতে দেখা যাচ্ছে স্কুল বা কলেজজীবনে জেতা কোনও ট্রফি তার হাতে, আর গর্বিত বাবা বিনোদ দুয়া সস্নেহে তার কাঁধে হাত রেখে আছেন। মল্লিকা ছবিটির নিচে ক্যাপশন দেন, ‘হিরোদের রাতারাতি গড়াও যায় না, আবার ভাঙাও যায় না। # পাপাজি।’

এই সব অভিযোগ নিয়ে যখন তুলকালাম চলছে, তখন মল্লিকা দুয়া যেভাবে নিজের বাবাকে ‘হিরো’ বলে বর্ণনা করেছেন, এটার সমালোচনা করছেন অনেকে। কলামনিস্ট স্নেহা বেনগানি বলেছেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না-হওয়া পর্যন্ত মেয়ের তার পাশে দাঁড়ানোটা এক জিনিস। কিন্ত বাবা যখন গুরুতর যৌন অসদাচরণে অভিযুক্ত, তখন তাকে হিরো বলে ডাকাটা আর এক জিনিস। এটা শুধু মুশকিলের নয়, চরম ভন্ডামিরও পরিচয়!’

এদিকে যতীন দাস ও বিনোদ দুয়া দু’জনেই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। তারা এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত