ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

'ভয়ংকর সুন্দর' হারিয়ে যাওয়ার সিনেমা নয়: জয়া

'ভয়ংকর সুন্দর' হারিয়ে যাওয়ার সিনেমা নয়: জয়া

অনিমেষ আইচ প্রযোজিত ও পরিচালিত 'ভয়ংকর সুন্দর' চলচ্চিত্রটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। মুক্তির পর থেকেই এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, এর আগে কোন সিনেমা নিয়েই এত আলোচনা বা সমালোচনা হয়নি!

'ভয়ংকর সুন্দর' নিয়ে অনেক বোদ্ধারাই তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন পত্র-পত্রিকায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কারো লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে ভালোলাগা, আবার কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন আক্রমণাত্মক!

সম্প্রতি 'ভয়ংকর সুন্দর' নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকদের জন্য -

'গত কদিন ধরে বেশ আক্রমণাত্মক লেখা পড়ছিলাম অনিমেষ আইচ'র 'ভয়ংকর সুন্দর' নিয়ে। লেখাগুলো পড়ে 'ভয়ংকর সুন্দর' দেখার তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ছবিটি আমি একবারেই দর্শক সিটে বসে দেখেছি এবং দর্শক হয়ে ছবিটি উপভোগ করেছি। দর্শক একই জায়গায় হাসছে, রিএক্ট করছে,আবার পুরো হল পিনড্রপ সাইলেন্ট হয়ে যাচ্ছে। দর্শক কমিউনিকেট করতে পারছে।কম্প্যাক্ট একটি সিনেমা। অনিমেষের প্রথম সিনেমা 'জিরো ডিগ্রি'তে আমি কাজ করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় 'ভয়ংকর সুন্দর' 'জিরো ডিগ্রি'র চেয়েও পরিণত। 'জিরো ডিগ্রি' দেখার পর কিছু জায়গা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছিলো কিন্তু এই ছবিটির ক্ষেত্রে তা হয়নি।

অনিমেষ বরাবরই একজন মেধাবী, শক্তিশালী নির্মাতা। সবসময়ই সে শক্তিশালী গল্প বলার সাহস রাখে। এই ছবির মূল নায়ক বা সঞ্চালক ছবিটির গল্প। পানি বিহীন একটি দিন কল্পনা করে দেখুন তো। প্রচলিত বিষয়গুলো এড়িয়ে পানির মতো একটি বিষয়কে উপজীব্য করে ছবি তৈরির সাহস কিন্তু তিনি দেখিয়েছেন। প্রচলিত গল্প বলার ধরণ থেকে আলাদা করে গল্প বলার চেষ্টাও আছে ছবিটিতে। এক এক জন নির্মাতার আদর্শ, চিন্তা, গল্প বলার ঢঙ আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। এই ছবিতেও আলাদা করে গল্প বলার চেষ্টা আছে। এক্ষেত্রে নির্মাতা সফল। নতুন কোনো কিছুকে বুঝতে না পারার দায় নির্মাতার নয়। দর্শকেরও নতুনকে গ্রহণের প্রস্তুতি থাকতে হবে।

অভিনয়ের সুর, তাল, লয় সব ভালো ছিলো। ভাবনা নয়নতারা চরিত্রে কনভিন্সিঙ। পরমের চরিত্রটা ভীষণ মায়াময় লেগেছে।পরমকে একজন আদর্শ হোটেল বয়ের মতই লেগেছে। দুজনের ক্যামিস্ট্রি ভালো লেগেছে। অন্যরাও যে যার জায়গায় ভালো করেছে। লাইট, ক্যামেরা মোটামুটি। তবে টেকনিক্যালি বলতে গেলে কালার কারেকশন কনভিন্সিঙ নয়। আর ভালো লাগেনি অনলাইন প্রচারণা। পোস্টার প্রচারণা আরেকটু ভালো হতে পারতো। অনিমেষের কাছে থেকে এটুকু আশা করতেই পারি। ছবিটির প্রথমার্ধ নিয়ে কিছু অবসেরভেশন আছে কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ অবশ্যই আকাঙ্খা তৈরী করে ।

আমাদের দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ কতটা কষ্টসাধ্য তা নির্মাতা বা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিমাত্রই জানেন। এখানে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ একজন ডিরেক্টরকেই করতে হয়। নানামুখী বাধা পেরিয়ে ছবিটা আলোর মুখ দেখে। বাহির থেকে নিন্দা-আক্রমণাত্মক কথা বলা এখানে যতটা সহজ সিনেমা নির্মাণ করা ততটাই কঠিন একটি প্রক্রিয়া। প্রতি বছর দুর্বল গল্প-অভিনয়-রিমেক গল্পের চিত্রনাট্যে প্রচুর সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে।কিন্তু সেইসব সিনেমা নিয়ে কাউকে তেমন কিছু বলতে দেখা গেলো না। কিন্তু অনিমেষের এই 'ভয়ংকর সুন্দর' নিয়ে এমন আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া আমাকে অবাক করেছে। বুঝতে পারিনি সগোত্রীয়দের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণ কী।

'ভয়ংকর সুন্দর' এর প্রোডিউসারও অনিমেষ আইচ। একই সাথে অর্থলগ্নি ও পরিচালনা করা একটি দুঃসাহসিক কাজ। অার দ্বিতীয় ছবি বানাতে অনিমেষের তিনবছর লেগে গেলো। নানা প্রতিকূলতার মাঝে দাঁড়িয়েও কিন্তু নিজের মত করে গল্পটা বলতে পেরেছে, যেখানে আমরা অনিমেষ আইচকে খুঁজে পাই। চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে অনিমেষ আইচের এমন পদক্ষেপের জন্য বাহবা পেতে পারে। কিন্তু তা না করে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়ার সংস্কৃতি চালু হলো। এটা যদি অব্যাহত থাকে- তাহলে কী প্রডিউসার সীপ দাঁড়াবে? তবে সময়ই সবচেয়ে বড় বিচারক। আমি মনে করি, সময়ের বিচারে 'ভয়ংকর সুন্দর' হারিয়ে যাওয়ার সিনেমা নয়'।

/এসবি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত