ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

এক কন্যা শিশু ও একটি গোপন চিঠি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৪৫

এক কন্যা শিশু ও একটি গোপন চিঠি

যুক্তরাষ্ট্রের হাডসনভিল থেকে সুদূর চীনের হাংজু শহর ভ্রমণ করছেন কাটি পোহলার। ওই শহরের একটি ব্রিজের উপর বহুদিন ধরে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন, নির্দিষ্ট একটি সময় অপেক্ষা করেন লিডা ও ফেংশিয়াং দম্পতি। অবশেষে তাদের সেই অপেক্ষারও অবসান হয়েছে।

চীনে বহুদিন ধরে এক সন্তান নীতিমালা বলবত ছিল। একটির বেশি সন্তান হলেই দম্পতিদের দেওয়া হতো কঠোর শাস্তি। জোরপূর্বক গর্ভপাত, সন্তান নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া অথবা জরিমানা করা হতো শাস্তি হিসেবে। তাই অনেক দম্পতি ভয়ে একের অধিক সন্তান হয়ে গেলে তা গোপন করতেন। অথবা কোনো উপায় না থাকলে সেই সন্তানকে পরিত্যাগও করতেন।

তেমনটিই হয়েছিল ১৯৯৪ সালে জন্ম নেওয়া কাটি পোহলারের বেলায়। তার জন্মদাতা বাবা ফেংশিয়াং বলেন, 'গর্ভপাত করে ফেললে আমাদের খুবই কষ্ট হতো। আমাদের মনে হয়েছিল শিশুটিকে যদি আমরা নিজেরা মানুষ করতে নাও পারি ওকে অন্তত দত্তক দিতে পারবো।

শিশুটিকে তাই স্থানীয় বাজারে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ফেংশিয়াং বলেন, 'ওর জন্মের তিন দিন পর আমি সকালে উঠে ওর জন্য দুধ বানালাম। ওকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকলাম। তারপর বাজারের দিকে হেঁটে গেলাম। ও ঘুমাচ্ছিল। তাই ও সেদিন কাঁদেনি। আমি ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ওকে বিদায় জানালাম।'

কাটির আশ্রয় হয়েছিল একটি অনাথ আশ্রমে। সেখান থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাডসনভিল শহরের কেন ও রুথ পোহলার দম্পতি। শ্বেতাঙ্গ পরিবারে বড় হওয়া চীনা শিশুটি প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো সে কোথা থেকে এলো।

রুথ পোহলার বলেন, ও একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমি কার পেট থেকে এসেছি? আমি কি তোমার পেট থেকে এসেছি? আমি ওকে বলেছিলাম, না, তুমি চীন দেশের এক নারীর পেট থেকে এসেছ। কিন্তু আমার হৃদয়ে তোমার জন্ম। কথাটা শুনে ও খেলতে চলে গেলো। আমার এই জবাবে যেন ও সন্তুষ্ট হয়েছিল।

কাটি আপাতত সন্তুষ্ট হলেও কৌতূহল তার মেটেনি। যে অনাথ আশ্রম থেকে কাটিকে দত্তক নিয়েছিলেন কেন ও রুথ পোহলার তারা সঙ্গে করে দিয়েছিলেন সাদা কাগজে লেখা একটি চিঠি।তাতে লেখা ছিল তারা বাবা মায়ে করুণ আর্তি।

ফেংশিয়াং সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, দারিদ্র এবং অন্য কিছু সমস্যার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে তোমাকে ফেলে যাচ্ছি। আমাদের ছোট্ট শিশু, তোমাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না। তোমার মনের গভীরে কোথাও কোনোদিন যদি বাবা-মায়ের জন্য কোনো অনুকম্পা জন্ম হয়, তাহলে আজ থেকে ১০ অথবা ২০ বছর পর হাংজু শহরের ভাঙা ব্রিজটির ওপরে এসো।

ফেংশিয়াং বলেন, ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট দিনটিতে আমি সেই ভাঙা ব্রিজটির ওপর অপেক্ষা করতাম। আমি জানতাম হয়তো তাতে কোনো আশা নেই, তবু আমি অপেক্ষা করতাম। যখন ওর সঙ্গে দেখা হবে তখন ওকে আমি কিই বা বলতে পারবো। ওরা কাছে যদি আমি হাজারো বার ক্ষমা চাই- তা কি যথেষ্ট হবে।

সম্প্রতি কাটির হাতে চিঠিটি দিয়েছিলেন তাকে দত্তক নেওয়া বাবা-মা। আর সেই চিঠির সূত্র ধরেই কাটি মিলিত হলেন তার জন্মদাতা আসল বাবা-মায়ের সঙ্গে।

আমি বড় হওয়ার সময় তেমন কোনো প্রশ্ন করিনি। তবে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার জন্মদাতা বাবা-মা সম্পর্কে তিনি কতটুকু জানেন। একদিন মা বলেছিলেন একটা জিনিস অনেক আগেই তোমাকে দেওয়া উচিত ছিল- বলছিলেন কাটি পোহলার।

কাটি আরো বলেন, আমার আসল বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়া নিয়ে আমার একটা ভয় ছিল। আমার মনে হতো আমি যদি ওদের কোনোভাবে হতাশ করি। আমাকে ফেলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ওরা হয়তো একটা অপরাধবোধে ভুগেছেন। আমি বুঝতে পারি ওরা কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছে।

সেই কষ্টের বুঝি অবসান হলো অবশেষে। হাংজু শহরের সেই ভাঙা ব্রিজটি এখন আর ভাঙা নেই। কিন্তু সেটির ওপরেই ২৩ বছর পর মিলিত হলেন কাটি আর তার জন্মদাতা বাবা-মা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • পঠিত