ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

আরসিবিসির অভিযোগ

নিজ দেশের অপরাধীদের আড়াল করছে বাংলাদেশ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৪:১৩

নিজ দেশের অপরাধীদের আড়াল করছে বাংলাদেশ

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ঘটনা চেপে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ম্যানিলাভিত্তিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটিকে ‘স্কেপগোট’ বানানো থেকে বিরত থাকার দাবি জানিয়েছে আরসিবিসি।

নিউইয়র্ক ফেডে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ভুয়া আদেশ পাঠানোর মাধ্যমে এ অর্থ পাঠানো হয় ফিলিপাইনে। সেখানে আরসিবিসির একটি শাখা থেকে চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ অর্থ উত্তোলন করে নেয়া হয়। সেখান থেকে দেশটির কয়েকটি ক্যাসিনোয় এ অর্থ চলে যায়। ঘটনার পর দুই বছর পেরোতে চললেও এখনো এ ঘটনার প্রকৃত নাটের গুরুদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে চুরি ও পাচারকৃত মুদ্রা উত্তোলনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত আরসিবিসির কাছ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করতে চাচ্ছে ঢাকা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শনিবার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে আরসিবিসিকে ‘দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নিউইয়র্ক ফেডের সঙ্গে যৌথভাবে আরসিবিসির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে চাচ্ছে বলে কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দেশের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্বে অবহেলা ও ঘটনা চেপে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছে আরসিবিসি।

আরসিবিসির লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান জর্জ দে লা কুয়েস্তা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে যতটা তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব, তার পুরোটাই ফিলিপাইনের সিনেট ও ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকো সেন্ট্রাল এনজি পিলিপিনাসের কাছে প্রকাশ করেছে আরসিবিসি। অন্যদিকে এ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশের বদলে চেপে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

এতে আরো বলা হয়, ‘এ অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই আংশিক হলেও দায়ী। স্বচ্ছতা বজায় রাখায় অনীহা প্রকাশের মাধ্যমে ঘটনাটিকে চেপে রাখে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি বৈশ্বিক সাইবার অপরাধবিরোধী লড়াইয়ের জন্যও ক্ষতিকারক। আরসিবিসি এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার শিকার।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে আরসিবিসি। ফিলিপাইনের প্রসিকিউটররা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক শাখা ব্যবস্থাপক ও অর্থ উত্তোলনে ব্যবহূত উল্লিখিত চার ভুয়া অ্যাকাউন্টের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। যদিও এসব ভুয়া অ্যাকাউন্টের মালিকদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের মধ্যে ভুয়া-আসল মিলিয়ে এ কয়টি নামই জানা গেছে।

এছাড়া মুদ্রা পাচার ও চুরি যাওয়া অর্থের লেনদেন ঠেকানোয় ব্যর্থ হওয়ার কারণে গত বছর প্রতিষ্ঠানটিকে রেকর্ড ১০০ কোটি পেসো (২ কোটি ডলার) জরিমানা করে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরসিবিসির পক্ষে দেয়া বিবৃতিতে ডে লা কুয়েস্তা আরো বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সেজন্য এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য প্রকাশের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। ভেতর থেকে ঘটানো এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশীকে আদালতের মুখোমুখি করা দূরের কথা, কারো নামও জানা যায়নি।’

চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অধিকাংশই এসেছে ম্যানিলাভিত্তিক জাঙ্কেট অপারেটর কিম অংয়ের কাছ থেকে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, আরসিবিসির বক্তব্য সঠিক নয়। তারা এভাবে বলতে পারেন না। সারা দুনিয়া জানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ আরসিবিসি ব্যাংকে গেছে। তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া রিজার্ভের বাকি অর্থ সে দেশে জব্ধ করা আছে। বিষয়টি এখন ফিলিপাইনে বিচারাধীন। আদালত যে রায় দেন তা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত