ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

কলকাতায় সমকামীদের বর্ণিল উৎসব

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৩৫

কলকাতায় সমকামীদের বর্ণিল উৎসব

কলকাতায় সদ্য হয়ে গেল সমকামী, রূপান্তরকামীদের একদিনের এক কার্নিভাল৷ উৎসবের পাশাপাশি কিছু জরুরি গন্তব্যেরও খোঁজ দিলো এই মেলা।

যেখানে দশ বছর আগেও ভাবা যেতো না‌ যে, প্রকাশ্য কোনও জায়গায় মঞ্চ বেঁধে, মেলা বসিয়ে নিজেদের মতো করে একটা দিন পালন করছেন সমকামী, রূপান্তরকামীরা। বরং সমকামকে অপরাধ হিসেবেই দেখার আইন যতদিন বলবৎ থাকবে, ততদিন ওঁরা ঘরের মধ্যে লুকিয়েই থাকবেন, এমনটাই বরং স্বাভাবিক ছিল। সেখানে কলকাতার মুক্ত, উদার সংস্কৃতিরই বাহবা প্রাপ্য যে, এই প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্যে কিছুটা খোলা প্রান্তর, খানিকটা খোলা আকাশ ছেড়ে দেওয়া গেল।

সেখানে দিনভর কবিতা পড়া, গান, একক এবং সমবেত নৃত্যে মেতে উঠলেন লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং ট্রান্সজেন্ডার, সংক্ষেপে ‘‌এলজিবিটি'‌র সদস্য এবং তাদের সমর্থকরা। অনেকেই এলেন, যারা দৃশ্যত ‘‌অন্যরকম’ নন। তবু এলেন, ওই অন্যরকমরাও যে আসলে এই সমাজেরই অংশ, আলাদা নয়, অন্য নয়— সেই বার্তা দিতে।

অনেক বয়স্ক মানুষ এসেছিলেন। সব মিলিয়ে ছবিটা বেশ আশাজনক। কারণ, ইনক্লুসিভ সোসাইটি, যে সমাজে সবাই অন্তর্ভুক্ত, সবার স্বকীয়তা যেখানে সমান সম্মানিত, তেমন একটা সমাজের ছবি তুলে ধরার জন্যে এটা খুব জরুরি ছিল। এই যে জমায়েত, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘‌রেনবো কার্নিভাল’ বা রামধনু উৎসব, সেখানে প্রতিটি অনুষ্ঠান, প্রতিটি উচ্চারণের মধ্যেই ছিল সেই সামাজিক অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আওয়াজ জোরদার করা।

‘‌ওয়েস্ট বেঙ্গল ফোরাম ফর জেন্ডার অ্যান্ড সেক্সুয়াল মাইনরিটি রাইটস’ নামে যে সংগঠন এই কার্নিভালের উদ্যোক্তা, তারা এই অ্যাক্সেপটেন্স, বা সামাজিকভাবে গ্রাহ্য হওয়ার পাশাপাশি রেজিস্টেন্স, বা প্রতিরোধের কথাও বলছে। এ ব্যাপারে সংগঠনের অন্যতম প্রতিনিধি কৌস্তভ মান্না ডয়চে ভেলেকে জানান, সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামীদের আইনি অধিকারের বিষয়টি অনেক সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

‌যেহেতু, তারা এখন অনেক বেশি সমাজের মূল স্রোতে আসার চেষ্টা করছেন নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় এবং স্বকীয়তা অক্ষুন্ন রেখেই। তাতে স্বাভাবিকভাবেই বাধা আসছে, যেটার মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ যে কারণে রেনবো কার্নিভালের আসরে পশ্চিমবঙ্গের ইনস্টিটিউট অফ জুরিডিকাল সায়েন্স থেকে একটি স্টল ছিল, যেখানে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য আইনি সহযোগিতার রাস্তা বাতলে দেওয়া হচ্ছিল।

এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এলজিবিটি মানুষরা এই কার্নিভালে যোগ দিতে এসেছিলেন নানা ধরনের হস্তশিল্পের পশরা নিয়ে। সেইসব ঝুটো গহনা আর সাজগোজের জিনিস নিয়ে লোকের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশ কয়েকজন বিদেশিকে দেখা গেল, যারা এলজিবিটি গোষ্ঠীভুক্ত এবং এসেছেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। এছাড়া কৌতুহলী লোকজন, এলাকার বাসিন্দা, পথচলতি মানুষ তো এসেইছেন দিনভর।

এর থেকে কি মনে হয় এলজিবিটিদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে?‌ কৌস্তভ এখনই অতটা আশাবাদী নন। কিন্তু একটা জিনিস নিশ্চিতভাবেই ঘটছে বলে তিনি জানালেন। ভিজিবিলিটি বাড়ছে। এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান হচ্ছেন এলজিবিটি মানুষজন। তারা ভয় পাচ্ছেন না, সঙ্কোচ কাটিয়ে উঠছেন। এটা শুনতে যতই সাধারণ বা সামান্য মনে হোক, এমনটা ঘটছে এবং সমাজও খুব ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে এদের দেখতে। এবং কখনও কখনও এগিয়ে এসে কথাবার্তা বলতেও শুরু করছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বললেন কৌস্তভ।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত