ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

যে কারণে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ভেন্যু সিঙ্গাপুর

যে কারণে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ভেন্যু সিঙ্গাপুর
এই দ্বীপেই হচ্ছে ট্রাম্প-কিম

আগামীকাল সিঙ্গাপুরের সন্তোষা দ্বীপে বহুল প্রতিক্ষীত শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার দুই নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্প-কিম সম্মেলনের খবর সংগ্রহ করতে সারা বিশ্ব থেকে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন প্রায় তিন হাজার সাংবাদিক ।

এর আগে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার ডি মেলিটারাইজড জোন, মঙ্গোলিয়া এমনকি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের নামও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে পরিচিত চীনকে এই বৈঠকে কোনোরকম অংশীদার করতে রাজি ছিলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এখন প্রশ্ন ওঠতে পারে তাহলে সিঙ্গাপুরে কেন বৈঠকে বসতে রাজি হলেন তিনি? কেননা সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও তো রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যেক সম্পর্ক। এর একটাই উত্তর হতে পারে, উত্তর কোরিয়ার কথা চিন্তা করেই এটিকে ভেন্যু হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। এখানে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।

বিশ্বের যে গুটিকয়েক দেশের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে তাদের অন্যতম সিঙ্গাপুর। দেশটির সঙ্গে বরাবরই ব্যবসায়িক লেনদেন চলে পিয়ংইয়ংয়ের। ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসার দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান ছিল অষ্টম স্থানে। যদিও দেশটির সঙ্গে উত্তরের বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ০.২ শতাংশ। তবে পরিমাণ যাই হউক না কেন, দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুবই উষ্ণ। এমনকি গতবছরও পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কিছু পণ্য লেনদেন হয়েছে তাদের। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি দু দেশের মধ্যে ভিসা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সিঙ্গাপুর হচ্ছে সেই গুটি কয়েক দেশের একটি যারা এখনও আমেরিকার রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস চালু রেখেছে। এমনকি জাতিসংঘ ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এখনও সিঙ্গাপুরের কমপক্ষে দুটি কোম্পানি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন অব্যাহত রেখেছে বলে চলতি বছরের গোড়ার দিকে অভিযোগ উঠেছে, যদিও তারা সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

২০১৬ সালে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’এক প্রতিবেদনে জানায়, সিঙ্গাপুর ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যে বাণিজ্যিক জাহাজগুলো যাতায়াত করে, সেগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে না সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। তবে এর চাইতেও বড় কথা হচ্ছে কিম এই দেশটিতে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা বোধ করে থাকেন। এ নিয়ে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, এটি হচ্ছে এমন একটা দেশ যেখানে কিম নিরাপত্তা বোধ করেন। এই দেশে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার বহু লোকজনের ব্যাংক একাউন্ট। সে দেশের লোকজন নিয়মিত এখানে মেডিক্যাল চেকআপ করতে আসেন। এ সম্পর্কে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া ইন্সটিউটের মাইকেল ম্যাডেন বলেন, ‘উত্তর-কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’ যদিও বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করে না সিঙ্গাপুর।

শুধু অর্থনৈতিক নয়, সিঙ্গাপুরকে বেছে নেয়ার আর একটি কারণ হচ্ছে এর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা। কোনো বিশেষ দেশ বা মতের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে না সিঙ্গাপুর সরকার। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসংক্রান্ত রোম চুক্তিটিও স্বাক্ষর করেনি সিঙ্গাপুর। তাই এখানে বৈঠকে অংশ নেয়ার সময় উত্তর কোরিয়ার নেতাকে কোনো মানবাধিকার লংঘণের মামলায় জড়ানোর ভয় নেই। আর সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-কিম বৈঠক চলাকালে কোনো বিক্ষোভ হওয়ারও আশঙ্কা নেই। কেননা এটি একটি এক দলীয় রাষ্ট্র এবং এখানে পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো সমাবেশ হতে পারে না। এছাড়া আরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে - ২০১৫ সালে চীন ও তাইওয়ানের নেতাদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি আয়োজনেও তারা ভূমিকা রেখেছিল।

বর্তমান ভূ রাজনৈতিক আবহে এতটা নিরপেক্ষ থাকা সোজা বিষয় নয়, কিন্তু সিঙ্গাপুর তা পারছে। তারা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলেছে। এ নিয়ে কোনোরকম ভুল পদক্ষেপ বা পক্ষপাতিত্ব করতে দেখা যায়নি দেশটিকে। তাই সবদিক থেকেই নিরাপদ বলা যায় দেশটিকে। আর এ কারণেই দিনে দিনে বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে দেশটির। সিঙ্গাপুরকে বলা হয়ে থাকে আসিয়ান জোটের ব্যাঙ্কার। এখানে যে কেউ নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারবে, সিঙ্গাপুরের আইন মেনে চললেই সব ঠিক।

কিন্তু এর আগে ক্লিনটন ও ওবামা প্রশাসন সিঙ্গাপুর ও পিয়ংইয়য়ের ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সফল হয়নি হোয়াইট হাউস। তাই বলে যুক্তরাষ্ট্রকে মুখের ওপর কোনো বেফাঁস কিছু বলে বসেনি সিঙ্গাপুর সরকার। বরং পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সদ্ভাব রেখেই তারা ওয়াশিংটনের আস্থা ও সুসম্পর্ক অর্জন করেছে। ফলে দুই দেশের সঙ্গেই সিঙ্গাপুরের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। আর এ কারণেই সিঙ্গাপুরকে বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার নেতারা।

সিঙ্গাপুর যেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সুইজারল্যান্ড। এ কারণেই এরকম একটি সংবেদনশীল এবং কূটনৈতিক আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়া উভয় দেশের কাছে সিঙ্গাপুরকে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আসলে সিঙ্গাপুরে এই অঞ্চলের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের দর কষাকষির আলাপ আলোচনা দিন দিন বাড়ছে।

তাই ট্রাম্প-কিম বৈঠককে কেবল সাদামাটা রাজনৈতিক বৈঠক ভাবার কোনো কারণ নাই। এই মুহূর্তে বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় দুটি দেশের মধ্যে এটাকে একটা ব্যবসায়িক দর কষাকষির বৈঠক হিসেবে ভাবুন, যেখানে মধ্যস্থতাকারী এবং একই সঙ্গে বৈঠকের আয়োজকের ভূমিকা পালন করছে সিঙ্গাপুর।

ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে গেছেন দুই নেতাই। রোববার কানাডায় অনুষ্ঠিত জি সেভেন বৈঠক থেকে অনেকটা তড়িঘড়ি করে সিঙ্গাপুরে ছুটে এসেছেন ট্রাম্প। তিনি উঠেছেন সিঙ্গাপুরের অভিজাত সাংরি-লা হোটেলে। হোটেলটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারি অস্ত্রসজ্জিত ‘গোর্খা’ সেনাদের আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। উপনিবেশ আমল থেকেই নেপালের সেনাবাহিনীর সদস্যরা সিঙ্গাপুর পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করে, যারা ‘গোর্খা’ সেনা নামে পরিচিত।

বিবিসি অবলম্বনে মাহমুদা আকতার

সূত্র: বিবিসি

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত