ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সিঙ্গাপুরে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প-কিম

সিঙ্গাপুরে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প-কিম

সিঙ্গাপুরে বহুল আলোচিত বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ নথিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা) সিঙ্গাপুরের সান্তোসা দ্বীপের ক্যাপেলা হোটেলে বৈঠকে বসেন দুই নেতা। একটানা চলে সিঙ্গাপুর সময় সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।

বৈঠক শেষে একসঙ্গে লাঞ্চে যান দুই নেতা। দুপুরের খাবার শেষে ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তারা। ট্রাম্প-কিম বৈঠকের সার সংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হল।

ট্রাম্প-কিম বৈঠকের প্রধান ৪ পয়েন্ট

১. যুক্তরাষ্ট্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া নতুনভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হবে। যাতে দুই দেশের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও উন্নতির বিষয়টি প্রতিফলিত হবে।

২. কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে যৌথভাবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।

৩. ২৭ এপ্রিল ২০১৮'র পানমুনজাম বিবৃতির আলোকে কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার রক্ষা করবে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।

৪. যুক্তরাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া যুদ্ধবন্দীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভূমিকা রাখবে এবং এরই মধ্যে যেসব যুদ্ধবন্দী চিহ্নিত হয়েছেন তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করবে।

বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে চীন

চীনের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া নিউজ এজেন্সি কিম-ট্রাম্প বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই বৈঠক ‘কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুর একটি রাজনৈতিক সমাধানের’ আশা তৈরি করেছে।

তবে তারা আরও বলেছে, ‘অর্ধদিবসের এই বৈঠক যে দুই দেশের বহুদিনের বৈরিতা ও অবিশ্বাসের মানসিকতা মুছে ফেলে সৌহার্দের পথে নিয়ে যাবে তেমনটা কেউ আশা করছে না। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত উপদ্বীপ গঠন ও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে উন্নয়নের পথে যাত্রার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান ও ধৈর্য্য। এরকম ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন।’

কিমের জন্য 'বড় জয়'

এই বৈঠকটি উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি বড় বিজয়। অতীতের যেকোনো সম্পর্ক থেকে এটি ট্রাম্পের জন্যও বড় জয়। তিনি বলেছেন, কিমের সঙ্গে দেখা করতে পেরে তিনি সম্মানিত। অথচ কয়েকমাস আগেও তিনি কিমকে ‘লিটল রকেট ম্যান’ এবং বিশ্বের নিন্দিত যুগের নেতা বলে অভিহিত করেছিলেন। এখন বৈঠকের পর প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার নেতাকে। তিনি বলেন, ‘তিনি (কিম) অত্যন্ত গুণী মানুষ এবং নিজের দেশকে অত্যন্ত ভালোবাসেন।’তার সাথে এই বৈঠকটি সত্যিই অসাধারণ।

'পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার' কিমের

সংবাদ মাধ্যম এএফপি বলছে, বৈঠকে কিম কোরীয় উপদ্বীপকে 'পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ' এর অঙ্গীকার করেছেন।

বৈঠক শেষে বিদায়ের পর্ব

বৈঠক শেষে সান্তোসা ছেড়েছেন ট্রাম্পের গাড়িবহর। তিনি জানিয়েছেন এই বৈঠকের বিষয়ে পরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন। দ্বীপ ছেড়ে গেছে কিমের গাড়িবহরও।

চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। তবে চুক্তিতে কি ছিল তা এখনো জানা যায়নি। চুক্তিটিকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ও ‘সুসংহত’বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও চেয়ারম্যান কিম দুজনই এটি স্বাক্ষর করতে পেরে ‘সম্মানিত’ বোধ করেছেন।

অন্যদিকে কিম বলেছেন, ‘আমরা আজ অতীত পিছনে ফেলে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছি। বিশ্ব এক বড় পরিবর্তন দেখতে পাবে। এই বৈঠকে রাজি হওয়ায় আমি ট্রাম্পকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উনের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্রে কি ছিল এখনো জানা যাচ্ছে না।

'ব্যাপক পরিবর্তন দেখবে বিশ্ব'

অনুবাদকের মাধ্যমে কিম বলেছেন: ‘আমরা আজ অতীত পিছনে ফেলে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছি। বিশ্ব এক বড় পরিবর্তন দেখতে পাবে। এই বৈঠকে রাজি হওয়ায় আমি ট্রাম্পকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

চুক্তিপত্রের প্রশংসা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘অনেক শুভেচ্ছা, অনেক পরিশ্রম আর দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি শেষে এই চুক্তি হতে চলেছে। আজ যা ঘটতে চলেছে তা নিয়ে আমরা খুব গর্বিত।’

চুক্তির পর উত্তর কোরিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও বিপজ্জনক সমস্যার সমাধান করতে চলেছি। এজন্য আমি চেয়ারম্যান কিমকে ধন্যবাদ জানাই। আজ আমরা একসঙ্গে দারুণ সময় কাটিয়েছি।’

বাগানে ভ্রমণ!

মধ্যাহ্নভোজনের পর ক্যাপেলার বিলাসবহুল হোটেলের বাগানে একসাথে হাঁটতে দেখা যায় কিম ও ট্রাম্পকে। এর পরপরই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তারা।

দুই নেতার মধ্যাহ্নভোজ

সেন্টোসা দ্বীপের ক্যাপেলা হোটেলে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন দুই নেতা। প্রন ককটেল সালাদ, গরুর পাজরের মাংস, সুইট এন্ড সাওয়ার ক্রিসপি পর্ক, চিলি সস আর ডার্ক চকলেট ও ভ্যানেলা আইসক্রিম দিয়ে ভোজন সারেন তারা।

কিম কি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের শর্ত মানবেন?

দুই নেতার আলোচনার পর দ্বিতীয়বার যখন তাঁরা হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন দুইবার সাংবাদিকরা. কিমকে প্রশ্ন করেন, ‘কিম, আপনি কি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করবেন?’ কিন্তু কিম এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘আপনি কি আপনার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবেন?’তবে এই প্রশ্নেরও উত্তর পাননি সাংবাদিকরা।

তবে হেঁটে যাওয়ার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান যে, আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হচ্ছে।

ইতিহাসের ৩৮ মিনিট

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ট্রাম্প ও কিমের একান্ত বৈঠকের স্থায়ীত্বকাল ছিল ৩৮ মিনিট। বৈঠক শুরু হয়েছে উষ্ণ ও আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে। এ সময় তাদের পিছনে শোভা পাচ্ছিল দুই দেশের পতাকা। দীর্ঘ ১২ মিনিট স্থায়ী হয় দুই নেতার করমর্দন। করমর্দন শেষে কিম জং উনের ডান কাঁধ স্পর্শ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ট্রাম্প-কিমের করমর্দনের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হলেন।

উত্তর কোরিয়ানরা এই বৈঠক সম্পর্কে কী জানে?

উত্তর কোরিয়ানরা জানে যে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে তারা শুধু সেটুকুই জানতে পারে যতটা তাদের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রচার করে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স নামের একটি সংগঠনের তৈরী করা তালিকায় বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে নিচে অবস্থান উত্তর কোরিয়ার। সেদেশের সব খবর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কোনো খবর পড়া,দেখা বা শোনার অপরাধে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের কারাদন্ড হতে পারে।

বৈঠকের সমালোচনা!

ঐতিহাসিক এই বৈঠক নিয়ে অধিকাংশ মানুষ আগ্রহী হলেও সামলোচনাও করছেন অনেকে। লেখক ভিক্টোরিয়া ব্রাউনওয়ার্থ তার টুইটারে লিখেছেন, ‘যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সাথে করমর্দন করেননি ও জাস্টিন ট্রুডোকে 'দুর্বল' বলেছেন, সেই ট্রাম্প নিজ পরিবারের মানুষ হত্যা করে এমন একজন একনায়কের সাথে বৈঠক করছেন।’

মুন জে-ইনের নির্ঘুম রাত

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন বলেছেন, বৈঠকের আগে নির্ঘুম রাত কেটেছে তার। তবে তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন, এই বৈঠক 'পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, শান্তি ও দুই কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সৃষ্টি করবে।'

অর্কিড কূটনীতি

সিঙ্গাপুরের জাতীয় ফুল অর্কিড। এ কারণে সেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেক বিশ্বনেতারা সিঙ্গাপুর সফরের পর তাদের নামে অর্কিডের নামকরণ করা হয়েছিল।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা কিম জং-আনের নামেও কি তাহলে অর্কিডের নামকরণ করা হবে? অথবা ঐতিহাসিক বৈঠকের নামেও নামকরণ করা হতে পারে অর্কিডের।

বাগানে হাঁটছেন ট্রাম্প-কিম

সূত্র: বিবিসি

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত