ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

অনাস্থা ভোটের মুখে মোদি সরকার, একট্টা বিরোধীরা

অনাস্থা ভোটের মুখে মোদি সরকার, একট্টা বিরোধীরা

ভারতের লোকসভায় বুধবার নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তেলেগু দেশম পার্টিসহ বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। শুক্রবার ওই অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর লোকসভায় ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আনা এই অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, ও কমুনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া। তারা এই অনাস্থা ভোটের সুযোগটাই পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য, মোদি সরকারের চার বছরের ‘অপশাসন’-এর তালিকা দেশের সামনে তুলে ধরা। এ কারণেই শুক্রবার অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে হাজির থাকার জন্য ৩৪ জন তৃণমূল সাংসদকে হুইপ জারি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার বিরোধীদের কিছুটা অবাক করেই তেলুগু দেশমের অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। শুক্রবার দিনভর এ নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটি হবে বলেও তিনি জানিয়ে দেন। এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া চন্দ্রবাবু নায়ডুর দলের পাশাপাশি কংগ্রেস এবং সিপিএম-ও অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অধিবেশনের শুরুতে জোর দিয়ে জানান, তার দল রাজনৈতিক দলগুলো থেকে উত্থাপিত যেকোনো বিষয়ে বিতর্কের জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, প্রত্যেক এমপি, সব পার্টি এই অধিবেশনকে ফলপ্রসূ করবে। আমি সব সময় এই আশা করি এবং সেই প্রচেষ্টায় চালাই।’

তার বক্তব্যের পরই লোকসভায় শোরগোল শুরু হয়। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর সামনেই বিরোধী দলের সদস্যরা ‘আমরা বিচার চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে অন্ধ্র প্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের তকমা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। সেই সূত্র ধরেই এই স্লোগান দেন তারা। কংগ্রেসও জানায়, অন্ধ্র প্রদেশের এই দাবিকে তারা সমর্থন করে।

এখন বিরোধীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল, সব বিরোধী ভোটকে একাট্টা রাখা। এ কারণে শুক্রবারের লোকসভা অধিবেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দলের ৩৪ জন সাংসদকেই হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তেলুগু দেশম আগে জমা দেওয়ায় তাদের অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আর শর্ত অনুযায়ী, ৫০ জনের সমর্থন জোগাড় করতেও তাদের কোনো অসুবিধা হয়নি।

তবে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলেও মোদি সরকারর ওপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে লোকসভায় পর্যাপ্ত সংসদ (২৭৩ জন) সদস্য রয়েছে মোদি সরকারের। তারপরও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী ও শাসক দল উভয়েরই শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই অনাস্থা প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

ভারতে ২০০৮ সালে শেষবারের মত লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। ইন্দো-মার্কিন পরমাণু চুক্তির বিরুদ্ধে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় বিরোধী দল কমুনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া। তার জেরে আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হয় কংগ্রেস তথা ইউপিএ জোটকে। শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই অসুস্থ বা জেলে থাকা সাংসদদের পর্যন্ত ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণের জন্য হুইপ জারি করে। সেই সময় ১৯ ভোটে জিতে যায় সরকার পক্ষ এবং টিকে যায় মনমোহন সিংহ সরকার।

এরও আগে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব লোকসভায় উঠেছিল ২০০৩ সালে । সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে সেই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সে বারও বিরোধীরা হেরে যায়।

তার আগে অবশ্য ১৯৯৯ সালে অনাস্থা ভোটেই ১৩ মাসের মাথায় সরকারের পতন হয়। সেই সময় জয়ললিতা বিজেপির উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়ায় আস্থা ভোটের মুখে পড়ে বাজপেয়ি সরকার। মাত্র এক ভোটের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। এটাই এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সংসদের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে অনাস্থা ভোটের ফলাফল নির্ধারণের নজির।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত