ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভারতীয় রাজনীতিতে এখন মায়াবতীই সবচেয়ে বড় রহস্য !

ভারতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় রহস্য মায়াবতী!

ভারতে বিজেপি বিরোধী আরও স্পষ্ট করে বললে মোদি বিরোধী জোট গঠনের পাঁয়তারা করছে বিরোধী দলগুলো। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। এই জোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ও। ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে মোদিকে হটিয়ে সরকার গঠন করা হলে মমতাকে প্রধানমন্ত্রী করারও টোপ দেয়া হয়েছে।

কিন্তু এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে বহুজন সমাজ দলের প্রধান এবং উত্তর প্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী কি রাহুল-অখিলেশ জোটে যোগ দিবেন? নাকি বিজেপির সঙ্গে থাকবেন তিনি? কেননা এই জোটের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে ওই ৬২ বছর বয়সী নেত্রীর উপর। আর ভারতের রাজনীতিতে তিনি তো বরাবরই রহস্যময়ী হিসেবে পরিচিত।

বিগত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকে একটাও আসন পাননি মায়াবতী। অথচ ভোটব্যাঙ্কের হিসেবে তার দল ছিল তৃতীয়। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়; রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ও ছত্তীসগঢ়ের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বহুজন সমাজ পার্টি বহু আসনে প্রার্থী দিয়ে পৃথক লড়লে বিজেপির লাভ। আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে দ্বিপাক্ষিক লড়াই হলে লাভ কংগ্রেসের।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় মোদিবিরোধী জোটেই মায়াবতীর লাভ। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নিজেদের আসন বাড়াতে পারলে তিনি ভারতের প্রথম ‘দলিত’ প্রধানমন্ত্রীও তো হতে পারেন। যে ভাবে কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। অখিলেশের সঙ্গে মায়া দর-কষাকষি করে বেশি আসন চাইছেন, যাতে তার আসনসংখ্যা মমতার ৪২টির চেয়ে বেশি হয়।

ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার দৌড়ে মায়ার প্রতিদ্বন্দ্বী মমতা। ১৯৯৫ সালে মায়াবতী প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন। মুলায়মকে ক্ষমতাচ্যুত করে সমাজবাদী পার্টিকে বিচ্ছিন্ন করতে মায়াবতীকে কংগ্রেসও সমর্থন জানায়। কিন্তু কল্যাণ সিংহের আপত্তি সত্ত্বেও লালকৃষ্ণ আদভানির মনে হয়েছিল, মায়াবতীকে সমর্থন করলে বিজেপির লাভ। এ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের ঐতিহাসিক মন্তব্য, ‘মায়াবতীর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ভারতীয় রাজনীতির অলৌকিকতা।’

ঘটনা হল, আম্বেদকর তার রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়াকে শুধু মহারাষ্ট্রের মাহার সম্প্রদায়ের দল করতে চাননি, চেয়েছিলেন এই দলটির রাজনৈতিক ভিত্তি আরও প্রসারিত হোক। সেটা হয়নি। কাঁসিরাম ১৯৮৪ সালে বহুজন সমাজ পার্টির জন্ম দিয়ে ভোটে নেমে প্রথম আওয়াজ তুললেন দলিতদের জন্য। তার আগে এটা ছিল একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, একটা ছাতার মতো, তারই ভিতর ছিল পিছড়ে বর্গ, তফসিলি জাতি, দলিত ও সংখ্যালঘুরা। রাজনৈতিক দল গড়ে পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে কাঁসিরাম প্রাথমিক ভাবে ‘দলিত’দের লক্ষ্য করে প্রচারণা চালাতে থাকেন। দ্রুত দলিত আন্দোলন শুরু হয়ে যায়।

১৯৯৯ সালে মায়াবতী কৌশল বদলান। তিনি বলেন, বহুজন সমাজ মানে তো সকলের সমাজ। তাই উচ্চবর্ণের হিন্দুদের প্রচুর প্রার্থী দিয়ে তিনি বাজিমাত করেন। মুসলমানদেরও ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করেন। ১৯৯৩-এ বিজেপিকে রুখতে মুলায়মকে সঙ্গে নেন। আবার ’৯৫-এ মুলায়মকে ছেড়ে বিজেপিকে সঙ্গী করেন। ভারতীয় রাজনীতিতে মায়াবতীর বহুরূপী চরিত্র বরাবরই।

বর্তমানে অখিলেশ-মায়া-রাহুল একজোট। মধ্যপ্রদেশে কমলনাথও জোট করতে মরিয়া বিধানসভা ভোটে। এ দিকে অমিত শাহ মায়াবতীর ব্রাহ্মণ নেতা সতীশ মিশ্রর মাধ্যমে মায়াবতীকে সঙ্গে পেতে চাইছেন। প্রথম টোপ, মায়াবতীর বিরুদ্ধে চলতে থাকা সমস্ত তদন্ত শেষ করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাব, মায়াবতীর ভাইয়ের বিরুদ্ধেও চলা মামলা প্রত্যাহার। তৃতীয়ত, মায়াবতী সব রাজ্যে স্বাধীনভাবে প্রার্থী দিলে বিজেপি তাকে সাহায্য করবে। চতুর্থত, দলিত স্বার্থে বড় ঘোষণা, যেমন, কাঁসিরামকে ভারতরত্ন প্রদান ইত্যাদি। আর সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে মায়াবতীকে চাপে রাখা।

উত্তর প্রদেশের নবীন প্রজন্মের দলিত নেতা চন্দ্রশেখরকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়ে বিজেপি আসলে মায়াবতীকে একটা বার্তা দিতে চায়। মায়াবতী চেয়েছিলেন, চন্দ্রশেখর জেলেই থাকুন। এখন চন্দ্রশেখর তাকে ‘বুয়া’ ডাকলেও মায়াবতী বলছেন, ওর সঙ্গে কোনও আত্মীয়তা নেই। চন্দ্রশেখর বলছেন ‘আমার তো রাজনৈতিক দল নেই, ভোটে লড়ব না। সমর্থন করব এসপি–বিএসপি জোটকে।’

জবাবে মায়াবতী বলছেন, ‘এ ধরনের গুন্ডাগিরি করা লোককে সমর্থন করতে পারি না। আসলে চন্দ্রশেখর বিজেপিরই বি-টিম।’

এখন চন্দ্রশেখর যদি নির্দলীয় প্রার্থী দেন তাতেও তো বহুজন সমাজ পার্টি তথা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ জোটেরই বিপদ। তাই রাহুল-অখিলেশ সর্ব শক্তি দিয়ে মায়াবতীকে জোটে রাখতে আগ্রহী। বিজেপি যদি মায়ার কানে কানে এসে বলে, দরকারে সংখ্যা না থাকলে আপনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী? অখিলেশও তো কানে কানে সে কথাই বলছেন মায়াকে? আপাতত তাই দড়ি টানাটানি।

ভারতীয় রাজনীতিতে মায়াবতী মানেই অনিশ্চয়তা। মায়াবতী উত্তরপ্রদেশে নানা দলের সমর্থনে চার বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। একবার তো নিজের মুখ্যমন্ত্রী পদের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই সমর্থন প্রত্যাহার করে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে দেন। ফলে সে বার কল্যাণ সিংহ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। যদিও সেটাই ছিল বোঝাপড়া। প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি হন লৌহমানবী।

দর কষাকষির খেলায় ৬২ বছর বয়সী মায়া চিরকালই সিদ্ধহস্ত। গত রোববার তিনি অখিলেশ আর রাহুলকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, মনের মতো আসন না পেলে তিনি ‘একলা চলো রে’ নীতি নেবেন। তাতে তো লাভ হবে বিজেপির। রাহুল তাই অখিলেশকে বলছেন, যত আসন মায়া চাইছেন, দিয়ে দাও। তাকে ছাড়লেই লোকসান। মোদিকে সরানো অখিলেশের অগ্রাধিকার ঠিকই। কিন্তু অখিলেশের ভয়, এত আসন দিয়ে দিলে শেষে তার দলেই যদিও যদি বিদ্রোহ দেখা দেয়, ভেঙে যায় দল!

তাই ভারতীয় রাজনীতিতে আজ সব চেয়ে বড় রহস্য মায়াবতী।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত