ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

জিন্নাহর রোগ গোপন রাখার নেপথ্যে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:১০

জিন্নাহর রোগ গোপন রাখার নেপথ্যে

পাকিস্তান-ভারতের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন। পরে তিনি ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেলও হয়েছিলেন।

এই প্রক্রিয়ায় আরো এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ, যাকে বলা হয় কায়েদ-এ-আজম। ভারত বিভাজনের প্রক্রিয়া নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল তখন জিন্নাহর দূরারোগ্য একটি রোগের কথা গোপন রাখা হয়েছিল। যদি এই রোগের কথা জানাজানি হয়ে যেত তাহলে কি দেশভাগ আটকানো যেত? বিভিন্ন বই পড়ে এই প্রতিবেদনে সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসির প্রতিবেদক।

মাউন্টব্যাটেন আর জিন্নাহর প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৪ এপ্রিল। আর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল।

তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হওয়ার ঠিক আগে এক ফটোগ্রাফার লর্ড এবং লেডি মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে জিন্নাহর একটা ছবি তুলতে চেয়েছিলেন।

সংবাদমাধ্যমের সামনে বলার জন্য জিন্নাহ আগে থেকেই একটা লাইন মনে মনে তৈরি করে এসেছিলেন। তার মাথায় ছিল যে হয়তো লেডি মাউন্টব্যাটেনকে মাঝখানে রেখে একদিকে তিনি এবং অন্যদিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ছবি তোলা হবে।

সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তিনি ওই 'পাঞ্চলাইনটা' তৈরি করেছিলেন।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর জীবনীকার স্ট্যানলি ওয়াপার্টকে ১৯৭৮ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লর্ড মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন, ‘যখন আমি জিন্নাহকে অনুরোধ করলাম যে উনি যেন আমার আর এডউইনার [লেডি এডউইনা মাউন্টব্যাটেন] মাঝখানে দাঁড়ান, তখন তিনি অত তাড়াতাড়ি নতুন কোনও লাইন ভেবে বের করতে পারেননি বোধ হয়। তাই যে লাইনটা বলবেন বলে ভেবে এসেছিলেন, সেটাই বলে ফেললেন- ‘অ্যা রোজ বিটুইন টু থর্নস' - অর্থাৎ দুই কাঁটার মাঝে একটি গোলাপ।’

ওই সাক্ষাৎকারের বেশ কয়েক মাস পরে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ২ জুন লন্ডন থেকে দিল্লি এলেন। 'নর্থ কোর্ট' ভবনে ভারতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীদের সঙ্গে এক বৈঠক ডাকলেন- দেশভাগের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য।

লর্ড মাউন্টব্যাটেন নেতাদের জানিয়েছিলেন, তারা যেন মধ্যরাতের আগেই নিজের নিজের মতামত তাকে জানিয়ে দেন।

বৈঠক থেকে জিন্নাহ বেরিয়ে যাওয়ার পরে লর্ড মাউন্টব্যাটেন খেয়াল করেছিলেন যে মিটিং চলার সময়ে সামনে রাখা একটা কাগজে কিছু আঁকিবুঁকি কেটেছেন তিনি।

কাগজে রকেট, টেনিস র‍্যাকেট, এইসব আঁকা ছিল আর বেশ বড় অক্ষরে লেখা ছিল দুটো শব্দ- 'গভর্নর জেনারেল'। তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে তিনি নিজের জন্য কোন পদের কথা ভাবছিলেন।

ভারতের বৈদেশিক গুপ্তচর এজেন্সি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের প্রাক্তন বিশেষ সচিব ছিলেন তিলক দেভেশর।

তার বই, ‘পাকিস্তান অ্যাট দ্য হেলম’- এ দেভেশর লিখেছেন, ‘ভারত আর পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাস খানেক আগে লর্ড মাউন্টব্যাটেন জিন্নাহকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন যাতে তিনি দুই দেশের যৌথ গভর্নর জেনারেল পদটা গ্রহণ করেন। তার যুক্তি ছিল, যদি জিন্নাহ শুধুই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন, তাহলে তার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে।’

দেভেশরের কথায়, ‘তবে জিন্নাহ লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে বলেছিলেন, আপনি সেটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার প্রধানমন্ত্রী সেটাই করবেন, যেটা আমি বলব। আমি তাকে উপদেশ দেব, আর সেটা পালন করা হবে।’

ল্যারি কলিন্স এবং ডমিনিক ল্যাপিয়েরের লেখা বই ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’-এ বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ যক্ষ্মায় ভুগছিলেন। তবে এই রোগের কথা কেউ জানত না। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ এই রোগে ভুগেই মারা যান।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত