ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইরানের ওপর ট্রাম্পের কঠোর নিষেধাজ্ঞা

ইরানের ওপর ট্রাম্পের কঠোর নিষেধাজ্ঞা

মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরানের ওপর অবশেষে স্মরণাতীত কালের ‘কঠোরতম’ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিবাদে গোটা তেহরান জুড়ে চলছে মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভ।

সোমবার মার্কিন প্রশাসন ইরানের ওপর নতুন করে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ৬ জাতির সঙ্গে পরমাণু চুক্তির পর তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু এ বছরের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান এবং দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এক তরফাভাবে পুনর্বহালের হুমকি দেন। সোমবার তার দেয়া সেই হুমকি বাস্তবায়িত হলো।

এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের রপ্তানি, শিপিং ও ব্যাকিং খাতসহ গোটা অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একে স্মরণাতীত কালের শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা খুবই শক্তিশালী। এর আগে তাদের ওপর এত কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। এখন তারা কি করে আমরা তা দেখতে চাই। তবে আমি আপনাদের বলছি, তারা ভালো কিছু করতে পারবে না।’

এদিকে এই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় রোববার বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির জনগণ। তেহরানে আয়োজিত বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিল থেকে‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’সহ নানা মার্কিন বিরোধী শ্লোগান দেয়া হয়। এসময় মার্কিন পতাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

এ নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ‘এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন এ‌ই ষড়যন্ত্র করে যুক্তরাষ্ট্র কোনও সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।’

এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সোমবার থেকে দু’দিনের সামরিক মহড়া শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কিভাবে কাজ করবে?

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের সাথে কোনও দেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখলে তাকেও নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে হবে। অর্থাৎ কেউ ইরানের সাথে ব্যবসা করলে যুক্তরাষ্ট্রের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

একইসঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কোনও মার্কিন কোম্পানি ইরানে ব্যবসা করে এমন কোম্পানির সাথে ব্যবসা করলে তাকেও শাস্তির মুখে পড়তে হবে। সোমবার থেকে ব্যাংকিং সেক্টরেও এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। গত অগাস্টে স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু এবং অটোমোবাইল সেক্টরসহ বেশকিছু শিল্পখাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে যেটি চাইছে তা হল, ইরানের সামগ্রিক তেল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে। তবে ভারতসহ আটটি দেশকে সাময়িক ছাড় হিসেবে সময় দিচ্ছে ইরান থেকে তেল আমদানি কমিয়ে আনার জন্য। ইটালি, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই আট দেশের অন্তর্ভুক্ত।

এই অবরোধ এড়ানোর উপায় হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাচ্ছে - যাতে ইরানের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যায়, আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোরও শিকার হতে না হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের মতো স্পেশাল পারপোজ ভিহাইকেল বা এসপিভি-র মাধ্যমে ইরান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সম্পাদন করা যাবে সরাসরি লেনদেন এড়িয়ে।

যখন ইরান ইউরোপীয় কোন দেশে তেল রপ্তানি করবে যে দেশ তা নেবে সেই দেশের কোম্পানি এসপিভির মাধ্যমে দাম পরিশোধ করবে। ইরান তারপর সেই অর্থ ক্রেডিট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ থেকে এসপিভির মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারবে।

ইইউ'র এই পরিকল্পনা কার্যকর হলেও ইরান-সম্পর্কিত ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ অনেক কোম্পানির জন্যই খুব চড়া হবে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র গবেষক রিচার্ড নেপিউ বলেন, ইরানের অর্থনীতি সরাসরি মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু ইরানের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক অংশীদার নির্ভরশীল এবং ইরানের সাথে ব্যবসা করার ফলে আমেরিকায় তাদের অভিগমন ঝুঁকির মুখে পড়বে।

নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এটিও পরিষ্কার যে ইরান এবং তার অবশিষ্ট ব্যবসায়িক অংশীদাররা বাণিজ্য যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে।

ইরানীদের তেল বিক্রি করার সৃজনশীল উপায় খোঁজার জন্য বাধ্য করা হবে, পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞার অধীনে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলির উপর নির্ভর করে।

তবে ইউরোপীয় বিনিয়োগ হারিয়ে ফেললে সেই শূন্যতা পূরণ করতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য যোগাযোগ তৈরি করতে মনোযোগী হবে ইরান।

তেহরানে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ

সূত্র: বিবিসি

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত