ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:১৮

অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এই উদ্যান।বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত।পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন স্থানের মধ্যে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি। দেশের ১০ টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। এর আয়তন ২৪২.৮২ হেক্টর বা ছয়শ’ একর। এটি রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্টের একটি অংশ। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে "সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান" প্রতিষ্ঠা করা হয়।

নামকরণ: সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভিতর সাতটি ছড়া বা ঝর্না আছে যেখান থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি। অবস্থান: ঢাকা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পুর্ব দিকে এবং শ্রীমঙ্গল থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক (Gibbon), চশমা পরা হনুমান (Langur), কুলু বানর (Macaque), মেছো বাঘ, মায়া হরিণ (Barking Deer) ইত্যাদি; সরিসৃপের মধ্যে সাপ; পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠঠোকরার, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলুদ পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে।সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০’রও বেশি গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল,সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস,আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদির বিশেষ নাম করা যায়।এছাড়া গাছে গাছে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত পোকামাকড়, ঝিঁঝিঁ পোকা তাদের অন্যতম।

এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে।

জীববৈচিত্র্য : এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ১৫০-২০০প্রজাতির পাখি।

কিভাবে যাওয়া যায়: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এই উদ্যান । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার।ঢাকার সায়েদাবাদ হতে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে কয়েকটি বাস হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে হবিগঞ্জের দূরত ১৭৯ কিলোমিটার। সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টা। হবিগঞ্জ থেকে জেতে হবে ছুনারুঘাট রেলপথে দূরত্ব ২৪২ কি মি। রেলপথে ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জ নেমে এরপর বাস ধরে হবিগঞ্জ বা মাধবপুর বা চুনারুঘাট যেতে পারেন।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি ট্রপিকেল রেইন ফরেস্ট বা মিশ্র চির সুবুজ এবং পাতাঝরা বন। ইকো ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর সাতছড়ি উদ্যানে হাইকিং করলে অপূর্ব বনশ্রী হৃদয়ে দাগ কাটবে নিঃসন্দেহে। যা নিজের চোখে এবং বাস্তবে উপভোগ না করলে বোঝা সম্ভব নয়। হাজারো পর্যটক প্রাকৃতিক দৃশ্য পরিভ্রমণে আসেন।এটির মধ্য দিয়ে পানিহীন ৭টি ছোট খাল বা ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। যা বর্ষায় পানি এলেও তা শুকিয়ে যায়। তবে অবাক হওয়ার কথা, ছড়াগুলোর মধ্যে প্রকৃতি তার নিয়মে বিছিয়ে রেখেছে পানি বিহীন দুধের ন্যায় সাদা বালু। দুধ রং বালুর ওপর হেঁটে যেতে পারো উদ্যানের অভ্যন্তরে। তখন মনে হবে এ যেন প্রকৃতির সাদা গালিচার অভ্যর্থনা। ছড়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও নাম না জানা অসংখ্য লতাপাতা। উল্লেখযোগ্য বৃক্ষের মধ্যে চাপালিশ, আউয়াল, কাঁকড়া, হারগাজা, হরতকি, পাম, লটকন, আমড়া, গামার, কাউ, ডুমর ইত্যাদি। এ বৃক্ষগুলোর ফল খেয়ে বনে বসবাসকারী প্রাণীরা বেঁচে থাকে। বনে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে উল্লুক, বানর, চশমা বানর, হনুমান ইত্যাদি। পাখিদের মধ্যে শ্যামা, ময়না, বসন্ত বাউরী, ফোটা কণ্ঠী সাতবাইলাসহ অচেনা অনেক পাখিরা তাদের সুমধুর ধ্বনিতে মুখরিত করে।

নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প: “নিসর্গ” নামের একটি এনজিও, বন বিভাগের পাশাপাশি, তাদের ‘নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প’-এর অধীনে এই জাতীয় উদ্যানের দায়িত্ব পালন করে। নিসর্গের তত্ত্বাবধানে বন সংরক্ষণ ছাড়াও, বনে ইকো-ট্যুর পরিচালিত হয়। এছাড়া নিসর্গ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্যাদির বিক্রয় হয়ে থাকে।পর্যটকদের জন্য নিসর্গ কর্মসূচীর আওতায় ৩টি ট্রেইল তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

আধা ঘন্টার ট্রেইল: ১ কি.মি দৈর্ঘ্যের এই ট্রেইল ধরে বনের মধ্যে অবস্হিত একমাত্র গ্রাম টিপরা পাড়াতে যাওয়া যায়।

এক ঘন্টার ট্রেইল: বৈচিত্রময় বনের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী/উদ্ভিদ দেখতে চাইলে এই ট্রেইল ধরে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

তিন ঘন্টার ট্রেইল: ৬ কি.মি দৈর্ঘ্যের এই ট্রেইল ধরে এগুলে পেয়ে যাবেন আগরের বন। পাখি প্রেমীদের জন্য এই ট্রেইল আদর্শ।

এছাড়াও উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে।

/এনএইচ/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত