ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনতাম

  জায়েদ হাসান

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:১৭  
আপডেট :
 ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৪৪

দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনতাম

বাড়িতে ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল না। টিভি ছিল না। গান শুনবেন সেই ব্যবস্থাও নেই। তারপরেও দমে যাননি। অনেক বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যান। সময়ের পরিক্রমায় আজ সঙ্গীত জগতের এক প্রিয় মুখ। বলছিলাম ‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’ খ্যাত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী লুৎফর হাসানের কথা। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ জার্নালের মুখোমুখি হন। কথা বললেন গান নিয়ে। জানালেন ব্যক্তিগত জীবনের নানা অব্যক্ত কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জায়েদ হাসান

বাংলাদেশ জার্নাল: কেমন আছেন?

লুৎফর হাসান: অনেক ভালো।

বাংলাদেশ জার্নাল: কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন? লুৎফর হাসান: আমার দু’ধরনের ব্যস্ততা থাকে। একটা হচ্ছে গান, আরেকটা লেখা-লেখি। এর মধ্যে অনেকগুলো গান করে ফেলেছি। এখন একটি গানের ভিডিওর প্রস্তুতি নিচ্ছি। কি কথা কই তোমার সাথে এই গানের। এটা আমার লেখা আমার সুর করা। সংগীত আমজাদ হোসেন। জি সিরিজের ব্যানারে আসছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনি লেখা-লেখি করেন এটার কি অবস্থা? লুৎফর হাসান: হ্যাঁ, এটা নিয়েও কাজ করছি। সামনের বই মেলায় ‘লাল কাতানের দুঃখ’ নামে আমার একটা উপন্যাস আসছে। আর আমার আগের চারটা উপন্যাস ফেকুয়া, ঝিনাইপাখি, হেলেঞ্চাবতী ও আগুন ভরা কলস। এগুলো এক মলাটে আসবে। আরেকটা কবিতার বই আসছে। নাম ‘যে বছর তুমি আমি চাঁদে গিয়েছিলাম’।

বাংলাদেশ জার্নাল: বর্তমানে মিউজিক ইন্ড্রাস্টি কোন দিকে যাচ্ছে মনে করেন? লুৎফর হাসান: ভালোর দিকে।

বাংলাদেশ জার্নাল: আগে তো দেখা যেত রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিডির দোকান। এসব দোকানে গান বাজতো। নতুন গান আসলে একটা উৎসবের মত মনে হতো। কিন্তু এখন সেসব দেখা যায় না… লুৎফর হাসান: পৃথিবী তো সব সময় এক চেহারায় থাকবে না। পৃথিবীর রঙ সবকিছুই পরিবর্তন হবে। প্রতিনিয়ত হচ্ছে তাই। আগে আমরা দেখতাম অখণ্ড অবসর অনেক। এখন মানুষ গতিময়। গতি… গতি… গতিটাই এখন বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। মানুষ আসলে এখন আয়ুর ব্যাপারে সচেতন। যতটুকু সময় পাচ্ছে তারা সেটাকে কাজে লাগাতে চায়। এটা ভালো ব্যাপার। মানে সব কিছুই ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। তো গানে অতটুকু সময় কোথায় যে, এখন সিডি কিনে তা প্লেয়ারে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুনবে। এখন সময় নেই মানুষের। স্মার্টফোন আছে সবার কাছে। কোথাও যাচ্ছে গান শুনতে শুনতে যাচ্ছে। এটা ভালো। গানের শ্রোতা বাড়ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: বুঝলাম গানের শ্রোতা বাড়ছে, এতে শিল্পীদের অবস্থা কি হচ্ছে? লুৎফর হাসান: বিশ্বায়নের প্রভাবে শ্রোতারা আধুনিক হয়ে যেতে পারলে শিল্পীদেরও আধুনিক হতে হবে। তাদের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। এটা বললে হবে না যে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। কারণ নস্টালজিয়া সব সময় নাড়াচাড়া করতে ভালো লাগে। আগে আমরা এরকম করতাম, ওরকম করতাম। রূপকথা রূপকথাতেই ভালো লাগে।

বাংলাদেশ জার্নাল: মিউজিক ইন্ড্রাস্টিকে আরো ভালোর দিকে নিতে হলে কি করতে হবে? লুৎফর হাসান: শিল্পীদের উচিৎ নিজেদের গানটাকে ঠিকমতো করা। এটা তার কাজ। আর শ্রোতাদের কাজ হচ্ছে শিল্পীদের নাম, সুরকারের নাম, গীতিকারের নাম এগুলো জানা।

বাংলাদেশ জার্নাল: অনেক শিল্পীরা বলে এখন গানের পরিবেশ নেই। শিল্পীরা মূল্যায়ন হচ্ছে না… লুৎফর হাসান: যারা এমন কথা বলে তারা হতাশ। তারা পারছে না বলেই এমন কথা বলে।

বাংলাদেশ জার্নাল: অধিকাংশ গান ‘তুমি-আমি’র মধ্যে সীমাবদ্ধ। কারণটা কি? লুৎফর হাসান: পৃথিবীর অধিকাংশ সুন্দর গান তুমি আমি দিয়ে তৈরি তাই।

বাংলাদেশ জার্নাল: যারা নতুন গানে আসছে তাদের বিষয়ে বলুন- লুৎফর হাসান: যারা গান করতে আসছে তাদের গানটাই করতে হবে। হিট হবে, লাখ লাখ ভিউ হবে, রাতারাতি সেলেব্রিটি হয়ে যাবে এই লোভে গান করতে আসা যাবে না। মন দিয়ে গান করতে হবে। ভালো হলে অবশ্যই শ্রোতারা শুনবে।

বাংলাদেশ জার্নাল: অনেক নতুন প্রতিভা আছে যারা সুযোগ পাচ্ছে না, তারা কিভাবে এগিয়ে যেতে পারে? লুৎফর হাসান: সবাই নতুন ছিল। সবচেয়ে জনপ্রিয় যে বা কিংবদন্তি তিনিও এক সময় নতুন ছিলেন। সুযোগ পাননি। নিজের চেষ্টায় এগিয়ে গেছেন। সুযোগ পাচ্ছি না এটা বললে হবে না। সুযোগ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। কিংবদন্তি একদিনেই হয়নি কেউ। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। লেগে থাকতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল: হঠাৎ দেখা গেল তুহিন ভাই শিরোনামহীন থেকে চলে গেলেন। এ বিষয়ে কি বলবেন- লুৎফর হাসান: ব্যান্ড ভাঙার ঘটনা অনেক দিনের। এটা শুরু থেকেই ছিল। আমরা দেখেছি বিভিন্ন ব্যান্ড ভেঙ্গে নতুন আরেকটি ব্যান্ড হয়েছে। তবে শিরোনামহীনের বিষয়টা উনারাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।

বাংলাদেশ জার্নাল: গানে আসলেন কিভাবে? লুৎফর হাসান: ছোটবেলায় রেডিও শুনতাম। বাড়ির কাছে সিনেমা হল ছিল, সেখানে যে গান হতো তা শুনতাম। আর রেডিওতে অনুরোধের গান শুনতাম। প্রচুর সিনেমা দেখতাম। ক্যাসেটের দোকানে গিয়ে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনতাম। নিজের বাড়িতে ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল না। টিভি ছিল না, তাই অন্য জায়গায় গিয়ে এসব শুনতাম। তবে আমি বলব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: এসময় কোনো বাধা এসেছিল? লুৎফর হাসান: ওটা এখনো আছে। আমার বাবা গান পছন্দ করেন না। এখনো পছন্দ করেন না। এছাড়া আরো বাধা এসেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: নতুনদের এ বিষয়ে কিছু বলুন- লুৎফর হাসান: আসলে তারা যেখানে যাবে হতাশ হবে। সবাই নেগেটিভ কথা বলবে। কিছুই হবে না বলবে। কিন্তু তারপরেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যেন তারাই একসময় বলে, ‘জানতাম তুমি এটা করবা’।

বাংলাদেশ জার্নাল: ‘ঘুরি তুমি কার আকাশে উড়ো’ এই গানটির পেছনের গল্প বলুন। লুৎফর হাসান: এটা আমাদের বিভিন্ন সময়ের স্ট্রাগল নিয়ে করা। আমরা আগে যে সময়টা পার করতাম। আজ থেকে এক যুগ আগে। সোমেশ্বর আলি গানটি লিখেন। এটি আমি গাই। গাওয়ার পর গানটি রেডিওতে প্রথম দিয়েছিলাম। পরে দেখা গেল এটা জনপ্রিয় হয়ে গেছে। এরপর মারজুক রাসেল ভাইকে দিয়ে গানটির ভিডিও করালাম।

বাংলাদেশ জার্নাল: শ্রোতারা এই টাইপের গান আরো শুনতে চান… লুৎফর হাসান: এই টাইপের গান আর আসবে না। একজন শিল্পীর দু’একটা এমন গান থাকে। যা অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার পরেও তো অনেক ভালো গান আসছে। আইয়ুব বাচ্চুর সুরে কবির বকুলের লেখায় গান গেয়েছি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টেলিভিশন ছবিতেও গান গেয়েছি। এসব তো ভালো গান। আরো ভালো ভালো গান আসছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনি নাকি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন? লুৎফর হাসান: এক সময় ব্যক্তি জীবনে ওঠা হয়েছে। কিন্তু এসব আসলে কিছু না। একসময় চাকরি চলে গেল, প্রেম করতাম প্রেমিকা চলে গেল। তার জন্য একটু কষ্ট পেয়েছিলাম। পরে মনে হলো আসলে এসব কিছু না। নিজেকে ভালোবাসতে পারলে কাউকে কিছু মনে হয় না।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনাকে ধন্যবাদ লুৎফর হাসান: আপনাকে ও বাংলাদেশ জার্নালকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত