ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

৮ ফেব্রুয়ারি এবং রবার্ট ফ্রস্টের ‘আউট, আউট’ কবিতা

  অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মতিন

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৫২

৮ ফেব্রুয়ারি এবং রবার্ট ফ্রস্টের ‘আউট, আউট’ কবিতা

৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে। এই দিনটি বাংলাদেশের অতীত কোন ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য বিখ্যাত না। ১৯৩৪ সালের এইদিনে বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি অাবুজাফর ওবায়দুল্লাহ ও ১৮২৮ সালের এইদিনে ফরাসী লেখক জুল ভার্ন এর জন্মদিন; বৌদ্ধধর্মের নির্ভানা দিবস। কিন্তু বাংলাদেশে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে উল্লেখিতঘটনার কোন বিষয় আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট না! এই দিন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এর 'জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দূর্নীতি মামলা'র রায় ঘোষণা করবেন মাননীয় আদালত। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে এবং এই রায়ে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের ভবিষ্যত জড়িত। তাই সরকারি দল ও বিএনপি রায় প্রকাশের আগেই অতি আগ্রহ নিয়ে বাক যুদ্ধ; রায়ের ভবিষ্যদ্বানী নিয়ে করনীয় আগামই বলছেন।

১৯০৪ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি রুশ-জাপান যুদ্ধ শুরু হয়। যার কারণ ছিল মাঞ্চুরিয়া ও কোরিয়ায় দেশ দুটির সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ। বাংলাদেশে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাই। সরকারি দলের শীর্ষনেতারা বলছেন আদালতের রায়েসরকারের কোন হাত নেই ; খালেদার সাজা হলে এবং এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা করলে শক্ত হাতে দমন করা হবে।আর বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে তারা কোন অবস্থাতেই অংশগ্রহণ করবেন না ;স্বেচ্ছায় শীর্ষ নেতারা কারাভোগে প্রস্তুত।একটা বিষয় লক্ষণীয় আদালতে রায় হওয়ার আগেই দুই পক্ষ আগেই কোন বিষয় নিজ দায়িত্বে বলার আগ্রহ দেখিয়েছেন। আর এখানেই শংকা বেড়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে যেটা বলা হচ্ছে,খালেদা জিয়ার কিছু হলে তাঁরা নির্বাচন বর্জন করবেন ; সরকারকে উচিৎ জবাব দিবেন দুটি কথাই আদালতের রায়ের শংকার যে জ্বালায় বিএনপি ভোগছে তার চেয়ে ও অযোগ্য কথন আমার মনে হয়। কারন আদালতের রায় ঘোষণার আগে সরকারি দলের পাতা ফাঁদে তারা পা দিয়েছেন। সরকার ভাবছে, বিএনপি তাঁদের নেত্রীর বিরুদ্ধে সাজার রায় আসবে এটা তাঁরা মেনে নিয়েছেন। সুতরাং রায় ঘোষণার পরে বিএনপি যে ছটফট করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে তাঁর আগাম প্রস্তুতি তাঁরা নিচ্ছেন।

বিএনপির কথায়ই বলি, খালেদার যদি সাজা হয় আর তাঁরা নির্বাচন বর্জন করেন তাহলেইতো সরকারের উদ্দেশ্য সফল হলোই। আর যদি সাজার পরও নেত্রীকে, গণতন্ত্রকে উদ্ধারের নাম করে তাঁরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন তবে প্রচার করবে সরকার বিএনপির কথার ঠিকনেই; দূর্নীতিবাজ দলকে কেউ ভোট দিবেননা। আরেকটুভেবে চিন্তে আদালতের সিদ্ধান্ত দেখে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ হয়তো বিএনপির জন্য ভাল হতো মনে হয় এছাড়া বিএনপি মাটপর্যায়ে কর্মীদের সংঘটিত করার যেদায়িত্ব পালন করে দলকে সংঘটিত করার কথা তার কোন লক্ষণ মাঠপর্যায়ে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে সরকারী দল তাঁদের কর্মীদের ও প্রশাসন কে দিয়ে অতি সহজেই বিএনপিকে কাবু করার সক্ষমতা রয়েছে। এ পর্যায়েসরকারের যে কোন সিদ্ধান্তের মোকাবিলা করার ঐক্য- শক্তি কোনটাই বিএনপির আছে বলে মনে হচ্ছেনা; নির্বাচনে অংশ গ্রহন ছাড়া বিগত ভুলের পুনরাবৃত্তির মতো মহাভুলে পতিত হওয়া বিএনপির অস্থিত্বের প্রশ্নের সাথে ব্যাপক ভাবে জড়িত নয়কী?

না বুঝে সবকিছুতে প্রতিক্রিয়া যে সব সময় জয় নিয়ে আসে তা কিন্তু নয়।আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট (১৮৭৪-১৯৬৩) তাঁর লেখা'আউট,আউট' কবিতার সারাংশটুকু স্মর্তব্য মনে করছি। তিনি নতুন ইংল্যান্ডে যেটি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর- পূর্বাংশে অবস্থিত বেশির ভাগ কবিতা লিখেছেন বলে সুবিদিত। উল্লেখিত কবিতায় তাঁর সময়কার সমাজ বাস্তবতায় পাশাপাশি সময়ের দার্শনিক ভাবধারার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। গ্রামীণ দৃশ্যপটের কবিতায় গরীব মানুষ ও কমবয়সী বালক করাতকল চালিয়ে কাঠ কাটে। বালকটির বোন যখন তাকে রাতের খাবারের জন্য ডাকে তখন সে অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে ; নির্মম পরিহাস নিজেই করাতের রাতের খাবার হয়ে যায়। ছেলেটি তার বোন কে অনুরোধ করে ডাক্তার যেন তার হাত না কাটে।সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সে মারা যায়। লোকজন তাকে দেখতে আসে ঠিকই,কিন্তু যেহেতু তারা কেউ মরেনি; নিজেদের কাজে চলে গেল যান্ত্রিক পৃথিবীর হৃদয়হীন মানুষ গুলো!

কবির কবিতার সুরে,

" Doing a man's work,though a child at heart/

The doctor,when he comes."Don't let him,sister"/So but the hand was gone already/

No more to build on there / And they,since they/ Were not the one dead, turned to their affairs ".

বিএনপির যদি এমন কোন বাজে খবর আসে তখন যারা আসবেন যান্ত্রিক সেই মানুষ গুলো ও চলে যাবেন সরকারের পলিসি ও গৃহীত সুক্ষ পদক্ষেপের ফলে। তাই আগেথেকে কিছু না বলে,ধীরে চলে অস্থিত্ব সংকটথেকে মুক্তির পথ খোঁজার বিকল্প হয়তো এমূহুর্তে ভাল ফল আনবে না। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন আব্দুররাজ্জাক। বরাবর তিন বছর পর সেই চট্টগ্রাম এবং সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই জাতীয় দলে যে ভাবে ফিরতে চলেছেন রাজ্জাক ঠিক তেমনটির মতো সুযোগ রাজনীতিতে ও আসে; তাই নয়কী?

আওয়ামীলীগ প্রত্যকটি সুযোগ যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কাজে লাগাচ্ছে; তৃণমুলকে জনপ্রতিনিধি ও কর্মীরা যতোটুকুই সরগরম করে রেখেছেন; বিএনপি সেখানে প্রতিনিয়ত তাল মেলাতে হাবুডুবু খাচ্ছে । কর্মীবান্ধব,দেশবান্ধব কর্মসূচী বিগত দিনগুলোতে বিএনপিতে তেমন দেখা না যাওয়ায় গ্রাম,শহর, হাটে- মাটে; সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্বত্র আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসবে এমন ধারণাটি স্পষ্ট হচ্ছে ধীরে ধীরে। যদি ধারনা আরো স্পষ্ট হয় তখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেলেও বিএনপির লাভ কী আসলেই হবে?

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, শাহজালাল মহাবিদ্যালয়,জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ ২০১৭।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত