ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

চোরাই মোবাইলের ‘ওস্তাদ’!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৮, ০৮:৩৭  
আপডেট :
 ২২ মার্চ ২০১৮, ১১:১০

চোরাই মোবাইলের ‘ওস্তাদ’!

নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। তবুও তিনি ‘মোবাইল ফোন বিশেষজ্ঞ’। চুরি হওয়া মোবাইল তার কাছে নিয়ে গেলে খুব সহজে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দিতে পারেন বলে অভিযোগ। এ কারণে চুরি যাওয়া ফোন উদ্ধার হয়ে পড়ে অসম্ভব। এই নম্বর পরিবর্তন করতে মডেলভেদে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা নেন তিনি।

১৩ মার্চ তাকে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেছে র‍্যাব। মামলা তদন্ত করছে দারুস সালাম থানার পুলিশ। এই ‘মোবাইল বিশেষজ্ঞের’ নাম মো. সোহাগ।

তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার এসআই স্বপন কুমার সরকার জানান, দীর্ঘদিন ধরেই মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার মতো গুরুতর অপরাধ করে আসছিল সোহাগ। আইএমইআই পরিবর্তন করা এসব মোবাইল অপরাধীরা ব্যবহার করে অপরাধ করে যাচ্ছিল।

সোহাগ নিজেই ইন্টারনেট ঘেঁটে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা শিখেছেন বলেও জানান স্বপন কুমার সরকার।

কে এই সোহাগ মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা সোহাগের। দারুস সালাম এলাকার মিরপুর-১ কো-অপারেটিভ মার্কেটে রয়েছে তার নিজস্ব দোকান। নাম সোহাগ মোবাইল অ্যান্ড সার্ভিসিং। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সোহাগ বিবাহিত। নিজের নামটা কোনোমতে লিখতে পারেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, র‍্যাব তার দোকানে অভিযান চালানোর সময় তিনি মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেন। পরে তিনি মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন।

মামলার বাদী ও র‍্যাব-৪-এর নায়েব সুবেদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগকে আমরা দোকান থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সব কথা সে সব স্বীকার করে। অনেক দিন থেকে অপরাধীরা তাঁর মাধ্যমে চোরাই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছে।’

রাজধানীর একটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানের এক স্বত্বাধিকারী বলেন, আইএমইআই হলো ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি। এটি মোবাইল ফোনের ইউনিক নম্বর। ফোনসেট হারিয়ে গেলে এই নম্বর ট্র্যাকিং করে সেটের অবস্থান জানা যায়। আইএমইআই পরিবর্তন করা একটি জঘন্য অপরাধ। এই নম্বর পরিবর্তন করার পর আর ওই মোবাইল ফোনের অবস্থান জানা সম্ভব হয় না। এসব মোবাইল ফোন অপরাধীরা ব্যবহার করে থাকে।

সোহাগের আইএমইআই কারসাজি সোহাগকে গ্রেপ্তার করে তাকে তাকে থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব। এরপর ১৪ মার্চ সোহাগকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। সেদিন তার পাঁচ দিন রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে পুলিশ তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পরে আদালতকে দেয়া বিস্তারিত প্রতিবেদনে পুলিশ জানিয়েছে, সোহাগ কীভাবে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে আসছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত ইউটিউব থেকে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার পদ্ধতি রপ্ত করে সোহাগ। চুরি, ছিনতাই কিংবা ডাকাতি করে নেয়া মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করলে সেই ফোন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে প্রশাসন আর ওই মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারে না। সোহাগের দোকান থেকে একটি আইফোন, একটি হুয়াই ফোন, একটি স্যামসাং, একটি ওয়ালটন, একটি লাভা এবং একটি সনি কোম্পানির মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে কালো রঙের জে৩ এক্স নামের একটি ডিভাইস। এর বাইরে তার কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করে র‍্যাব। বিচারের জন্য তার ডেস্কটপ কম্পিউটারের মনিটরের একটি স্ক্রিনশট আলামত হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে সোহাগ আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করত সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার সরকার বলেন, দ্রুত তদন্ত শেষ করে সোহাগের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত