ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি

শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৬৫

শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৬৫

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা ও নকল সরবরাহের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পাবনায় সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিমসহ ১৯ জন, বরিশালে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম বাপ্পীসহ ১০, বগুড়ায় ১৭, রাজশাহীতে পাঁচ, ঝিনাইদহে ছয়, গাইবান্ধায় আট ও জামালপুরে তিনজন। গতকাল শনিবার ও আগের দিন শুক্রবার পরীক্ষা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সারাদেশে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

পাবনা

নকল সরবরাহে সহযোগিতা করায় পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিমসহ বিভিন্ন কলেজের চার শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে প্রশাসন। রেজাউল করিম বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক। এ ছাড়া অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে কমপক্ষে ১৫ পরীক্ষার্থীকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ কেন্দ্র থেকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকসহ আটজন, পাবনা জেলা স্কুল কেন্দ্র থেকে দু'জন, শহীদ ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে দু'জন, পাবনা ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্র থেকে পাঁচজন ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্র থেকে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়। পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বরিশাল প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকাসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ এই গ্রেফতার অভিযান চালায়। গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম বাপ্পী বরিশাল নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি। বাকিরা পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে নগরীর হেমায়েত উদ্দিন সড়কে ইম্পেরিয়াল হোটেলে অভিযান চালিয়ে তিন পরীক্ষার্থীসহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পীর সহযোগী শহিদুল ইসলাম সোহেল, পরীক্ষার্থী ফাতেমা বেগম, নাজনীন নাহার মনি, এলিনা বেগম রূপা, অভিভাবক আনোয়ার হোসেন ফকির, আহসান হাবিব হাওলাদার ও জহিরউদ্দিন জুয়েল হাওলাদার। হোটেলটির ৪০৬ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় দেড় লাখ টাকা, তিনটি আধুনিক ব্লু টুথ ডিভাইস ও আটটি মোবাইল ফোনসেট। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিউ সার্কুলার সড়কে ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে এবং সেখানে অবস্থানকারী পরীক্ষার্থী জায়েদা খাতুন ও তার স্বামী বাদল বেপারীকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজশাহী

পরীক্ষা চলাকালে নগরীর সরকারি সিটি কলেজ থেকে চারজন এবং রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্র থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তুসমির শেখ সুমাইয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সারোয়ার জাহান, বগুড়ার সোনাতলার সাইদুর রহমান, রাজশাহীর মোহনপুরের আলমগীর হোসেন এবং নগরীর সাধুর মোড়ের সালেহ আহমেদ। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আল-আমিন হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হবে।

বগুড়া বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ ১৭ পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন শিহাব, সোহাগ, মাহফুজার রহমান, রুমি আক্তার, হাবিবুর রহমান, মোতালেব হোসেন, ফাতেমা খাতুন, আবু বক্কর, রাহিয়া সুলতানা, সাদিয়া খাতুন, রোমেল আহম্মেদ, রুহী ফারজানা, সাবিনা খাতুন, রাবেয়া খাতুন, জাকিরুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ ও সাজেদুর রহমান। বগুড়া সদর থানার ওসি বদিউজ্জামান বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করা হবে।

গাইবান্ধা প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরিকল্পনা ও ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির চেষ্টাকালে বিভিন্ন স্থান থেকে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গতকাল বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এবং তিনজনকে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার ভুয়া প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা হলেন রংপুরের পীরগঞ্জের জিম, সুন্দরগঞ্জের শামীম মিয়া ও মুকুল মিয়া। গতকাল পরীক্ষা কেন্দ্রে গোপনে মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সম্পা রানী মোদক, আয়েশা সিদ্দিকা, সালমা খাতুন, মাহমুদা আকতার ও সাকোয়াত হোসেন নামের পাঁচ পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার।

ঝিনাইদহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে প্রশ্ন ও উত্তর আদান-প্রদানসহ জালিয়াতির নানা অভিযোগে দুই পরীক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার, ভুয়া পরিদর্শকসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল পরীক্ষা চলাকালে শহরের পিটিআই ও দিশারী প্রি-ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে তাদের গ্রেফতার করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তারা হলেন চুয়াডাঙ্গা সদরের জাফরপুর গ্রামের সুরাইয়া আক্তার, ঝিনাইদহ সদরের বামনাইল গ্রামের পিকুল বিশ্বাস, দিশারী প্রি-ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের রেজিস্ট্রার ফারুক হোসাইন, ভুয়া পরিদর্শক ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়ার রফিক আহমেদ জনি, হুদা সুরাট গ্রামের শাহীন আলম ও যশোরের জগহাটি গ্রামের আলী রেজা।

জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনের ৯ ধারায় মামলা হয়েছে।

জামালপুর দিকপাইত শামছুল হক ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ওই কলেজের অফিস সহকারী স্থানীয় যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে আটকের পর এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই অভিযোগে ওই কেন্দ্রের কর্তব্যরত এক শিক্ষক ও দুই পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন শামছুল হক ডিগ্রি কলেজের অফিস সহকারী ও ইউনিয়নের যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, কম্পিউটার অপারেটর জহির উদ্দিন ও অফিস সহায়ক এরশাদ আলম। তাদের কাছ থেকে উত্তরপত্রসহ তিনটি অ্যানড্রয়েট মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয় বলে জানান কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট আকাশ কুমার কুণ্ডু।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত