ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

এনটিআরসিএ’র ঘুম ভাঙবে কবে?

  মুন্নাফ হোসেন

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০১৮, ১৬:০১

এনটিআরসিএ’র ঘুম ভাঙবে কবে?

আর কত সময় অতিবাহিত হলে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙবে? প্রশ্নটা লক্ষাধিক বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিত বেকারদের হৃদয়ের কথা। অপেক্ষা করতে করতে আর সহ্য হচ্ছে না। কথায় আছে যে জেগে জেগে ঘুমায় তাকে জাগানো যায় না।

যে উদ্দেশ্যে এনটিআরসিএ গঠন করা হয়েছিল তার সুফল জাতি পায় নি। ২০০৫ সালের আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি বিচার করা হতো না। বিএ পাশ থাকলেই নিয়োগ দেওয়া হতো। ফলে উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়া যেত কম। তাই উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল এনটিআরসিএ। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সাল থেকে ১৩টি পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্তদের সনদ প্রদান করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে হাতেগোনা কয়েক হাজার। প্রায় ছয় লক্ষাধিক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের কোনো ব্যবস্থা করা হয় নি।

২০১৫ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে শিক্ষক নিয়োগের সরাসরি সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান ম্যানেজিং কমিটির হাতে কোনো ক্ষমতা থাকবে না। ঘোষণাটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রায় ১৫০০০ শূন্যপদ খালি থাকলেও নিয়োগ পেয়েছিল মাত্র ৫০০০-৬০০০ নিবন্ধনধারী। বাকি পোস্টগুলো এখনও পূরণ করা হয় নি। উল্লেখ্য যে শূন্যপদের ভিত্তিতে বিসিএসের আদলে ত্রয়োদশ নিবন্ধনধারীদের পরীক্ষা নিয়েও চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের এখনও নিয়োগ দেওয়া হয় নি। ভাইভা পাশের পর নিয়োগ হয় না, এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। অনেকে চূড়ান্তভাবে ত্রয়োদশ নিবন্ধন পরীক্ষা পাশের পর আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিল। মা-বাবাও আনন্দে আত্নহারা। এ যেন দিবাস্বপ্ন। দুটি বছর অতিবাহিত হলেও নিয়োগ আর কপালে জুটেনি।

অন্যদিকে ১-১২তম নিবন্ধনধারীরা নিয়োগের পথ বন্ধ হচ্ছে দেখে আদালতে প্রায় দুইশটির মত রীট দায়ের করেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজয়ী হলেও এখনও নিয়োগের কোনো সংকেত পান নি। অনেকে নিয়োগ না পাওয়ায় বেকারত্বের গ্লানি মাথায় নিয়ে বিবাহ নামক মায়ার বন্ধনেও রয়েছেন ফাঁকা। কেননা বেকার ছেলেকে কি কনের বাবা তার আদরের দুলালিকে বিয়ে দিতে চায়?

বর্তমানে দেশে প্রায় ষাট হাজারের মত শূন্যপদ রয়েছে। লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। শিক্ষামন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করছেন না তা ভেবে পাচ্ছি না। কিছুদিন আগে এনটিআরসিএ নিবন্ধনসনদ প্রাপ্তদের একটি জাতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির কোনো খবর নেই। অনেকে ভেবেছিল ঈদুল আযহার আগেই গণবিজ্ঞপ্তি আসবে কিন্তু তা আর হলো না। তবুও নিবন্ধনসনদধারীদের আশা, হয়তো ঈদের পরই গণবিজ্ঞপ্তি আসবে। বেকারদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কোনো মূল্য কি এনটিআরসিএ দিবে? নাকি তাদের কষ্টগুলো বুকের পাজরের নিচে চাপা পড়বে? যেহেতু মেধাতালিকা হয়েছে সেহেতু দ্রুত ই-রিকুইজিশন ও গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করলে একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদ পূরণের মাধ্যমে দেশ একধাপ এগিয়ে যাবে অন্যদিকে অনেকে বেকারত্বের দহন থেকে মুক্তি পাবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক: সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি), মোহাম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত