ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

প্রাথমিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি হলে বৈষম্য বাড়বে

  মুন্নাফ হোসেন

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৮, ১০:২৯  
আপডেট :
 ১০ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৩৪

প্রাথমিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি হলে বৈষম্য বাড়বে

শিক্ষার প্রথম সোপান হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোমলমতি শিশুদের ভাল মানুষ হিসেবে তৈরী করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া সম্ভব নয়। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নকল্পে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। অবকাঠামোর ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের মান উন্নয়নে সরকার একটু মনযোগ দিলে প্রাথমিক শিক্ষা আরো উন্নত হবে। এমনও বিদ্যালয় আছে যেখানে দুই-তিন জন শিক্ষক অক্লান্ত পরিশ্রম করছে অথচ সেই মেহনতি শিক্ষকদের মান এখনও অনেক নিচে।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকদের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। শিক্ষক যদি কর্মচারী হয়, তাহলে তার মর্যাদা কখনো বাড়ে না। এটা একজন শিক্ষকের জন্য লজ্জা।

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে। এমন সিদ্ধান্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা হতাশায় ভুগছেন। কেননা তারা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশাল সমাবেশ করা হয়েছে। তাদের দাবী প্রধান শিক্ষকদের পরের গ্রেডেই যেন সহকারীদের গ্রেড প্রদান করা হয়।সরকারের উচ্চ মহলের আশ্বাসে সমাবেশ শেষ করলেও দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের দাবী মেনে নেওয়া হয় নি। এখন যদি সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয় তাহলে সহকারী শিক্ষকদের দাবী কখনো পূরণ হবে না। তবে একটা বিষয় ভেবে দেখা যায়। তা হল- প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড, সহকারী প্রধানশিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড প্রদান করা। তবে সহকারী প্রধানশিক্ষকদের বাড়তি ভাতা প্রদান করা যেতে পারে অথবা দুই-তিনটা বাড়তি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।

আর যদি পদ সৃষ্টি করা না হয়, সেটাই মঙ্গল। প্রায় ৯৫ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছে ৪-৬ জন। এমতাবস্থায় একজন সহকারী প্রধানশিক্ষক পদ সৃষ্টি হলে তার মধ্যে অন্য একটি ভাব চলে আসবে, সহকারী শিক্ষকদের অবহেলা করবে এবং ক্লাশেও কম যাবে। তাছাড়া প্রধানশিক্ষক ও সহকারী প্রধানশিক্ষক উভয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা বাড়বে। একে অন্যের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চাইবে। মাত্র ৪ থেকে ৫ অথবা ৬জন শিক্ষকের মধ্যে দুইজন প্রশাসনিক কাজ করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অনেকাংশে কমে যাবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা এক প্লাটফর্মে আসলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর হতে পারত। কিন্তু একেক সমিতি একেক ধরনের দাবী করে; সবাই একমত হতে পারে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর শিক্ষক-কর্মচারীরদের উৎসব ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হবে। এটা অবশ্যই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নির্বাচনের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রত্যাশা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের পরের গ্রেড ১১তম গ্রেড সহকারী শিক্ষকদের প্রদান করে বহুদিনের বেতন বৈষম্য দূর করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলুন।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনবাড়ী, টাংগাইল

  • সর্বশেষ
  • পঠিত