ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘বঙ্গবন্ধু বললেন সব ভারতীয় ছবির নেগেটিভ আর প্রিন্ট পুড়িয়ে দাও’

‘বঙ্গবন্ধু বললেন সব ভারতীয় ছবির নেগেটিভ আর প্রিন্ট পুড়িয়ে দাও’

দেশ স্বাধীনের পর যখন প্রখ্যাত নির্মাতা জহির রায়হান নিখোঁজ হন তখন বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি মহা সংকটে। সেই সুযোগে একদল স্বার্থান্বেষী মানুষ চাইলেন দেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করতে। তখন বাধা হয়ে দাঁড়ালেন সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি চিত্রনায়ক রাজ রাজ্জাক। গেলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। চলচ্চিত্রের সমস্ত কিছু খুলে বললেন। আর রাজ্জাকের মুখে সব শোনার পর ভারতীয় চলচ্চিত্র পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

গত ২৯ জুলাই দেশ টিভির স্টুডিওতে দৃশ্যায়ন হয় ‘বেলা অবেলা সারাবেলা’র একটি অনুষ্ঠানে। যেখানে আসাদুজ্জামান নূরকে জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। দুই পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয় দেশ টিভিতে ৬ ও ১৩ আগস্ট। আর এখানেই আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে আলাপকালে স্বাধীনতার ঠিক পর পরেই বাংলা চলচ্চিত্রের সংকটের কথা ওঠে আসে রাজ্জাকের কথায়।

বাংলাদেশে তখন সবচেয়ে নামকড়া আর প্রতিভাবান নির্মাতা জহির রায়হান। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর নিখোঁজ হওয়া ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে যখন তারও হদিস মেলেনি আর, তখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে সদ্য স্বাধীন বাংলার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। আর তার নিখোঁজ হওয়ায় বিপাকে পড়েন চিত্রনায়ক রাজ্জাকসহ দেশীয় কলাকুশলীরা। তাদের হাতে কোনো সিনেমা নেই চালানোর মতো। তখন উপায়ান্তর না দেখে পরামর্শ নিতে ছুটে যান বঙ্গবন্ধুর কাছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতে চলচ্চিত্রের সংকটের প্রসঙ্গ ওঠতেই দেশ টিভির অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নূরকে রাজ্জাক বলেন, বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। জহির সাহেব নেই। কী হবে ছবির। ইন্ডিয়ান ছবি রিলিজ করার জন্য তখন অনেকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। আমরা সবাই গেলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে। ইন্ডাস্ট্রি চলবে কী করে? তাঁকে বোঝালাম। তিনি বললেন, তাহলে ইন্ডিয়ান ছবি আনতে কেন বলছে এরা? আমরা বললাম, একদল স্বার্থপর আছে। বললেন, ঠিক আছে। ছবি আছে? তখন একটা ছবি ছিল, ‘মনের মানুষ’। মোস্তফা মাহমুদের ছবি। রেডি একদম। আমি বললাম, দিচ্ছি আমরা। পনেরো দিন সময় দেন। উনি ওইখানে তাত্ক্ষণিক বললেন, সব ইন্ডিয়ান ছবির নেগেটিভ আর প্রিন্ট পুড়িয়ে দাও। এরপর একটার পর একটা ছবি আমরা রিলিজ করা শুরু করলাম।

পরবর্তীতে ভিনদেশি ছবি আমদানি না করেও নায়ক রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন প্রযোজক, নির্মাতা, অভিনেতার সমন্বয়ে ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যায় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। সমৃদ্ধ হয় বাংলা চলচ্চিত্র। তখন অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেও বছরে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন চিত্রনায়ক রাজ্জাক। তাই বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস লিখতে হলে কিংবদন্তি এই অভিনেতাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত