ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

কাকরাইলে মা-ছেলে খুন: তৃতীয় স্ত্রীসহ রিমান্ডে গৃহকর্তা করিম

কাকরাইলে মা-ছেলে খুন: তৃতীয় স্ত্রীসহ রিমান্ডে গৃহকর্তা করিম

রাজধানীর কাকরাইলে চাঞ্চল্যকর মা-ছেলে খুনের পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে পারিবারিক বিরোধকে সামনে রেখে এই জোড়া খুনের তদন্ত চলছে। ষাটোর্ধ্ব গৃহকর্তা ও ব্যবসায়ী আবদুল করিমের তিন স্ত্রীর মধ্যে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হল কিনা, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

ইতোমধ্যে গৃহকর্তা আব্দুল করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়দিন করে হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

ঢাকার মহানগর হাকিম খোরশেদ আলম শুক্রবার তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এ অনুমতি দেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মোজাম্মেল হোসেন জানান।

কাকরাইলে রাজমনি প্রেক্ষাগৃহের কাছের একটি বাড়িতে বুধবার সন্ধ্যায় খুন হন গ্রোসারি ব্যবসায়ী করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার ও তার ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওন। শামসুন্নাহারের বড় দুই ছেলে বিদেশে থাকেন।

মুন্সীগঞ্জের শামসুন্নাহার ব্যবসায়ী করিমের প্রথম স্ত্রী। করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিনি চার বছর আগে মুক্তাকে বিয়ে করেন বলে পুলিশ জানায়।

গ্রোসারি ব্যবসা পাশাপাশি এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের প্রযোজনা ও পরিচালনায় যুক্ত করিমের বহুবিবাহের কারণে পারিবারিক জটিলতা থেকে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের।

এসআই মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আব্দুল করিম ও শারমিন আক্তার মুক্তাকে জিজ্ঞাবাদে পুলিশের আবেদনের শুনানি নিয়ে তাদের ছয়দিন করে হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেন বিচারক।

বুধবার সন্ধ্যায় কাকরাইলের তমা সেন্টার গলির কাছে বহুতল ভবনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। বাড়ির পাঁচতলার ফ্ল্যাট থেকে মায়ের ও চারতলার সিঁড়ি থেকে ছেলে শাওনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আবদুল করিমের একাধিক বিয়ে নিয়ে সংসারে বিরোধ চলছিল। কাকরাইলে করিমের একাধিক ছয়তলা বাড়ি আছে। ‘করিম টাওয়ার’ নামে একটি আলিশান ভবনও রয়েছে তার। এছাড়া পলওয়েল মার্কেটে দোকান ছাড়াও পুরান ঢাকায় তার আছে কাঁচামালের আড়ত। গ্রোসারি ব্যবসার পাশাপাশি করিম চলচ্চিত্র ব্যবসায় জড়িত। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাও করেন। ‘বন্ধু তুমি/শত্রু তুমি’ ছবির প্রযোজনা করেছেন করিম। করিম কখনও তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কাকরাইলে আবার কখনও তৃতীয় স্ত্রী মুক্তার সঙ্গে পল্টনে থাকতেন।

প্রায় ২২ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন করিম। বিয়ের দুই বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেন করিম। ওই সংসারে আকাশ (২০) নামে এক ছেলে রয়েছে। আকাশ কলেজে পড়েন। চার বছর আগে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে অভিনেত্রী মুক্তাকে বিয়ে করেন করিম। করিমের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরের মুক্তারপুরে।

একাধিক সূত্র জানায়, বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে করিমের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর কর্তৃত্ব ফলাত করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার। এটি মেনে নিতে পারছিল না না তৃতীয় স্ত্রী মুক্তা। এ নিয়ে কাকরাইলের বাসায় প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। সম্প্রতি মুক্তা তার ভাইদের নিয়ে কাকরাইলের বাসায় এসে শামসুন্নাহারকে হুমকি দিয়ে যান। এ সময় শামসুন্নাহারকে মারধরও করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে করিম জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি অফিসে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে তিনি বাসায় আসেন। বাসায় কাজের লোক রাশিদা বেগম পুলিশকে জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি রান্নাঘরে ছিলেন। হঠাৎ কে বা কারা রান্নাঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। এ সময় তিনি ঘর থেকে চিৎকার শুনতে পান। পরে ওই ভবনের দারোয়ান নোমান এসে রান্নাঘরের দরজা খুলে দিলে বাইরে বের হয়ে একটি রুমে শামসুন্নাহারের লাশ এবং সিঁড়িতে শাওনের লাশ দেখতে পান। দারোয়ান নোমান পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি বাসার নিচেই ছিলন। হঠাৎ ৩০-৩৫ বছর বয়সী একজন লোক সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলেন, ‘ওপরে যান, সেখানে মারামারি হচ্ছে।’ এরপর তিনি ওপরে যান।

গৃহকর্তা করিমের ভাই মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি গ্রামে থাকি। ঘটনা শোনার পর ঢাকায় আসি। করিম যে তৃতীয় বিয়ে করেছেন তা আমার জানা ছিল না। অত্যন্ত গোপনে ওই বিয়ে হয়েছিল। মুক্তা ডিবির হাতে আটকের পর বিষয়টি জানতে পারি।’ মোক্তার হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় বিয়ের খবরটি সবার জানা ছিল। ওই স্ত্রীর সঙ্গে অনেক আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে। তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। তবে ওই ঘরের সন্তান আকাশ প্রায়ই আমাকে ফোন করেন। যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। আকাশের পড়ালেখার খরচ করিমই বহন করেন।’ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, শামসুন্নাহারের বুকের ওপর ছুরির আঘাতটি ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ছেলের বুকের উভয় পাশের ছুরির আঘাতই ফুসফুস ভেদ করেছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ দুটি এখন বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। নিহত শামসুন্নাহারের বড় দুই ছেলে ফেরার পর লাশ দাফন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত