ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিসিএসের সিলেবাস মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুই না

  ডা. তারাকি হাসান মেহেদী

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৫০  
আপডেট :
 ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৫৪

বিসিএসের সিলেবাস মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুই না

বিসিএসের জন্য পড়তে ভাল লাগে না- এ অনেক পুরনো অভিযোগ ডাক্তারদের। অথচ বিসিএসের যে সিলেবাস ও সিস্টেম, একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর জন্য এটা তেমন কিছুই না।

মেডিকেলে যে স্টিম রোলার চালিয়ে প্রত্যেকটা আইটেমে টপিক অনুযায়ী সব পড়া অক্ষরে অক্ষরে আদায় করে নেয়, তার তুলনায় বিসিএসের পড়া ঢের সহজ। সমস্যা একটাই যে, মেডিকেলে পড়তে হয় ডাক্তারি বিষয়, আর বিসিএসে পড়তে হয় জেনারেল বিষয়।

তবে একটু চেষ্টা করলে ও আগ্রহ থাকলে জেনারেল বিষয়গুলো সহজেই আয়ত্ব করা যায়। তিনটা আলাদা জেনারেল বিষয়ে তিনটা আলাদা মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বলতে পারি আমার কাছে সেগুলো মেডিকেলের তুলনায় অনেক সহজ মনে হয়েছে। হ্যা, সেগুলো অবশ্যই কঠিন বিষয়, তবে মেডিকেলের কঠিন পড়াশুনার পুর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় সেগুলো তেমন কঠিন মনে হয়নি।

আমি ডাক্তারদের সবচেয়ে বেশি মেধাবী এটা দাবী করছি না, করা সংগতও না। তবে কাউকে ডাক্তার হতে হলে তাকে কঠিন ডাক্তারি বিষয়সমুহ পড়াশুনা করে তবেই ডাক্তার হতে হয়। ফলে তাদের কাছে বিসিএসের মত জেনারেল ও বেসিক বিষয়গুলো অপেক্ষাকৃত সহজ লাগার কথা।

কিন্তু বেশিরভাগ ডাক্তারই বিসিএসের পড়াশুনা শুরু না করেই কঠিন ভেবে এটা থেকে দূরে থাকে। যেসব ডাক্তারের ইচ্ছা বিসিএস চাকুরী করার, তাদেরকে এই "বিসিএস পড়া ভীতি" থেকে দূরে থাকতে হবে। একবার আগ্রহের সাথে শুরু করুন, দেখবেন পড়তে ভাল লাগছে, সহজ লাগছে।

আর সত্যি বলতে কি যারা লেগে থাকে তাদেরই বিসিএস হয়ে যায়। এটি আমার দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বলছি। তেত্রিশ বিসিএস এ আমার এক কলিগের ডাক্তারি ভাল লাগেনি। সে স্বাস্থ্য ক্যাডার ছেড়ে ফরেন ক্যাডারে পরে পরীক্ষা দেয় এবং টিকেও যায়।

এর আরেকটা উদাহরণ হল আজকের ছত্রিশ বিসিএসের রেজাল্ট। এটাতে একশ পঁচাশি জন ডাক্তার তো স্বাস্থ্য ক্যাডারে ঢুকেছেই, এরপরেও এডমিন ও ফরেন ক্যাডারেও হয়েছে। ফরেন বা পররাষ্ট্র ক্যাডারে ফার্স্টই হয়েছে একজন ডাক্তার, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ডা. সুবর্ণ শামীম আলো।

ডাক্তারি পড়ে শুধু স্বাস্থ্য ক্যাডার দিয়ে ডাক্তারই হতে হবে, তা নয়। প্রশাসন, ফরেন, পুলিশ ক্যাডারেও চাইলে ঢুকতে পারবে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি ডাক্তারি পেশাকেই সবচেয়ে বেশী পছন্দ করি।

ভারতের বুরোক্রেসির দিকে যদি খেয়াল করা যায়, সেখানে এখন প্রচুর টেকনোক্র‍্যাটরা প্রশাসনে ঢুকে যাচ্ছে। তারা এমনি এমনি ঢুকছে না, তুমুল প্রতিযোগিতা করে প্রথম স্থান করেই ঢুকছে। টেকনোক্র‍্যাটদের মধ্যে যারা ব্যুরোক্র্যাট হয়ে যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার। তাই, যাদের লক্ষ্য বিসিএস দেওয়ার, তাদের উচিত কিছু সময়ের জন্য এর পেছনে লেগে থাকা। বিসিএসের যে বর্তমান সিস্টেম, এতে বেশিদিন দরকার নেই, ছয় মাস ভালোভাবে প্রস্তুতিই যথেষ্ট।

কিন্তু এর জন্য হতে হবে জেনারেল বিষয়ে আগ্রহী ও পড়ার প্রতি একনিষ্ঠতা। তাহলে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে একটা জায়গা করে নিতে পারবেই।

লেখক: মেডিকেল অফিসার

  • সর্বশেষ
  • পঠিত