ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

নির্বাচন ছাড়া বিএনপির আর কি বিকল্প আছে?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৪৮  
আপডেট :
 ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৬:৫৩

নির্বাচন ছাড়া বিএনপির আর কি বিকল্প আছে?

খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারুন বা না পারুন, বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারুক বা না পারুক, সরকারের মনোভাব যা-ই হোক, বিএনপির আগামী নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তারা নির্বাচনে যাবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রতি তার মনোভাব স্পষ্ট করেছেন। খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড এবং মামলার বিচার নিয়েও তিনি কোনো রাখঢাক করেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, ‘‘বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে আমাদের কিছুই করণীয় নেই।’’

আর বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাদণ্ড নিয়ে বলেছেন,‘‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিএনপির কাছের লোকেরাই মামলা দিয়েছে, রায় দিয়েছেন আদালত। আদালতের রায়ে সরকারের কিছু করার নেই।’’

প্রধামন্ত্রীর এই বক্তব্য বিএনপিকে নতুন কোনো বার্তা দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা এখন পরিস্কার যে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচন যথা সময়ে হবে। শুধু বিএনপি কেন, অন্য কোনো দলের ব্যাপরেও তিনি একই কথা বলেছেন। আর এরইমধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া হয়তো অংশ নিতে পারবেন না।’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন না কেন, আমার ধারণা হলো, বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে। এমনকি খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনের অযোগ্য হন, তারপরও বিএনপি তাঁকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নেবে। কারণ, নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নাই।’’

বিকল্প না থাকার কারণ জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই অধ্যাপক বলেন, ‘এবার নির্বাচনে না গেলে বিএনপির নিবন্ধন হারানোর বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে। আরো অনন্ত পাঁচ বছর বিএনপিকে সংসদ বা ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে। আরো পাঁচ বছর সংসদের বাইরে থাকার চাপ বিএনপি সহ্য করতে পারবে না। বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা আছে। আরো মামলা হতে পারে। এই মামলাগুলো মোকাবেলা করতে হলে যে ভিত্তি বা শক্তি থাকা দরকার, সেটা পার্লামেন্টে থাকলেই সম্ভব। সংসদে বিএনপির আসন যদি কমও হয়, তারপরও সেখানে তারা কথা বলার সুযোগ পাবে। প্রতিবাদ জানাতে পারবে। আর বিএনপির বিদেশি মিত্ররা চায় বিএনপি নির্বাচনে যাক, সংসদে যাক। তাদের এই প্রত্যাশা এবার বিএনপির পক্ষে এড়ানো সম্ভব নয়।’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে গেলে হয়তোবা ভোটের বাক্সে তারা পিছিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু নির্বাচনে না গেলে তাতে তো কোনো লাভ নাই। সংসদদে বিএনপির এখন যাওয়া জরুরি। আর সেজন্য নির্বাচনে যেতে হবে।’’

বিএনপি প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে। আর তারা সংসদে নাই চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। এত বেশি সময় ধরে ক্ষমতা এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির জন্য অনেক ক্ষতিকর। দলের নেতা-কর্মীদের এই পরিস্থিতি হতাশ করছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি লাভবান হয়নি বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কথা নতুন কিছু নয়। তবে এবার কনফিডেন্স লেভেলটা স্পষ্ট। নির্বাচন হবে, তা ২০১৪ সালের মতও যদি হয়। আর আমার মনে হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি যে অবস্থানে ছিল এখন আর সেই অবস্থানে নাই। তারা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকারের ওপর একটা চাপ জারি রাখতে চায়। তারা এরইমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে। এখন তারা খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না- এই ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে সাধারণ মানুষেন সহানুভূতির বিষয়টিও তাদের মাথায় আছে। আসলে তাদের যা হিসাব, তা সব আগামী নির্বাচন নিয়েই।’’

বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার গুরুত্ব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। আমার মনে হয়, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার কোনো কৌশল অবলম্বন করলেও বিএনপি সেই কৌশলকে এড়িয়ে নির্বাচনে যাবে। কারণ, দলটি আর ক্ষমতা এবং সংসদের বাইরে থাকতে চায় না। আরো পাঁচ বছর তারা বাইরে থাকলে দলের অস্তিত্ব চরম সংকটে পড়বে।’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে তাদের শরিকরা কী করবে? এটা কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন। আর বর্তমান সরকার দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাজ নিয়ে সমালোচনা আছে। ভোটারদের ভিন্ন চিন্তা আছে। আর দেশে তো অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ ভোট অনেক। তাই বিএনপির কৌশল হলো আগামী নির্বাচনের আগে যতটা চাপ সৃষ্টি করে সুবিধা নেয়া যায়। টার্গেট কিন্তু নির্বাচন।’’

সূত্র: ডয়চে ভেলে

ডিপি/

আরও পড়ুন :

কারাগারে যেভাবে দিন কাটছে খালেদা জিয়ার

  • সর্বশেষ
  • পঠিত