ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাজশাহী সিটি নির্বাচন

নানামুখি চাপে থাকা বুলবুল পাশে চান মিনুকে

  রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০১৮, ২০:০৯

নানামুখি চাপে থাকা বুলবুল পাশে চান মিনুকে

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন হতে পারে এমন বিশ্বাস থেকে এরই মধ্যে এলাকায় জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে পাড়া মহল্লাতেও। সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা এলাকার সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে বেশ তৎপর। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে, কিন্তু সেই তুলনায় অনেকটা কম তৎপরতা দেখা যাচ্ছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে আগামী নির্বাচন নিয়ে বুলবুল এই মুহুর্তে খানিকটা চাপেই আছেন। মুলত দলীয় নেতাকর্মীদের ভেতরে নিজের অবস্থান শক্ত করতে তিনি বেশি তৎপর। এছাড়া মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বুলবুল উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করতে না পারার যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে ভোটারদের সমর্থন হারাতে পারেন।

২০১৩ সালের ১৫ জুন রাসিক এর সব শেষ নির্বাচন হয়। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ি আগামী জুনেই এই নির্বাচন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই নির্বাচন নিয়ে বুলবুল এখনো প্রকাশ্যে কোন প্রচার শুরু না করলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

গত নির্বাচনে যত সহজে বুলবুল মেয়র হয়েছেন আগামীতে কাজটা অতটা সহজ অবস্থায় নাই বলে মনে করা হচ্ছে। গত নির্বাচনে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার কর্মী সমর্থকরা নিজেদের বিজয় নিয়ে অতিমাত্রায় আশাবাদি ছিলেন। একারণে তাদের প্রস্তুতিতে অনেক ঘাটতি ছিলো। কিন্তু আগামী নির্বাচনে তারা সেই ভুল আর করতে চাননা। একারণে এরই মধ্যে তারা মাঠে নেমেছেন। লিটনের মেয়র থাকাকালে রাজশাহী শহরের কী কী উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা তুলে ধরতে চান লিটন সমর্থকরা। শুধু লিটনের উন্নয়নই নয় বরং তার সময়কার উন্নয়নের সাথে বুলবুলের সময়কালের উন্নয়নের একটা ব্যবধান নগরবাসীর সামনে তুলে ধরতে চান তারা।

এক্ষেত্রে অবশ্যই পিছিয়ে আছেন বুলবুল। তবে, বুলবুল ও তার অনুসারিরা বলছেন, প্রথমবারের মত মেয়র নির্বাচিত হলেও খুব স্বস্তিতে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাননি বুলবুল। মামলা মোকদ্দমা আর বরখাস্ত হয়ে দীর্ঘ সময় তাকে কাটাতে হয়েছে নগরভবনের বাইরে। এসব কারণে প্রত্যাশিত কাজ করতে ব্যর্থ হন বুলবুল। বুলবুল নিজেও এমন দাবি করেছেন। কিন্তু তার এই বক্তব্য নগরবাসীকে কতটা আশ্বস্ত করতে পারবে সেটার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

মেয়র পদ থেকে বুলবুল বরখাস্ত থাকার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর নিযাম উল আযীম। তিনি দায়িত্ব পালনকালে নগরবাসীর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে দেন কয়েকগুন। এনিয়ে চরম ক্ষুব্ধ হয় নগরবাসী। হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানোর দাবিতে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এরই মাঝে গত এপ্রিল মাসে বুলবুল দায়িত্ব ফিরে পেয়ে ঘোষণা দেন তিনি নগরবাসীর দাবি মেনে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানোর উদ্যোগ নিবেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এবিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা দিতে পারেননি বুলবুল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন ট্যাক্স কমানোর মত কোন সিদ্ধান্ত বুলবুল নিলে তা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে এটম বোমার মত কাজ করতো। সেই সুযোগ আপাতত নিতে পারছেন না বুলবুল। বরং বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ট্যাক্স না কমাতে পারায় প্রশ্নের মুখে পড়বেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

নগর বিএনপির একাধিক সূত্রমতে, দলের ভেতরের একটি বড় অংশ এখনো বুলবুলের বিরুদ্ধে। ভেতরে বাহিরে তারা তৎপর। এই অংশকে নির্বাচনের আগে নিজের পক্ষে আনতে না পারলে বেকায়দায় পড়বেন তিনি। একারণে বিষয়টি নিয়ে বেশ তৎপর বুলবুল। বিশেষ করে মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ও তার অনুসারিরা যাতে প্রকাশ্যে তার বিপক্ষে না থাকেন সেই কাজটিই করছেন বুলবুল।

অন্যদিকে, গত নির্বাচনে যার দেখানো পথে হেঁটে বিজয় পেয়েছেন সেই মিজানুর রহমান মিনু আশির্বাদ থেকে আগামী নির্বাচনেও যাতে বঞ্চিত না হন সেই তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

সূত্র জানায়, রাজশাহী বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন দরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও তিন দফা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঘোষিত মহানগর বিএনপির নতুন কমিটিতে মিনুকে বাদ দিয়ে সভাপতি করা হয় তারই শিষ্য মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে। সেই সাথে মিনুর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজনকে এই কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়নি।

বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেনি মহানগর বিএনপির বড় একটি অংশ। এর প্রতিবাদে দলীয় কার্যালয়ে তালা, দলীয় কর্মসূচি বর্জন, নেতাদের বাড়ি ঘেরাও, নতুন কমিটি বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশও হয়েছে। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি বুলবুলের নেতৃত্বাধিন মহানগর বিএনপি।

সব মিলিয়ে দলের ভেতরে এখন সুশৃঙ্খল অবস্থা নেই। মেয়র হিসেবে বুলবুল দায়িত্ব পালন করলেও দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে খানিকটা অস্বস্তিতে আছেন। তবে, দলের একাধিক সূত্র বলছে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মিজানুর রহমান মিনু ও শফিকুল হক মিলনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে চেষ্টা করছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

এজন্য বেশ কিছু বিষয়ে নিজের অবস্থানও পরিবর্তন করতে সম্মত হয়েছেন বুলবুল। মহানগর কমিটি ঘোষণার আগে তড়িঘড়ি করে মিনু ও মিলনের করা ওয়ার্ড ও থানা কমিটির বৈধতা দেয়া, মহানগরের পুর্নাঙ্গ কমিটিতে মিজানুর রহমান মিনুর ঘনিষ্ট কয়েকজন এবং মিলন পন্থীদের বিভিন্ন পদে স্থান দেয়ার কাজ করতে পারেন বুলবুল।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মুলত মিনু, বুলবুল ও মিলন এই তিনজনই রাজশাহী শহরে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ঐক্য থাকলে যেমন বিএনপি শক্ত অবস্থানে থাকবে অন্যদিকে বিভক্তি তৈরি হলে তাদের ক্ষমতা হারাবে এই বিষয়টি তিনজন নেতাই এখন উপলব্ধি করছেন। এক্ষেত্রে মিনু এবং মিলন ও তাদের অনুসারিরা বুলবুলের পক্ষে সরাসরি মাঠে না থাকলে বেকায়দায় পড়বেন বুলবুল। এই বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

যদিও বলবুল দাবি করেছেন, দলের মধ্যে এই মুহুর্তে কোন দ্বন্দ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে নামিনি তা নয়, আগামী নির্বাচনে শক্তভাবে লড়াই করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দলে কোনো বিরোধ নেই উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, বড় দলে এমন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ থাকবেই। তবে তা নির্বাচন সামনে এলে মিটে যাবে বলেন বুলবুল।

মিজানুর রহমান মিনুকে বড় ভাই উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, তিনি সব সময়ই সাথে রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু মানতে চাচ্ছেন না বুলবুলের সাথে সামান্যতম দুরত্বের বিষয়টি। তিনি বলেন, সিটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ছোট ভাই বুলবুল। বড় ভাই হিসেবে ছোটভাইদের সহযোগিতা দেয়ার সবসময়ই তা দিই এবং সব সময়ই তারা পাবে। আমরা সবাই এক সঙ্গে আছি, ভোটের মাঠেও এক সঙ্গে থাকবো বলেন মিনু। তিনি আরো দাবি করেন, এই মুহুর্তে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। এই ইস্যুতে যে আন্দোলন চলছে সেটিই এখনকার আসল ভাবনার বিষয়।

এদিকে, দলের বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিজানুর রহমান মিনু স্থানীয় রাজনীতির কোন পদে না থাকলেও এখনো তিনি এখানকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কারণ স্থানীয় বিএনপির বড় অংশটিই মিনুর অনুসারি। সম্প্রতি মিনু নিজেও এখানকার বিএনপি নেতাদের বিরোধ মেটানোর একাধিক উদ্যোগ নেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এর পেছনে মিনুর নিজেরও স্বার্থও আছে। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি। তিনি মনোনয়ন পেলে বুলবুল এবং মিলন দুজনেরই সমর্থন পাওয়া তার জন্য জরুরি। মুলত সেই কারণেও মিনু সবাইকে এক কাতারে রাখার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে মিনু সফল হলে আগামী সিটি নির্বাচনে তার সুফল পেতে পারেন বর্তমান মেয়র বুলবুল।

এসআইএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত