ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে ছাত্রলীগের কমিটি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৮, ১৬:৫০  
আপডেট :
 ২৫ মে ২০১৮, ১৮:০৩

শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে ছাত্রলীগের কমিটি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে দেয়া হতে পারে ছাত্রলীগের কমিটি। নেতারা বলছেন, সিণ্ডিকেট-অনুপ্রবেশকারীমুক্ত বিশুদ্ধ নেতৃত্ব বেছে নিতেই দেরি হচ্ছে ছাত্রলীগের কমিটি। এবার নেতৃত্ব ঠিক করবেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের ব্যাপারে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। খোঁজ নেয়া হচ্ছে প্রার্থীদের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অতীতের।

১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবার সিদ্ধান্ত হয় ভোট নয়, সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। তবে সম্মেলনের দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনও নতুন নেতৃত্ব পায়নি ছাত্রলীগ। এ সম্মেলনে সভাপতি পদে ১১১ জন আর সাধারণ সম্পাদক পদে ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। ছাত্রলীগের সাত দশকের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।

কাউন্সিল অধিবেশনে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করতে ব্যর্থ হয়ে এ ৩২৩ জন প্রার্থীর তালিকা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেয়া হয়। ছাত্রলীগকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে আর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রার্থীদের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। এজন্যই একটু সময় লাগছে বলে জানান নেতারা। এখন সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে।

জানা গেছে, ১২ মে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করার জন্য ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা বসেছিলেন। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছাতে না পেরে তাঁরা সিদ্ধান্তের জন্য গণভবনে যান। সেখান থেকে এসে তাঁরা কমিটি ঘোষণা ছাড়াই সম্মেলনের সমাপ্তি টানেন।

এরপর কথিত সিন্ডিকেটবিরোধী নেতারা চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রামের দুজনের প্যানেল নিয়ে প্রচার শুরু করেন। ওই দুজনের একজন মাদকসহ আটক হয়েছিলেন বলে আরেক পক্ষ অনলাইনে প্রচার করে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় কাদা-ছোড়াছুড়ি। কারও বিবাহিত হওয়ার প্রমাণ, ব্যবসায়ী হওয়ার প্রমাণপত্র, মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় নাম থাকা, ছাত্রত্ব না থাকা, পরিবার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী—এমন নানা অভিযোগ আলোচনায় আসা নেতাদের বিরুদ্ধে প্রচার চলতে থাকে। ছাত্রদল বা ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রলীগে এসেছেন, এমন অভিযোগ আসে অন্তত ৪০ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, যেনতেনভাবে যাতে ছাত্রলীগের কমিটি না হয়, তা নিশ্চিত করার আগ্রহ দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনি সভাপতিমণ্ডলীর কোনো কোনো সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ডেকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়েও তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বাজেট প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সবার দেওয়া তথ্য এক করে কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে।

সম্মেলন শুরুর আগ থেকেই এবারের সম্মেলনকে ঘিরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং বিশেষ করে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার আগ্রহ স্পষ্ট ছিল। ছাত্রলীগকে তথাকথিত সিন্ডিকেট প্রথা থেকে বের করে এনে নতুন করে সাজানোর ঘোষণাও ছিল। সে লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে চলে আসা সরাসরি ভোট প্রথা থেকে বের হয়ে এসে, এবার সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। কিন্তু সাবেক ছাত্র নেতৃত্ব দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। ছাত্রলীগের সূত্র বলছে, তারা জেনেছেন প্রার্থীদের সবাইকে ডেকে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কবে ডাকবেন, তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। এ বছর ছাত্রলীগের সভাপতি পদে ১১১ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। বয়সসীমা ২৮ বছর নির্ধারণ করার পর এর চেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থীদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর সভাপতি পদে ৬৮ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৭১ জন প্রার্থী আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের সম্পর্কে সরকারের বিভিন্ন উইংয়ের মাধ্যমে খোঁজ খবরও নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে আদালাভাবে কথা বলারও কথা রয়েছে।

নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের আদর্শ পরিপন্থি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কেউ যেন এবার নেতৃত্বে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ শেখ হাসিনা। জানান, এরই মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে এনেছেন তিনি।

ভারত সফর থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী নতুন কমিটি দিয়ে দিতে পারেন বলে জানান নেতারা। শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদই নয়, সহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের নামও একযোগে প্রকাশ করা হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতৃত্ব বাছাই হবে বলে প্রার্থীদের সবাইকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বাছাইয়ে যাঁদের নাম সামনে এসেছে, সবার বিরুদ্ধেই কোনো না কোনো অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় সব পক্ষের সম্মতিতে সমালোচনা নেই, এমন নেতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তাই কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে।

ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রার্থীদের তালিকা আমরা আমাদের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছি। নতুন নেতৃত্ব যত দ্রুত সম্ভব আমাদের নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপহার দেবেন। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নেবে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের চাওয়া- ছাত্রলীগকে ‘সিন্ডিকেট’ মুক্ত করে ও জঞ্জাল ও অনুপ্রেবেশকারী মুক্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক আখ্যায়িত করে তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। বর্তমানে ছাত্রলীগ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। সিন্ডিকেট ও অনুপ্রবেশকারী নিয়ে যে বিতর্ক এবার তার অবসান হবে।

ছাত্রলীগের আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে প্রার্থী অনেক। কমিটির শীর্ষ পদে যাতে অযাচিত কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য অধিকতর যাচাই-বাছাই চলছে। তড়িঘড়ি করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী যথা সময়ে এ কমিটির ঘোষণা দেবেন।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে নামের যে তালিকা গেছে তাতে প্রার্থী অনেক, নারীদেরও নাম আছে। তবে সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। যেহেতু প্রার্থী বেশি তাই যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

২০০৬ সাল থেকে ছাত্রলীগে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের একটি অংশ ভোটের নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। তখন থেকে তারা ‘সিন্ডিকেট’ বা নিয়ন্ত্রকগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতি পান। তারা সারা দেশে পছন্দের ব্যক্তিদের ভোটার করে অনুগতদের নেতা নির্বাচন করে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এবার বাদ পড়ে ভোট-প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করতে বললেও তা সম্ভব হয়নি। সবাই আবার প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত