ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড বাম জোটের ইসি ঘেরাও

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৪  
আপডেট :
 ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৯

পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড বাম জোটের ইসি ঘেরাও

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার সময় কারওয়ান বাজার মোড়ে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাম নেতাদের হাতাহাতি হয়। এতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফাসহ অনেকে আহত হন।

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ দেব বলেন, দুপুরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করতে মিছিল নিয়ে যাত্রা করা হয়। প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ হয়ে কারওয়ান বাজার মোড়ে গেলে মিছিল পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করে। এতে জোনায়েদ সাকি, গোলাম মোস্তফাসহ অনেকে আহত হন।

জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা, সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল বাম গণতান্ত্রিক জোটের। সে লক্ষ্যে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন নেতারা। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে রওয়ানা হন নেতারা। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়।

পুলিশ কারওয়ান বাজার মোড়ে অবস্থান নেয় এবং রাস্তায় বেরিকেড দেয়। কিন্তু বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিল পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে চলার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশ নির্বিচারে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীদের পেটাতে থাকে। অন্যদিকে, জোটের নেতাকর্মীরাও ব্যানারের লাঠি হাতে চড়াও হন। প্রায় ১০ মিনিট ধরে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার সাত্যকি কবিরাজ বলেন, তাদের কাছে খবর ছিল, এ মিছিল থেকে কোনো নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তাদের এগোতে দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মিছিল থেকেই পুলিশের ওপর চড়াও হয়।

তিনি জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।

কাওরান বাজার মোড়ে পুলিশের লাঠিচার্জের পরে সেখানেই অবস্থান নিয়ে বসে পড়েন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে আজকের মতো নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এ সময় জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পরবর্তীতে সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের আহত নেতাকর্মীদের সংখ্যা জানাব।

সমাবেশ থেকে বলা হয়, বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের জরুরি বৈঠক আছে। বৈঠকে আমরা হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি গ্রহণ করব।

জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, নির্বাচনে পুলিশের ব্যবহার কেমন হবে, আজকে তার দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে। আপনারা আজকে পুলিশের ব্যবহার দেখতে পেলেন। নির্বাচনের আর প্রায় সাড়ে তিন মাস বাকি, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাবে, তাতে এই পুলিশ কীভাবে বাধাগ্রস্ত করছে, তার নমুনা আপনারা দেখেছেন। এই সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্বাচনের সাড়ে তিন মাসে আগে যে আচরণ দেখাচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট- এখানে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই।

এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করি। নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার করতে হবে। এই অনুগত নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। যে অগণতান্ত্রিক আরপিও করা হয়েছে, নিবন্ধন আইন করা হয়েছে, সেটা বাতিল করে গণতান্ত্রিক নিবন্ধন আইন করতে হবে। আমরা এই সংগ্রাম জারি রাখব।

বামগণতান্ত্রিক জোট দেশের জনগণকে মেনে নিয়ে এই লড়াইকে আরো জোরদার করবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। আমরা বলেছি, জামায়াত বাদে একটা নতুন রাজনৈতিক সনদ দরকার। কীভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিটা হবে। আজকে সরকার কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। কাজেই জনগণের সামনে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না।

সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন দাবি করেন, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনসহ অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিলানী শুভসহ প্রায় ১৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এর আগে প্রেস ক্লাবের সামনে জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু ও গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ বক্তব্য দেন।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে তদারকি সরকার গঠন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে নির্ভয়ে দিতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

ইভিএম চালু ও ডিজিটাল ভোট ডাকাতির পাঁয়তারা বন্ধ করা, প্রার্থীর জামানত ৫ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করে কঠোরভাবে তা মেনে চলতে বাধ্য করা, অনলাইনে মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার বিধান চালু করা, ভোটার ইচ্ছায় জনপ্রতিনিধি প্রত্যাহার করা এবং ‘না’ ভোটের বিধান চালু করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সইয়ের বিধান বাতিল করা প্রভৃতি রয়েছে বাম জোটের অন্য দাবির মধ্যে। আটটি বামপন্থি রাজনৈতিক দল মিলে গত ১৮ জুলাই ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ যাত্রা শুরু করে। ১০ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত