ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা, সমাবেশ ১ অক্টোবর থেকে

জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা

পাঁচ দফা দাবি ও নয় দফা লক্ষ্য আদায়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা এসেছে সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সমাবেশের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শুরু হবে। গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে জাতীয় ঐক্যের কমিটি গঠন করা হবে বলে ঘোষণা এসেছে সমাবেশ থেকে।

মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, শ্রেণি-পেশা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ কমিটি গঠনের কথা বলা হয় ঘোষণাপত্রে। এ সময় নেতারা পরস্পরের হাত উঁচুতে তুলে ধরে জাতীয় ঐক্যে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন।

শনিবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশ শেষে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

ঘোষণাপত্রে নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্যের সঙ্গে তারা একাত্মতা প্রকাশ করছেন।

এর আগে বেলা তিনটার দিকে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনর জাতীয় ঐক্যের আয়োজনে সমাবেশ শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। কার্যকর গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

কামাল হোসেন বলেন, কেউ কেউ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে ষড়যন্ত্র বলে অবহিত করছে। কিন্তু আমরা প্রকাশ্য বৈঠক ও মিটিং করছি। এই ঐক্যের মধ্যে দেশের মুক্তি আপনাদের উপস্থিতি প্রমান করছে।

সমাবেশে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমার পবিত্র স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আমার পবিত্র পতাকার বিরুদ্ধে, লাখ লাখ মানুষের রক্তে ভেজা, লাখ মানুষের চোখের পানিতে ভেজা এই মাটির বিরুদ্ধে যারা ছিল, যারা আছে তাদের সাথে ঐক্য করবো না।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা স্বপক্ষ শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ এখন রুখে দাঁড়ানোর সময়, এখন অধিকার আদায়ের সময়। প্রতিবাদের কণ্ঠকে ধারালো করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, একটি স্বেচ্ছাচারী, গণতন্ত্রবিরোধী সরকার গত ১০ বছরে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, এমনি আবারো একটি অনুরূপ সরকারের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি কি? সংসদে, মন্ত্রিসভায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতেই হবে। না হলে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করা যাবে না।

জাতীয় নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বি. চৌধুরী বলেন, আমরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং বিএনপির সাথে আলোচনা করছি। আশা করি ফলপ্রসূ হবে। আসুন, সবাই ইতিবাচক স্বপ্নে জেগে উঠতে চাই। স্বপ্নভঙ্গের অধ্যায় রচনা করার জন্য নয়। সিদ্ধান্ত আপনার।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে জনগণের প্রশ্ন, যে স্বাধীনতা আনতে লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, লাখ লাখ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে, এর মূল্যবোধ কোনো পদদলিত? দিন-রাত প্রতিটি ঘন্টা নিয়ে, আতংকে কোনো থাকবে মা-বোনেরা, শংকায় থাকবে গুম, রাহাজানি নিয়ে, কেনো পুলিশ, র্যাব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের ছাড় দিবে? কেনো ঘুষ দুর্নীতিকে ‘স্পীড মানি’ বলে সরকারিকরণ করা হলো? সমস্ত জাতির নৈতিকতাবোধকে পদদলিত করা হলো? এই অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের?

ইভিএম কেউ চায় না উল্লেখ করে তিনি, কেনো আপনাদের সুবিধার জন্য ইভিএম গ্রহণ করতে হবে? কেনো সরকারি কর্মচারীদের দলীয়করণ করা হলো? কেনো তাদের সবসময় ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে, কেনো , কেনো? কেনো স্বাধীন দেশের মা-বোনদের ও শিশুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে, কেনো, কেনো?

তিনি বলেন,আমাদের রাষ্ট্র তুমি কোথায়? আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গী আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কোথায়? কেনো গঙ্গার পানি পাবো না, কেনো বন্ধু রাষ্ট্র তিস্তার পানি দিবে না, কেনো, কেনো, কেনো?

দেশের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মুক্তির পথ একটাই সুষ্ঠু নির্বাচন।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এটা দিবেন না। আমি বলতে চাই, আপনার (শেখ হাসিনা) বাবা ৭৩ সালে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিয়েছিলেন। আপনিও সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিয়ে দেখুন না কী হয়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুল রব বলেন, আমরা আর বন্ধ ঘরে থাকবো না, মাঠে যাবো। কারণ দেশটা খুন, গুম ও বেওয়ারীশ লাশে পরিণত হয়েছে। আর বাংলাদেশটা লুটের রাজ্য পরিণত হয়েছে। কারণ দেশে কোন সরকার নাই।

নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে রব বলেন, যারা নিরপেক্ষ সরকারের থাকবে তারা নির্বাচন করতে পারবেন না

নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঐক্য হয়ে গেছে। কারণ তারা (যুক্তফ্রন্ট) যে ১৫ টি দাবি দিয়েছে, এই দাবির সাথে আমাদের দাবি মিলে। তাই ঐক্য ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র বাকি।

তিনি বলেন, আমরা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। তবে তার ব্যবস্থা আগে করতে হবে। কিন্তু সরকার আমাদের হাত-পা বেধে পানিতে ফেলে দিয়ে বলছে নির্বাচন করুন।

এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবি জানান।

সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, সরকার বলছে, নির্বাচন হবে, আসলে আসেন- না আসলে আসবেন না। এটা সংঘাতের ভাষা। সুতরাং এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে বিরোধী দল নিচিহ্ন হয়ে যাবে।

সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আমরা জাতীয় সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছি সাকি বলেন, সরকার যদি এই সমঝোতার না আসে তাহলে বুঝতে হবে সরকার সংঘাতকে উস্কে দিচ্ছে। তখন আন্দোলন ছাড়া অন্য কোন পথ থাকবে না।

এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুল রব, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মোরশেদ, সব্রত চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ঐক্যের জন্য সব দলের দাবি একই। প্রধান শর্ত হচ্ছে, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করতে হবে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ন্যুনতম কর্মসূচি ও দাবিগুলো নিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করি। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা সরকারকে বাধ্য করবো বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে।

আজকে সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশা করবো, ড. কামালের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগার থেকে আমাদের খবর পাঠিয়েছেন, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এই অপশক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তাই আজকে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোনে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের প্রাণ গিয়েছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকারকে যদি সরিতে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ এই প্লাটফর্ম থেকে জাতীয় ঐক্যের সূচনা হলো। স্বৈরাচার সরকারকে সরাতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ায় সকলকে একত্রিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে বলে আসছি, জাতীয় ঐক্য ছাড়া এই স্বৈরাচার সরকারকে উৎখাত করা যাবে না। এর জন্য আজকে আমরা নতুন করে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আশা করছি, স্বৈরাচার সরকারকে উৎখাত করতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। ৫ টি মূল দাবির ওপরে বিএনপির সাথে জাতীয় ঐক্য হয়েই আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত