ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘রায়ের ভিত্তিতে তারেকের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৩৭  
আপডেট :
 ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৪২

‘রায়ের ভিত্তিতে তারেকের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের ভিত্তিতে তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্ন আসে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, মিডিয়ার একাংশ এই রায় প্রকাশের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে মনগড়া কিছু তত্ত্ব ও তথ্য প্রকাশ করে তার সম্পর্কে জনমনে বিরুপ ধারণা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দলীয় তদন্তকারীর চক্রান্তে সাজানো মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছে। এটা জানার পরেও কেউ কেউ দল থেকে তার পদত্যাগের যে পরামর্শ দিয়েছেন- তাদের কাছে জনগণ প্রশ্ন করতে পারে যে, এত শত গুম, খুন করার জন্য দায়ী সরকারের পদত্যাগ কি তারা দাবি করেছেন? নিম্ন আদালতের দেয়া রায়কে যখন আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন ও বিএনপিকে দুর্বল করার অসৎ উদ্দেশ্য বলছি, তখন সেই রায়ের ভিত্তিতে আমাদের নেতা তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্ন আসে না।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল প্রকাশিত দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা’ বলে আদালতের পর্যবেক্ষণের যে খবর প্রচারিত হয়েছে- তাতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের হুবহু প্রতিফলন দেখে দেশের জনগণের মতো আমরাও বিস্মিত হয়েছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- “১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাতে থাকে। পরাজিত শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে রোধ করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে না গিয়ে বহমান থাকে।” "২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশুণ্য করার হীন চেষ্টা চালানো হয়” বলেও আদালতের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।"

তিনি বলেন, ‘আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বক্তব্য হুবহু এক। কিন্তু লক্ষনীয় হলো-১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, জেলখানায় ৪ জাতীয় নেতার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘৃণ্য অপরাধকে একসূত্রে গাঁথার যুক্তি সঠিক হলে বিএনপি অথবা বিএনপি পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপরাধী বলা হোল কোন যুক্তিতে?’

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বিএনপির জন্মও হয়নি এবং ১৫ আগস্ট কিংবা ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের বিচারে কোন আদালতই বিএনপি কিংবা বিএনপির কোন নেতাকে অভিযুক্ত- এমনকি সম্পৃক্তও করেনি। তাহলে ২১ আগস্টের ঘটনার বিচারের পর্যবেক্ষণে আগের ২টি ঘটনার উল্লেখ কতটা প্রাসঙ্গিক? দল বিশেষের রাজনৈতিক বক্তব্যের সাথে আদালতের পর্যবেক্ষণ মিলে যাওয়া কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয় বলেই জনগণ মনে করে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে হুজি নেতা মুফতি হান্নান দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখে যে জবানবন্দী দিয়েছিলেন তা তিনি প্রকাশ্য আদালতে লিখিতভাবে প্রত্যাহার করে নেয়ার পরেও তারই জবানবন্দীকে ভিত্তি করে তারেক রহমান এবং অন্যান্য বিএনপি নেতাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়াটা কতটা মানবিক, যুক্তিযুক্ত ও আইনসঙ্গত হয়েছে, তা উচ্চ আদালত বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি। আদালতের পর্যবেক্ষণে বিরোধী দলের প্রতি সরকার ও সরকারি দলের প্রত্যাশিত আচরণ সম্পর্কে যেসব বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে- তা বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের আচরণের ঠিক বিপরীত। আমরা আশা করবো সরকার আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ মান্য করবে।’

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘রায়ের পর্যবেক্ষণে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এস এম এ কিবরিয়া ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ থাকলেও মাননীয় বিচারকের বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি সরকারি দলের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ- সে সম্পর্কে দেয়া পর্যবেক্ষণে বর্তমান সরকারের আমলে সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, ছাত্রনেতা জাকিরসহ গুম হওয়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কোন কথা নেই কেন? জনগণ তা জানতে চাইতেই পারে।’

তিনি বলেন, ‘রায়ের পর্যবেক্ষণে কাঙ্খিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে গত ১০ বছরে হাজারো গুম, খুন, গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করা, হাজার হাজার গায়েবি মামলা দিয়ে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীদের বছরের পর বছর ঘরছাড়া করে রাখা, গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করার বিষয়ে কোন কথা না থাকায় রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই পারে।’

মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রাখেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে সংঘটিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের হয় তাহলে বর্তমান সরকারের শাসনামলে পিলখানা বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, হলি আর্টিজানে হত্যাকাণ্ড এবং জঙ্গি হামলায় নিহত বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইমাম-মোয়াজ্জিন, যাজক, পুরোহিত, ব্লগারসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের হত্যাকাণ্ডের দায় ক্ষমতাসীনদের ওপরই বর্তায়। কিন্তু রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই!’

ফখরুল বলেন, ‘২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য তৎকালীন সরকারই মামলা দায়ের করেছে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এফবিআই এবং ইন্টারপোলকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে; বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করেছে এবং সর্বোপরি এই মামলার মূল আসামি মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করেছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, তৎকালীন সরকার অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না। কাজেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা হয়েছে বলে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ- তা যুক্তিগ্রাহ্য কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘মুফতি হান্নানের বেআইনী ২য় জবানবন্দী বাদ দিলে তারেক রহমান এবং অন্য অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকেই এই মামলায় অভিযুক্ত করা যেতো না। যৌক্তিক কারণেই একথা বলা যায় যে, প্রকাশ্য আদালতে মুফতি হান্নান যাতে তাকে দিয়ে জোর করে জবানবন্দীতে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে- এটা বলতে না পারেন, সে জন্যই অন্য একটি মামলায় দ্রুততার সাথে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির কোন উল্লেখ না থাকাও বিস্ময়কর এবং সন্দেহমূলক।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুর কবির খোকনসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত