ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

জামালপুরে আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩৩  
আপডেট :
 ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৪৭

জামালপুরে আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি

জামালপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে ভোটের রাজনীতি জমে উঠেছে। ভোট রাজনীতি ঘিরে ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনেই দু’ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম গ্রুপ ও এন্ট্রি মির্জা আজম গ্রুপ। ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। এর মধ্যে ৩ সংসদ সদস্যই মির্জা আজম গ্রুপের কাছে কোনঠাসা।

জেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকায় আজম গ্রুপই রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। মনোনয়ন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল কোন আসনে মাথাচাড়া দিয়ে প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে, আবার কোন আসনে তুষের চাপা আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠার অপেক্ষায়।

এবার সদর আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন দলের এক ডজন নেতা। ভোটকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় নানা অংক কষে বর্তমান এমপি সাবেক ভুমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরাকে ঠেকিয়ে দিতে ১১ জন সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। প্রার্থীর তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও রয়েছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান এমপি সাবেক ভুমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ,সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহিদ আনোয়ার, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফ্ফর হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মারুফা আক্তার পপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ, এফবিবিসিআইয়ের পরিচালক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজনু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর ইকবাল জাফু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ আব্দুল মান্নান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল হামিদ।

দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে পোস্টার,ব্যানার,ফেস্টুন তোরনে ছেয়ে গেছে সদরের সর্বত্রে। নানা প্রচার প্রচারনা এবং প্রার্থীদের সভা সমাবেশ, মতবিনিময় ও গণসংযোগে আগাম হাওয়া বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী এলাকায়।

পর পর চারবার নির্বাচিত বর্তমান এমপি রেজাউল করিম হীরার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন বিমুখের অভিযোগ থাকলেও ক্ষমতা ভোগের বদনাম নেই। তার মুখের আলোচিত শব্দ বিধি মোতাবেকই চলছেন তিনি। তবে মন্ত্রী থাকাকালীন তার ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহীনের নামে নানা অভিযোগ উঠেছিল। এই নিয়ে পত্র পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল সে সময়।

এদিকে দলের ১২ প্রার্থীর মধ্যে বেশক’জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিলে জামানত হারাবে এমন অভিমত সদরের ভোটারদের। বয়সের বিবেচনায় সদর আসনে নতুন মুখের সম্ভাবনার অভিমতও জানাচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রেজাউল করিম হীরাই দলের মনোনয়ন পাবেন এমন আলোচনাও শোনা যাচ্ছে হীরা বিরোধী সমালোচকদের মুখেও। শেষ মুহুর্তে দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়বে ভোটের লড়াইয়ে। কে উঠবে দলীয় মনোনয়নের টিকিটে নৌকায় অপেক্ষায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সদরের ভোটাররা।

জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ী আসনেও প্রায় ডজন খানেক সম্ভাব্য প্রার্থী নৌকার টিকিট পেতে মাঠে নেমেছে। নির্বাচন সামনে রেখে উপদলীয় কোন্দলে দিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এখানে নিত্যনৈমত্তিক মাঠ দখলের শক্তি প্রদর্শন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকরা। প্রায়ই ঘটছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় পৃথক পৃথক।

এ আসনে সম্ভাব্য ৪ প্রার্থী সাবেক এমপি ডাঃ মুরাদ হাসান, ঢাকার তেজগাঁও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল আব্দুর রশিদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন বাদশা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান। দা’কোমর সম্পর্ক একে অপরের সাথে। এক পক্ষ কর্মসূচি ডাকলে অপরপক্ষ পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন। বিএনপি অধ্যষিত আসনটিতে বর্তমানে জাতীয় পার্টির দখলে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে না পারলে আসনটি হাতছাড়াই রয়ে যাবে।

এ চারজন ছাড়াও মনোনয়ন লড়াইয়ে রয়েছেন- আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও আমেরিকান প্রবাসী নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ তারা।

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ- মাদারগঞ্জ) আসেন মির্জা আজম একক প্রার্থী থাকায় দলীয় কোন্দল লেশ মাত্রও নেই। দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তৃণমূল পর্যায়েও সংগঠন খুবই শক্তিশালী উপজেলা দুটিতে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক ও দলীয় প্রার্থী দুর্বল থাকায় এবারও জামালপুর-৩ আসনে মির্জা আজমের সংসদ সদস্য হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাবেক শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তারেক মালেক সিজার দলের মনোনয়ন চেয়ে পোস্টার লিফলেট ছেড়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনে দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের ৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে কর্মসূচি পালন করছেন। বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে রাজাকারের সন্তান ও বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ তুলেছে অপর প্রার্থীরা। বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান দুলালের ঘরে হানা দিয়েছেন সেক্টর কমান্ডার মরহুম খালেদ মোশারফের মেয়ে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য মেহজাবিন খালেদ বেবী, বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাজাহান আলী মন্ডলও প্রার্থী হয়েছেন। দুলাল এমপি’র সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের ঝাল মেটাতে প্রার্থী হয়েছেন এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক। মানিকজোড় এই দু’জনকে ইসলামপুর আওয়ামী লীগে একসময় আলালের দুলাল বলতো নেতাকর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের একই কমিটিতে একজন সভাপতি অপরজন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দুই ঘনিষ্ট বন্ধুর সম্পর্ক ক্ষমতার অংশিদারিত্ব নিয়ে সাপে নেউলে গিয়ে ঠেকেছে। তাদের পরস্পর বিরোধী তৎপরতা আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়লে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রেজাল্টের অংক উল্টে যেতে পারে। চারজনই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলীয় মনোনয়ন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকসীগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে বর্তমান এমপি সাবেক তথ্য মন্ত্রী আবুল কালাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি নুর মোহাম্মদ। দু’গ্রপের মধ্যে প্রায় ঘটছে রাজনৈতিক সহিংসতা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দু’জনই মনোনয়নের দাবিদার হলেও দলীয় টিকিট পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় আবুল কালাম আজাদ। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লাড়াইয়ে শামিল হন নুর মোহাম্মদ। তাদের তৎপরতায় সেই গতবারের নির্বাচনের চিত্র এবারও ফুটে উঠতে পারে মনে করছেন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও মনোনয়ন লড়াই আছেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

ভোটারদের আলোচনায় উঠে আসছে অতিরিক্ত আইজি মোখলেছুর রহমানের নাম। তিনি এই আসনে কেন্দ্রের গ্রীন সিগন্যাল পেলে আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে নির্বাচনের আগ মুহুর্তে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে গুঞ্জন চলছে দেওয়ানগঞ্জ-বকসীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকায়। গত কয়েক বছর ধরে সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ায় এই গুঞ্জনের ডালপালা ছড়েছে। নির্বাচন ঘিরে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দলীয় কোন্দল তেতিয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলে সংসদ সদস্য হওয়ার মতো একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দল নয় প্রতিযোগীতা চলছে। দলের গঠনতন্ত্র ও শৃংখলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে যদি কোন প্রার্থী জড়িয়ে পড়ে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত