ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

এ যেন ‘এক টিকিটে দুই সিনেমা’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ২১:১৬  
আপডেট :
 ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৩২

এ যেন ‘এক টিকিটে দুই সিনেমা’

বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যার নেতৃত্বে থাকবেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবি করা হয়েছে।

ড. কামাল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ডাক কোনও দলীয় স্বার্থে নয়, এটা জাতীয় স্বার্থে। কোটি কোটি জনগণের পক্ষ থেকে এই ডাক। এটা কোটি মানুষের উদ্যোগ। এই জোটে যুক্তফ্রন্টের দুই শরিক দলও আছে। আমি অন্যদেরকেও আশা করি এই ঐক্যে।’

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, মোস্তফা মহসীন মন্টু, আ ব ম মোস্তফা আমিন, অ্যাড‌ভো‌কেট সুব্রত চৌধুরী, আব্দুল মা‌লেক রতন, অ্যাড‌ভো‌কেট আলতাফ হো‌সেন, অ্যাড‌ভো‌কেট জগলুল হায়দার, আ ও ম শ‌ফিক উল্লাহ, মোস্তাক আহমদ প্রমুখ।

এর আগে শনিবার বিকেলে ড. কামালের বাসায় বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিকল্পধারা বাংলাদেশের শীর্ষ দুই নেতাকে। সেই বৈঠকে যোগ দিতেই ড. কামালের বাসায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এসেছিলেন অধ্যাপক বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরী। কিন্তু তারা বেইলি রোডের বাসাটিতে পৌঁছালে কেউ তাদের অভ্যর্থনা জানাতে আসেননি। বাসাও বন্ধ ছিল।

পরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে ড. কামালের বাসা থেকে ফিরে যান বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরী।

ও সময় মাহী বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব এবং তারপর আমরা বারিধারাতে আমাদের অফিসে ব্রিফিং করব। আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল। বি চৌধুরী একজন শীর্ষ নেতা হওয়ার পরও আজ তিনি নিজে ড. কামাল হোসেনের বাসায় এলেন, তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো; অথচ বাড়ির দরজা খোলার মতো কোনো লোক নেই। এটা কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। ভদ্রতার ভেতরে পড়ে না’।

কোন ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিকল্পধারার মতবিরোধ ছিল, জানতে চাইলে মাহী বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে যেগুলোর কথা বলেছি, সেগুলোই আমাদের ইস্যু। আজ ব্রিফিংয়ে আমরা সেগুলো পরিষ্কার করব।’ এখন বিকল্পধারার একটি বৈঠক হবে এবং সেই বৈঠকেই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

মাহী আরো বলেন, গণফোরামকে নিয়েও অনেকের সমস্যা ছিল। অনেক আলোচনার পর ঐক্যের কথা মাথায় রেখে বৃহত্তর স্বার্থে তাদের সঙ্গে রেখেছি, নাগরিক ঐক্যকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা সবদিক থেকেই ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ জাতির প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য ঐক্য প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো একটি মহল চায় না ঐক্যটা হোক। তারা কারা এবং কেন তারা ঐক্য চায় না, আজ আস্তে আস্তে বোধহয় বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সত্য আসলে চাপা থাকে না। কারা ঐক্য চাচ্ছে না এবং কেন চাচ্ছে না, সেটাও আজ পরিষ্কার হয়ে গেল।

এদিকে বিকল্পধারার দুই শীর্ষ নেতাকে বাসায় আমন্ত্রণ জানালেও ড. কামাল হোসেন আজ (শনিবার) সকাল থেকেই তার চেম্বারেই অবস্থান করেছেন। জানা গেছে, সেখানে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম ও ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ একাধিক নেতা এই আন্দোলন প্রক্রিয়ায় বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই দু’জন ভিন্ন কৌশলে চলছেন বলে মনে করছেন তারা।

এরপর বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বি. চৌধুরী ও মাহী বি. চৌধুরীর সঙ্গে সরকারের আঁতাত রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। এ কারণে তাদের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের পর দুই নেতা অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন পৃথক সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে ঐক্য প্রক্রিয়া চলছে তার সঙ্গে বিকল্পধারা থাকবে না।

তবে দুইটি শর্ত পূরণ হলে বিকল্পধারা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টে আসার কথা ভেবে দেখতে পারেন। দুই শর্ত হলো স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কোনো ঐক্য নয়। সংসদে ভারসাম্য ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে বিকল্প ধারাকে মোট আসন থেকে ১৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টে যাবে বিকল্পধারা।

সারাদিন এমন সব নাটকীয়তার ঘটনায় সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, এ যেন ‘এক টিকিটে দুই সিনেমা’ দেখার মতো। তারা মনে করেন, জাতীয় ঐক্য নিয়ে আগে থেকেই এক ধরণের ঝটিলতা ছিল। ঐক্যের আগেই আসন ভাগাভাগি নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। ঐক্য হলেও এর ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন তারা।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরএ/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত