কমিশনার মাহবুবের পদত্যাগ চায় ১৪ দল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:১৪ আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:১৫
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গোপনীয়তা রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন দাবি করে তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন ১৪ দল।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের অবস্থান জানান জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।
নাসিম বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার যারা সাংবিধানিক পদে রয়েছেন, তাদেরকে যেকোনো বিষয়ে গোপনীয়পতা রক্ষা করতে হবে। তিনি এটা খুবই অন্যায় করছেন। এই ধরনের পদ থেকে এই ধরনের আচরণ তার করা উচিত নয়। অন্যথায় তার পদটি ছেড়ে দেয়া উচিত।’
নির্বাচন কমিশনে মাহবুব তালুকদারের দুই দফা নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। প্রথম দফা তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আর সবশেষ গত সোমবার চারটি কারণে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেন।
এসময় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্টে দলছুট আদর্শহীন ব্যক্তিদের সমাবেশ ঘটেছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির এই সদস্য। বলেন, ‘দলছুট আদর্শহীন ব্যক্তিদের এখানে (জাতীয় যুক্তফ্রন্ট) সমাবেশ ঘটেছে। নির্বাচনের মাঠে যারা আসতে চায় আসুক। সেটা জোট করেই হোক আর মহাজোট করেই হোক, তাদের স্বাগত জানাই। আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই।’
‘তার মানে এই নয় যে, নির্বাচনের নামে অসাংবিধানিক দাবি উত্থাপন করে পানি ঘোলা করবেন। এটা যারা করছেন, তাদের বাংলাদেশের মানুষ প্রতিরোধ করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। বিষয়টি মিমাংসিত এবং সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু সেই পুরনো নিয়মে বিএনপি জামাত জোট নতুন সঙ্গী-সাথী জোগাড় করে ঐক্যের নামে নির্বাচনের বিরুদ্ধে একটি অশুভ চক্রান্ত শুরু করেছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। যে দাবি অসাংবিধানিক এবং যুক্তি ছাড়া, সে দাবি বাস্তবায়নের কোন সুযোগ নেই।’
জাতীয় যুক্তফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করে ১৪ দলের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘যারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে চক্রান্ত করে চলেছেন সেই মুখচেনা মহল ও ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে বিএনপি মাঠে নামার চেষ্টা করছে। এই ঐক্যের নামে যে সব ব্যক্তিরা সামনে আসছে তাদের সম্পর্কে সবাই জানে।’
‘১/১১ এর সময় ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা আমরা দেখেছি। তিনি সেদিন বলেছিলেন এই সরকার সংবিধান অনুযায়ী যেকোন সময় পর্যন্ত দেশ চালাতে পারে। আর সেই তিনি আজ গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছেন।’
নাসিম বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে বেইমান মোস্তাকের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেছিলেন। যিনি ১/১১ এর সময় আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি অসংবিধানিক সরকারের উপদেষ্টা থাকাকালীন সময়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো ও নাইকো, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ সমস্ত মামলা দিয়েছিল। এই ব্যারিস্টার মইনুল এখন বিএনপি জামায়াতের বন্ধু হয়েছে। যারা ১/১১ এ মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে মাঠে নেমেছিল তারা এখন মাঠে নেমেছে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। ১৪ দল এদের চেনে, এরা পরিক্ষিত গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি। এদের ডাকে বাংলাদেশের মানুষ কখনো বিভ্রান্ত বা ঐক্যবদ্ধ হবে না।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পরিধি বাড়বে কিনা সংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জোট মুখপাত্র বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের সময় মহাজোট হয়েছিল, তবে এখন এটা নেই। নির্বাচনের সিডিউল ডিক্লিয়ার হয়ে যাবে তার আগমুহূর্তে অথবা পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন মহজোট হবে কিনা বা কিভাবে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন।’
আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘অসাংবিধানিক শক্তির জোট ১৪ দলের জোট। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং যাবো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের যাত্রা পথে দেশের মানুষ আবারো ১৪ দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে এবং নির্বাচিত করবে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
ওয়াইএ/