ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সংলাপের নামে নাটক চলবে না: ফখরুল

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৬

সংলাপের নামে নাটক চলবে না: ফখরুল

সংলাপের নামে কোন নাটক চলবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চােণ করেন।

‘সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি ও ৭ দফা দাবি আদায়’ উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।

জনসভায় শুরুতেই পরিত্র কোরআন তেলাওয়াত পাঠ করেন ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক। পরে গীতাপাঠ করেন বিএনপি নেতা বাবু রমেশ দত্ত। এরপর ত্রিপিটক পাঠ করা হয় এবং বাইবেল পাট করেন যুবদলের নেতা এ্যালবার্ট প্রি কস্টা।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীকাল সরকার আবারো সংলাপের ডাক দিয়েছে। আমরা সাড়া দিয়েছি। কারণ আমরা গণতন্ত্র, সমঝোতা ও সংলাপে বিশ্বাস করি। আমরা চাই, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। জনগণ মুক্তি পাক। এখানে নাটক করলে চলবে না। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ছেড়ে দিতে হবে এবং সংসদ বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, এই শুভবুদ্ধির উদয় হবে।

নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আর গ্রেপ্তার হতে চাই না। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা বর্তমান সরকারকে পরাজিত করতে চাই। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ঐক্যফ্রন্টের যে কোন কর্মসূচি সফল করার জন্য আপনারা প্রস্তুত আছেন? এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে নেতাকর্মীরা হ্যাঁ বলে উত্তর দেন।

জনসভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১ নভেম্বর আমরা সংলাপে গিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সমস্যার সমাধান দেয়নি। কোন কাজের সংলাপ হয়নি। আগামীকাল আবারও সংলাপে যাবো। আমাদেরকে ফাঁদে ফেলা যাবে না। ধোকা দেওয়া যাবে না। সমাধান দেন। না হলে আমাদেরকে রাজপথে নামতে প্রস্তুতি নিতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমাদের দাবি সংলাপে আদায় না হলে, মাঠে নামা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। মাঠে নামলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরকারের পতন হবে। এর জন্য আপনারা প্রস্তুত হোন।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, নেতাকর্মীদের জেল থেকে ছেড়ে দিতে হবে। বেগম জিয়াকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্যারোলে মুক্তি দেয়া হবে। প্যারোলে কেনো? তাকে মুক্তি না দিলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। এই বক্তব্যের পরে মির্জা আব্বাসকে মঞ্চ থেকে বলা হয়, সময় নাই। তখন তিনি বলেন, আমার সময় নাই, না কী সরকারের সময় নাই। সরকারের সময় নাই।

দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেগম জিয়ার মুক্তি যদি প্যারোলে চান তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন। বেগম জিয়ার অধিকার আছে আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পাওয়ার। সন্ত্রাসীরা মুক্তি পায়। আর বেগম জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি পেতে হবে? সময় আসছে আপনাদেরকে প্যারোলো কবরে যেতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, আমরা ৭ দফা দাবি দিয়েছি। সুতরাং জোর করে আগামীতে নির্বাচন করা যাবে না। প্রশাসনকে ব্যবহার করেও ভবিষ্যতে কোন নির্বাচন করা যাবে না।

ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও প্রধান বক্তা হিসেবে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুল রব বক্তব্য রাখেন।

দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রায় ১ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি। অনেকে পায়ে হেঁটে আবার অনেকেই বাসে করে এসে জনসভায় যোগ দিয়েছেন।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করে শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদেরও দেখা গেছে।

অপরদিকে শাহবাগ মোড়, শিল্পকলা একাডেমীর সামনে ছোট ছোট ব্যানার নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেকেই রমনা পার্কের ভিতরেও অবস্থান নিয়েছেন।

এর আগে সকাল পৌনে ১২টা থেকে বিএনপির সংগঠন জাসাসের নেতৃত্বে জনসভায় গান পরিবেশন করা হয়। জনসভা শুরুর আগ পর্যন্ত এই গান পরিবেশন করা হয়।

জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুব্রত চৌধুরী, আব্দুল মালেক রতন, তানিয়া রব, নুরুল আলম বেপারীসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া জয়নাল আবেদীন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন আলালসহ প্রমুখ জনসভায় বক্তব্য রাখেন।

২০ দলীয় জোট নেতা মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, আন্দালিব রহমান পার্থ, সৈয়দ মুহাম্মাদ ইবরাহিম, মোস্তফা জামাল হায়দার, রেদোয়ার আহমেদ, আব্দুল লতিফ নিজামী, আহমেদ আব্দুল কাদের সভায় বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত