যে কারণে জোবাইদাকে নেতৃত্বে আনতে চাচ্ছে বিএনপি
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০৬
শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার পর আরো এক নারী রাজনীতিকের কি উত্থান হতে চলেছে বাংলাদেশে? এই প্রশ্ন কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার। ‘হাসিনার সঙ্গে টক্করে এবার খালেদার বধূ?’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানায়, কর্মীদের চাঙ্গা করে নতুন উদ্যমে ভোটের ময়দানে নামাতে এবং দলে জিয়া পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে নেতৃত্বে আনার বিষয়টি এক রকম চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপি।
জিয়া পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়া নাকি এ বিষয়ে অনুমোদনও দিয়েছেন। তারেকও সম্মত। পেশাদার চিকিৎসক ৪০ বছর বয়সী ডা. জোবায়দা রহমানও ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, রাজনীতিতে নামতে প্রস্তুত তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূর অভিষেক কেবল সময়ের ব্যাপার।
কেন ডা. জোবায়দা রহমানকে নেতৃত্বে আনার কথা ভাবছে বিএনপি? এই প্রশ্নের উত্তরও ব্যাখ্যা করেছে আনন্দবাজার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। হাজার টালবাহানার পর হত রোববার আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু দেরিতে মাঠে নামায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে তারা। রয়েছে ভাবমূর্তি সংকট।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমারন দু’জনেই দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে, তার পুত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক অবস্থান করছেন লন্ডনে। একটি মামলায় হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশের জেরে তাদের প্রার্থী হওয়া তো দূরের কথা, দলের নেতৃত্বে থাকাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জিয়া পরিবার থেকে ডা. জোবায়দা রহমানের মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে দলের মাথায় আনলে ভোটারদের কাছে যেমন বার্তা দেওয়া যাবে, দলের কর্মীরাও চাঙ্গা হবেন বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এ সম্পর্কে তারেকের ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া ভারতের কংগ্রেস যেমন চলতে পারে না, শেখ পরিবারের কাউকে ছাড়া আওয়ামী লীগকে যেমন ভাবা যায় না, জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়াও বিএনপি টিকতে পারে না।
দলের নেতৃত্বে তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনও গ্রহণযোগ্য মুখ এনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ‘দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্খিরাও’। তা মেনেই ডা. জোবায়দা রহমানকে রাজনীতিতে আনার কথা ভাবা হয়েছে। সিলেট, ফেনী এবং বগুড়ার একাধিক আসনে প্রার্থী হিসেবে তার নাম রাখা হচ্ছে।
বিএনপির শীর্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিলেট বা বগুড়া থেকে প্রাথমিক সদস্যপদ দিয়ে ডা. জোবায়দা রহমানকে আপাতত দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনী কাজে সমন্বয়ের দায়িত্বও তার হাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আপাতত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি দল চালাবেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জোবায়দার রহমানের বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী, জিয়াউর রহমানের আমলে নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মহম্মদ এরশাদের সেনা-সরকারে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেনG বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী ডা. জোবায়দার চাচা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন জোবায়দা চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হন। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন থেকে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি করেছেন।
তবে মনোনয়ন পত্রে সাক্ষর করা হয়তো এবারও জোবায়দার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তার পাসপোর্ট আপাতত লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের হাতে থাকায় ঢাকা ফিরতে সময় লাগবে। সে জন্য প্রচারের মঞ্চ থেকে তার ভিডিও-বক্তৃতা প্রচারের কথাও ভেবে রেখেছেন বিএনপি নেতৃত্ব।
সবশেষে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রশ্ন ,‘পোড় খাওয়া রাজনীতিক শেখ হাসিনার সঙ্গে লড়াইয়ে কতটা ছাপ ফেলতে পারবেন জিয়া পরিবারের এই নবাগত রাজনীতিক?’
সূত্র: আনন্দাবাজার পত্রিকা
