ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

পারলো না টাইগাররা

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৪১  
আপডেট :
 ২৭ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৪০

পারলো না টাইগাররা

ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ৭৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এই হারে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন এখন হাথুরুর শ্রীলঙ্কা। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র লংকানরা ২২১ রানে অলআউটের পর মনে হয়েছিল সহজ জয় পাবে টাইগাররা। কিন্তু সাকিবের অনুপস্থিতি আর দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তামিমের ব্যর্থতার কারণে ৯ ওভার বাকি থাকতেই হার বরণ করতে হল টাইগারবাহিনীকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট এক পা দু পা করে সামনে এগুচ্ছে। কিন্তু এখনো বৈশ্বিক কোন শিরোপা জিততে পারেনি টাইগাররা। এমনকি তিন-চার জাতির টুর্নামেন্ট জেতা হচ্ছে না বাংলাদেশের। তাই আজ সুযোগ ছিল সেই স্বপ্নের। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার সেই আশায় গুড়ে বালি। পারলো না বাংলাদেশ। ৭৯ রানের হারে আবারও নিজেদের আক্ষেপ বাড়াল।

এর আগে মিরপুরে তিনবার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডে ফরম্যাটে দুবার। দুই ওয়ানডেতেই জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়ে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। এবারও সেই একই পরিণতি। ২০০৯ এর ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল, ২০১২ এর এশিয়া কাপের ফাইনাল যেন ঘুরেফিরে বাংলাদেশকে আটকে রাখছে অপ্রত্যাশিত এক মায়ায়। যেই মায়ায় বন্দী টাইগাররা।

গত চার ম্যাচে টস জিতলেও ফাইনালের এই ম্যাচে টস জেতা হয়নি মাশরাফির। টস জিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানছিলেন মিরাজ। লঙ্কান ওপেনার গুনাথিলাকাকে ফিরিয়েছেন তামিমের ক্যাচে। বিদায়ের আগে তার সংগ্রহে ছিল ৬ রান। দলীয় রান ছিল তখন ৮।

এরপর রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান কুশাল মেন্ডিস। মেহেদী হাসানের করা আগের ওভারে তিনটি ছক্কা ও একটি চার মেরে বিধ্বংসী রুপ ধারণ করেছিলেন তিনি। পরের ওভারেই আক্রমণাত্মক এই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

দুর্দান্ত এক বাউন্সারে ব্যক্তিগত ৪২ রানে ডিকভেলাকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন সাইফউদ্দিন। ইনিংসের ২৩.৫ ওভারে সাইফউদ্দিনের বাউন্স গতির ডেলিভারি ডিকভেলার ব্যাট স্পর্শ করে শূন্যে উঠতেই তালুবন্দী করলেন সাব্বির রহমান।

দারুণ খেলতে থাকা উপুল থারাঙ্গাকে ৫৬ রানে ফেরালেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলে রিভিউ নিয়ে বেচে যাওয়া থারাঙ্গাকে পরের বলেই ফেরান তিনি। যখনই থারাঙ্গার ব্যাটে বড় রানের স্বপ্ন দেখে শ্রীলঙ্কা। ঠিক তখনই তাকে ফেরালেন মোস্তাফিজ।

উপুল থারাঙ্গার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্রুততম ৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।

২৭তম ম্যাচে উইকেটের ফিফটি পূর্ণ করলেন মুস্তাফিজ। এর আগে ৩২ ওয়ানডেতে উইকেটের ফিফটি ছুঁয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্রুততম হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শীর্ষ ছয়ে রয়েছেন মুস্তাফিজ।

থারাঙ্গার পর মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে রুবেল হোসেনের বলে তামিমের হাতে বন্দী হলেন থিসারা পেরেরা। এরপর আবারো শিকার তুলে নেন রুবেল। তার বলে দলীয় ১৮২ রানে এলবিতে ৬ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান আসেলা গুনারত্নে। ৪৫ রান করা দিনেশ চান্দিমাল বোল্ড হন রুবেলের বলে। দলীয় ২০৯ রানে আউট হওয়ার আগে তার ইনিংসে ছিল একটি ওভার বাউন্ডারি।

৮ রানের ব্যবধানে ব্যক্তিগত ১৭ রানে মোস্তাফিজের বলে মিঠুনের ক্যাচে ফিরতে হয় আকিলা ধনাঞ্জয়াকে। এরপর দলীয় ২১৯ রানে রুবেলের বলেই বোল্ড হন শেহান মাদুশাঙ্কা। আউট হওয়ার আগে দলের রানের সাথে ৭ রান যোগ করেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হন সুরাঙ্গা লাকমল, আউট হওয়ার আগে ২ রান করেন এই লঙ্কান। এতে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে লঙ্কানদের সংগ্রহ ২২১ রান। বাংলাদেশের টার্গেট হয় ২২২ রানের।

বাংলাদেশের হয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন রুবেল হোসেন। দুটি নিয়েছেন মুস্তাফিজ ও ১টি করে উইকেট শিকার করেছেন মাশরাফি,মিরাজ ও সাইফউদ্দিন।

২২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই বিদায় নেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। দলীয় ১১ রানের মাথায় বিদায় নেন ৩ রান করা তামিম। মিথুনও প্রতিদান দিতে পারলেন না। ১০ রান করে রানআউট হন তিনি। দলীয় ২২ রানের মাথায় ফিরে যান ২ রান করা সাব্বির।

২২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়লে দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু নিজের ভুলেই সাজঘরে ফিরে যান মুশফিক। দলীয় ৮০ রানে ধনাঞ্জয়ার বলে থারাঙ্গার ক্যাচে বিদায় নেন তিনি।

মুশফিকের পর দলীয় ৯০ রানে সেই ধনাঞ্জয়ার বলেই ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৫ রানে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। মাহমুদউল্লাহর সাথে সাইফের ব্যাটে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল টাইগাররা, ঠিক তখনি নিজেদের ভুলে দলীয় ১২৭ রানে রান আউট হয়ে বিদায় নেন সাইফ।

এরপর ৫ রান যোগ করে সাজঘরে ফিরে যান মাশরাফি। পরের বলেই বোল্ড হয়ে মাদুশাঙ্কার বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় রুবেলকে। সবশেষে ফিরে গেলেন ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রাখা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৭৬ রান করে মাদুশাঙ্কার বলে থারাঙ্গার হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন।

শ্রীলঙ্কার পক্ষে দুশমান্থ চামিরা ২টি, শিহান মাদুশানকা ৩টি ও আকিলা ধনঞ্জয়া ২টি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ফল: ৭৯ রানে জয়ী শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কা ইনিংস: ২২১ (৫০ ওভার)

(দানুশকা গুনাথিলাকা ৬, উপুল থারাঙ্গা ৫৬, কুসল মেন্ডিস ২৮, নিরোশান ডিকওয়েলা ৪২, দিনেশ চান্দিমাল, থিসারা পেরেরা ২, আসেলা গুনারত্নে ৬, আকিলা ধনঞ্জয়া ১৭, শিহান মাদুশানকা ৭, সুরঙ্গা লাকমল ২, দুশমান্থ চামিরা ১*; মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৫৩, মাশরাফি বিন মুর্তজা ১/১৫, মোস্তাফিজুর রহমান ২/২৯, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ০/১৮, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১/১৫, সাকিব আল হাসান ০/২০, রুবেল হোসেন ৪/৪৬)।

বাংলাদেশ ইনিংস: ১৪২ (৪১.১ ওভার)

(তামিম ইকবাল ৩, মোহাম্মদ মিঠুন ১০, সাব্বির রহমান ২, মুশফিকুর রহিম ২২, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ৫, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৮, মাশরাফি বিন মুর্তজা ৫, রুবেল হোসেন ০, মোস্তাফিজুর রহমান ০*, সাকিব আল হাসান (অ্যাবসেন্ট হার্ট); সুরঙ্গা লাকমল ০/২৯, দুশমান্থ চামিরা ২/১৭, থিসারা পেরেরা ০/৩১, শিহান মাদুশানকা ৩/২৬, আকিলা ধনঞ্জয়া ২/৩০, দানুশকা গুনাথিলাকা ০/৪)।

প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: উপুল থারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)।

প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ: থিসারা পেরেরা (শ্রীলঙ্কা)।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত