ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩০ মিনিট আগে
শিরোনাম

টেকনিকের দিক থেকে নেইমার বিশ্বের সেরা

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:৪২  
আপডেট :
 ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:৪৪

টেকনিকের দিক থেকে নেইমার বিশ্বের সেরা

‘কালো মানিক’ খ্যাত ব্রাজিলের পেলেকে বলা হয় ফুটবলের সম্রাট। পেলে খেলেছেন এমন কোনো টুর্নামেন্টের সর্বকালের সেরা একাদশ থেকে মনে হয় তাকে বাদ দেয়া যাবে না। শুধু ফুটবলারই নন, জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে জয়ী এক যোদ্ধার নাম পেলে। চলুন, শোনা যাক সেই জীবনের কিছু কথা।

আপনার ৭৭ বছর বয়স। এখনও বিশ্বকাপ এলেই আপনি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েন। আপনার কাছে এই প্রতিযোগিতার তাৎপর্য?‌

পেলে:‌ একদম ঠিক। বিশ্বকাপের কত গল্প বলব!‌ আমরা যখন খেলতাম, তখন এত সুযোগ সুবিধে ছিল না। কিন্তু আমরা সেরা ফুটবলটাই খেলেছি। ১৯৫৮ ছিল স্বপ্ন। তখনও আমি শৈশবে। কেউ ভাবেনি আমরা অতদূর যাব। সবাই ভিসেন্ট ফিওলাকে প্রশ্ন করত, একটা ১৭ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে সুইডেনে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখছেন!‌ কিন্তু আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এরপর ১৯৬২ সালে ব্রাজিল যখন ছন্দে, তখন চোট পেয়ে বসলাম। তবু আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ইংল্যান্ডে আমার হাড় ভেঙে গেল। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। এরপর ১৯৭০ সালে সব ম্যাচ খেলেছিলাম। আমার বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন হয়ে শুরু করেছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ করেছিলাম।

১৯৫৮ সালে সুইডেনের বিরুদ্ধে ফাইনালে আপনি ডিফেন্ডারের মাথার ওপর দিয়ে ফ্লিক করে অসাধারণ একটা গোল করেছিলেন। ঠিক কোন সময়ে মনে হয়েছিল ওইভাবে গোল করা সম্ভব?‌

পেলে:‌ আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলাম বললে মিথ্যে বলা হবে। ওটা হয়ে গিয়েছিল। ফুটবলার হিসেবে আমার অন্যতম বড় শক্তিই হল উদ্ভাবনী ক্ষমতা, অসম্ভবকে সম্ভব করা। ওই গোলটার সময় আমাকে অত্যন্ত দ্রুত সবকিছু করতে হয়েছিল। বুকে করে বলটা নামানোর পরেই দেখলাম ওদের ডিফেন্ডার আমার দিকে আসছে, পা ওপরে তোলা। তখন ওর মাথার ওপর দিয়ে ফ্লিক করার ভাবনাটা আসে। তবে ভাবার সময় ছিল না। হঠাৎ হয়ে গিয়েছিল।

উল্টোদিকে ১৯৭০ সালে ইতালির বিরুদ্ধে ফাইনালে আপনার হেড গোলটা একেবারে জাত গোলস্কোরারের মত।

পেলে:‌‌ ওটা আমরা প্র‌্যাকটিস করেছিলাম। অবশ্যই পুরো মুভটা নয়, কিন্তু পজিশনিংটা প্র‌্যাকটিস করেছিলাম। আমরা একটা থ্রো–‌ইন পেয়েছিলাম। ঠিকই ছিল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেরকম থ্রো করা হয়, আমরা সেটা করব না। আমাদের প্ল্যান ছিল ওদের ডিফেন্সকে একদিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে অপেক্ষায় থাকা। যখন ওদের গোটা ডিফেন্স বাঁদিকে চলে গেল, আমি একটু পেছনে ডানদিকে অপেক্ষা করছিলাম। রিভেলিনো আর আমার এটাই বোঝাপড়া ছিল।

আপনার হেড নিয়ে কিছু বলবেন?‌

পেলে:‌ এটা আমার রক্তে আছে। আমার বাবাও হেডে প্রচুর গোল করেছিলেন। বরাবরই ওঁকে নকল করার চেষ্টা করতাম। আমি যে খুব লম্বা ছিলাম, তা নয়। কিন্তু পায়ে খুব জোর ছিল। বাবা সবসময় বলতেন, বেশিরভাগ ফুটবলারই হেড করার সময় চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু চোখ যতটা সম্ভব খুলে রাখা উচিত। বলটা কোথায় পাঠাতে চাইছি, সেটা ভাল করে দেখা উচিত। এটাই প্র‌্যাকটিস করতাম। এই জন্যই হেডে এত গোল করতে পেরেছি।

কিন্তু সবসময় যে সফল হয়েছিলেন, এরকম নয়। গর্ডন ব্যাঙ্কসের সেই সেভটা এখনও সবার মনে আছে।

পেলে:‌ অবশ্যই। ওটাও একই রকম সুযোগ ছিল।

১৯৫০ থেকে ১৯৭০, ব্রাজিল একটার পর একটা দুর্দান্ত দল উপহার দিয়েছে। আপনার কি মনে হয়েছিল, আপনি বাকিদের থেকে এগিয়ে ছিলেন?‌

পেলে:‌ ব্রাজিলের ফুটবলে দারুণ সময় ছিল। গ্যারিঞ্চা, ডিডি, জিটোর মতো তরুণ ফুটবলাররা ছিল। ‌ওই সময়ে দলটা অত্যন্ত সংগঠিত ছিল। মনে আছে, ফিয়োলা আমাদের বলেছিলেন, ‘‌আমি তোমাদের থেকে বয়সে অনেকটা বড়, আমি কোচ। সেই জায়গা থেকে তোমাদের বলছি, তোমরা বিশ্বের সেরা দল। কিন্তু বিপক্ষের প্রতিটি দলকে তোমাদের সম্মান করতে হবে। একবারের জন্যও যেন তোমাদের মাথায় না আসে যে, তোমরা শুধু জেতার জন্য মাঠে নেমেছ। মাথায় রেখ, বিপক্ষের সম্ভ্রম আদায় করার জন্য তোমরা নেমেছ।’‌ এই কথাগুলো এখনও কানে বাজে। উনি আমাদের প্রফেসর ছিলেন।

এবার বিশ্বকাপ রাশিয়ায়। ব্রাজিলের কি এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রসদ আছে?‌

পেলে:‌ ব্রাজিল সবসময়ই বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার। তবে সম্প্রতি আমাদের খেলার মান পড়েছে প্রস্তুতির অভাবে। বেশির ভাগ ফুটবলারই বিদেশে খেলে। আমাদের সময়ে ছবিটা সম্পূর্ণ অন্য ছিল। আমরা অনেক সময় পেতাম। এখন সেটা হয় না। এতে কোচের কাজটা খুব কঠিন হয়েছে। তিনি দল তৈরি করার সময় পান না। তবে ব্যক্তিগত দক্ষতার দিক থেকে বলতে পারি, নিঃসন্দেহে বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা ব্রাজিলেরই।

ব্রাজিল কি ফেবারিট?‌

পেলে:‌ সবসময়। প্রস্তুতির সময় যদি পায়, তাহলে ব্রাজিল সবসময় বিশ্বকাপ জেতার দাবি রাখে।

অন্য কোন দলকে ব্রাজিলের সমীহ করার উচিত?‌

পেলে:‌ জার্মানিকে সবসময় সমীহ করতে হবে। রাশিয়া মাঝেমাঝেই শক্তিশালী দল নামায়। এবার ওরা নিজেদের দেশে খেলছে। ওদের কথা মাথায় রাখতে হবে। আর আর্জেন্টিনা এমন একটা দল, যারা সবসময় অনেক দূর যেতে পারে।

নেইমার কি ব্রাজিলকে বিশ্ব ফুটবলের চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারবেন?‌

পেলে:‌ দেশের হয়ে খেলার সময় নেইমার ওর ফুটবলের ধরনটা বদলে ফেলে। এটা ওকে করতেই হত। ক্লাবের জার্সিতে ও বাঁদিকের অ্যাটাকার হিসেবে খেলে। কিন্তু ব্রাজিলের হয়ে ও অনেকটাই মাঝখানে গিয়ে খেলে। ১০ নম্বররা যেরকম খেলে। এটা কঠিন। কিন্তু ও মানিয়ে নিয়েছে। এখন বিশ্ব ফুটবলের দিকে তাকালে আলাদা করে যে তিনজনকে নজরে পড়বে তারা হল মেসি, নেইমার আর রোনালদো। আর কোনও মহাতারকা নেই। আসল হল জাতীয় দলের হয়ে ভাল খেলা। কারন সেখানে সব জায়গায় দু–‌তিন জন ভাল ফুটবলার না–‌ও থাকতে পারে। জার্মানি এটা করে ফেলেছে। ওরা দলগত শক্তির ওপর নির্ভর করে। আগে ব্যক্তিগত নৈপুন্যের ওপর সবকিছু নির্ভর করত। কিন্তু এখন ব্যাপারটা উল্টে গেছে।

আপনার কি মনে হচ্ছে নেইমার দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত?‌

পেলে:‌ ও প্রস্তুত। হয়ত ক্লাব ফুটবল থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ হবে না, কিন্তু নেইমারই ব্রাজিলের আসল প্লেয়ার। এটা ওকে বুঝতে হবে। সেই অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে হবে। আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলব, টেকনিকের দিক থেকে ও ইতিমধ্যেই বিশ্বের সেরা। আমার মনে এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।‌‌

  • সর্বশেষ
  • পঠিত