ঘটনাবহুল ২০১৯: আলোচিত সব ঘটনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৪৭ আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:০০
অনেক ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে ২০১৯ সাল। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর টানা তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বছরের শুরুতে। একটি অগ্নিকাণ্ডেই ৭০জনের বেশি মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। অন্যদিকে ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান এবং পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝ নিয়েও তোলপাড় হয়েছিল। বছরের শেষে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল রাজাকারের তালিকা।
প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তিতে বছর জুড়ে ছিলো নানান আলোচনা। ঘটেছে ট্রেন দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও। অপরদিকে বেশ কিছু প্রাপ্তিও রয়েছে এ বছরে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সংবলিত বছরটির সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর বর্ণনা তুলে ধরা হলো।
তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার
নির্বাচন এবং তার ফলাফল নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে শুরু হয়েছিল ২০১৯ সাল। মাত্র ৭টি আসন পেয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম এবং বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গিয়েছিল। তবে নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন এবং নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করার নানান অভিযোগের মুখে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করেছিল।
টানা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে এবং মন্ত্রীসভার সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এবং মতিয়া চৌধুরীর মতো আওয়ামী লীগের পুরোনো রাজনীতিকরা এবং জোটের শরিকদের কেউ জায়গা পাননি এই মন্ত্রীসভায়। বেশির ভাগ নতুন মুখ নিয়ে গঠিত এই মন্ত্রীসভা তখন নির্বাচন ঘিরে আলোচনাকে ছাপিয়ে দক্ষতা-অদক্ষতার প্রশ্নে ভিন্ন আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।
কুমিল্লার ১৩ শ্রমিক নিহত
২৫ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের নারায়নপুর এলাকায় ব্রিক ফিল্ডে কয়লা ভর্তি ট্রাক উল্টে ঘটনাস্থলে ১৩ শ্রমিক নিহত হন। ইটের ভাটার এই শ্রমিকেরা সেখানে একটি খুপরি ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন।
ইটের ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের জন্য কয়লা পৌঁছে দিতে সেসময় একটি ট্রাক সেখানে প্রবেশ করে।
কয়লা নামানোর সময় ট্রাকটি উল্টে ঐ খুপরি ঘরটির উপর গিয়ে পরে। সে সময় একসাথে কয়লা ও ট্রাকের নিচের চাপা পড়েন শ্রমিকেরা। দুর্ঘটনার সময় সেখানে ১৫ জন শ্রমিক ঘুমাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলেই ১২ জন শ্রমিক মারা যান। অপর একজন হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।
সংসদে জাতীয় পার্টি মন্ত্রীত্ব ছাড়া বিরোধী দল
একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০শে জানুয়ারি। শিরীন শারমিন চৌধুরীই আবার স্পিকার নির্বাচিত হন। তবে বিগত দশম সংসদে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টি বিরোধীদলে বসেছিল এবং মন্ত্রীসভাতেও ছিল। এবার জাতীয় পার্টি থেকে কাউকে মন্ত্রীসভায় নেয়া হয়নি। জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ হয়েছিলেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।
চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড
২০ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ৯ বছর আগে সংঘটিত নিমতলী ট্র্যাজেডিরই পুনরাবৃত্তি করে। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছিল ১২০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষ। আর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশের চারতলা ভবনে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ৭৮ জন মানুষ। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত পাঁচটি ভবন।
এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা-সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করে জাতি। রোববার (২৪ ফ্রেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়।
ডাকসু নির্বাচন
২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি (বুধবার) মাননীয় হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সে সময় ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য পুলিশ বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়। এসব নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ।
এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর ১১ মার্চ ২০১৯ (সোমবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। একই সঙ্গে চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন।
সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়ে একটানা বেলা দুইটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ।
ডাকসু ও হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন মোট ৭৩৮ জন প্রার্থী। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ৪৩ হাজার ২৫৫ জন।
এরপর নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সমাজসেবা সম্পাদক পদ ছাড়া ডাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয় পায় ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ভোটে বেশির ভাগ পদে নির্বাচিত হয়।
নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক। তিনি পান ১১ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রেজোয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) পান ৯ হাজার ১২৯ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১০ হাজার ৪৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী। তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী রাশেদ খান পান ৬ হাজার ৬৩ ভোট।
সহসাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন ১৫ হাজার ৩০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। সেই নির্বাচনে ছাত্রলীগ একটি পদও পায়নি। তবে ভোট গণনার ফলাফল ঘোষণা না হওয়ায় পরবর্তী ছয় বছরে আর নির্বাচন হয়নি।
পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে ৭৯, ৮০ ও ৮২ সালে তিনটি নির্বাচন হয়। ৮০ ও ৮২ সালের নির্বাচনে ছাত্রদল বেশ কয়েকটি হলের ভিপি ও জিএস পদে জয় পায়।
৭৯ ও ৮০ সালের নির্বাচনে পরপর দুইবার ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান পরিষদ
৮২ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন আখতারুজ্জামান ও জিএস নির্বাচিত হন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।।
এরপর প্রায় টানা সাতবছর বন্ধ থাকার পর ডাকসু নির্বাচন হয় ৮৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ভিপি হয়েছিলেন ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের জোটের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।
পরের বছরের নির্বাচনে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন ছাত্রদল থেকে, আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুখ কবির খোকন।
বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জন ব্যক্তি নিহত হন যার মধ্যে একজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক রয়েছেন। বেশ কিছু মানুষ ভবন থেকে লাফ দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও ৭৩ জন আহত হন এবং শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও অ্যাপোলো হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা
পরিকল্পিতভাবে ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহানকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবন সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে অগ্নিদগ্ধ করা হয়। ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে সেই মামলা হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
এরপর ২৪ অক্টোবর বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেনী জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাসহ ১৬ জনের ফাঁসির রায় দেয়া হয়।
পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির মধ্যে চার আসামিকে (১৩ নভেম্বর) বুধবার ফেনী কারাগার থেকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে (১২ নভেম্বর) মঙ্গলবার এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
একই সাথে এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়াও, তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় হওয়া মামলায় তার এই সাজা হয়।
প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা
২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
এরপর ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মুসা এখনো পলাতক। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। আর বাকি আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।
জেনারেল এরশাদের মৃত্যু
সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন গত ১৪ই জুলাই। মৃত্যুর সময় তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।
তিনি নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানে তার সরকারের পতন হয়েছিল ১৯৯০ সালের শেষে। এরপরও প্রায় তিন দশক ধরে তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতা এবং ভোটের রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে পেরেছিলেন।
ফলে তার মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় ছিলো।
৯০ বছর বয়সে জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি এবং দল জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত কি দাঁড়াবে-তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে। যদিও তার মৃত্যুর পর পরই তার ভাই জি এম কাদের দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
গণপিটুনিতে রেণু হত্যাকাণ্ড
চলতি বছরে ছেলে ধরা গুজবে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনায় মৃত্যু ঘটে। তার মধ্যে গত ২০ জুলাই সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেণু।
তাসলিমা মূলত ওই স্কুলে তার দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। পরে পিটিয়ে মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
রেণু পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ভিড় করে মানুষ দেখছিলেন এবং অনেকে ভিডিও করছিলেন সেই দৃশ্য কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যাননি।
ট্রেন দুর্ঘটনা
কুলাউড়ায় দুর্ঘটনা: ২০১৯ সালের ২৩ জুন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। উপজেলার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় ৬ জন নিহত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শতাধিক যাত্রী আহত হন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস এক নম্বর লাইনে ঢুকছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে আউটারে থাকার সিগন্যাল দেয়া হয়। চালক সিগন্যাল অমান্য করে মূল লাইনে ঢুকে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিতর্কিত শোভন-রাব্বানী
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার)। তাদের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
শোভন ও গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয় সে সময়। তবে, সবচেয়ে আলোচিত ছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির ঘটনা।
এই দুই নেতা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন আদায় করে দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও অভিযুক্ত দু’জনের কেউই এ অভিযোগ স্বীকার করেননি।
শুদ্ধি অভিযান
নির্বাচনী ইশতেহারেই দুর্নীতির প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্সে’র অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঘিরে কিছু ভিন্ন স্বর শোনা গেলেও যে বিষয়ে কোনো সংশয় ছিল না তা হল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, জনপ্রিয়তা আর দেশের বদলে যাওয়ার চমকে দেয়া সাফল্য। হয়তো অত্যুক্তি হবে না, সমসাময়িক বাংলাদেশে তো নয়ই, অদূর ভবিষ্যতেও তার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প অন্তত এখনও নজরে আসছে না।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযান দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে। আরো আগেই এ ধরনের অভিযান চালানোর দরকার ছিলো বলে মত অনেকের।
দেশব্যাপী চলা ‘শুদ্ধি অভিযান’ গ্রেপ্তার হয়েছেন যুবলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ মোট ১৮ জন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিভিন্ন দফায় রিমান্ড শেষে ১৬ জন কারাগারে রয়েছেন। র্যাব হেফাজতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসবাদ চলছে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও আরমানের। নগদ সাড়ে আট কোটি টাকাসহ জব্দ করা হয়েছে প্রায় ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর। গ্রেপ্তার হয়েছেন—ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা ঠিকাদা জি কে শামীম, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি ও কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ‘অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা’ সেলিম প্রধান, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমান, জি কে শামীমের সাত দেহরক্ষী-দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম, সেলিম প্রধানের দুই সহযোগী আক্তারুজ্জামান ও রহমানসহ ১৮ জন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুয়ায়ী, বাসাবাড়ি ও অফিসসহ মোট ১৯টি স্থানে অভিযান চালানো হয়। যার মধ্যে ১১টি ক্লাবে ক্যাসিনোর অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। এর মধ্যে রাজধানীতে ৮টি এবং ৩টি চট্টগ্রামে। উদ্ধার করা বিভিন্ন ধরনের ক্যাসিনো সামগ্রী। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ং মেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, ধানমন্ডি ক্লাব, ফু-ওয়াং ক্লাব এবং চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, আবাহনী ক্লাব ও মোহামেডান ক্লাব। গ্রেপ্তার করা হয় বহুল আলোচিত ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ ১৮ জনকে। এছাড়া অভিযানের সময় বিভিন্ন ক্যাসিনোতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০১ জনকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, শিবিরকর্মী সন্দেহে আবরারকে খুন করা হয়েছে। আসামিরা ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। চার্জশিটে যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ আসামি কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৬ জন এবং এজাহারের বাইরে পাঁচজন আসামি রয়েছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৩তম ব্যাচ), মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৪তম ব্যাচ), অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মনিরুজ্জামান মনির (পানিসম্পদ বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), মো. মাজেদুর রহমান (ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মোজাহিদুর রহমান (ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), জিসান (ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মো. আকাশ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মো. শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), নাজমুল শাদাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), এহতেশামুল রাব্বি তানীম (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মোয়াজ আবু হোরাইরা (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মুজতবা রাফিদ (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ইসতিয়াক হাসান মুন্না (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (পানিসম্পদ বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মাহামুদ সেতু (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৪তম ব্যাচ)।
অন্যদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে দুই মাসের বেশি একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের পর ৪ ডিসেম্বর (বুধবার) ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন।
নিষিদ্ধ সাকিব
এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের জন্য সব রকমের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটের কাছে দায় স্বীকার করে সাকিব এই সাজা মেনেও নিয়েছেন।
তিনবার জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেলেও আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে না জানানোয় এই শাস্তি পান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকা।
২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাকিবের শাস্তির ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন বাঁ হাতি অলরাউন্ডার। তবে এক বছরের শাস্তি স্থগিত থাকবে। প্রথম এক বছরের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন নতুন করে কোনো অপরাধ না করলে পরবর্তী এক বছরের শাস্তি পেতে হবে না তাকে। সেক্ষেত্রে আগামী ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন তিনি। আর এই সময়ের মধ্যে আবার কোনো অপরাধ করলে স্থগিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি উল্লেখ করেছে, ২০১৮ সালে চার মাসের মধ্যে তিনবার জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু কোনোবারই তা জানাননি আইসিসিকে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজে দুবার ও একই বছর এপ্রিলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচে একবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেলেও তা আইসিসিকে জানাননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব।
আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী আইনে বলা আছে, কোনো ক্রিকেটার যদি জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর বা স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান, তাহলে দ্রুতই তা আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। না জানালে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী, এই ধারা ভঙ্গের সাজা সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা।
আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্স মার্শাল বলেন, ‘সাকিব খুবই অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার। সে অনেক বড় বড় আসরে খেলছে। দুর্নীতির প্রস্তাব পেয়ে তার জানানো উচিত ছিলো।’
নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস
২০১৯ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’ মুখে সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। কিন্তু মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপে এটি কার্যকর করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়।
সর্বশেষ ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হলেও পুলিশ ৩০ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত এ আইনে কোনো মামলা দেয়নি পুলিশ। বর্তমানে আইনটি প্রয়োগ হলেও সীমিত আকারে মামলা দিচ্ছে পুলিশ।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনে বেশির ভাগ ধারার জরিমানা ১০ থেকে ৫০ গুণ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেসব ধারায় এক মাস কারাদণ্ডের বিধান ছিল, এখন তা দুই বছর পর্যন্ত হয়েছে। আইনের বেশির ভাগ ধারাতেই সর্বোচ্চ শাস্তি কত হবে তা আছে, সর্বনিম্ন শাস্তির উল্লেখ নেই।
নতুন সড়ক আইনের শাস্তি: নতুন সড়ক পরিবহন আইন-এ সড়ক নিরাপত্তা ও আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান করা হবে। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর শাস্তি হবে নূন্যতম ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা নূন্যতম ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা। নিবন্ধনবিহীন গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। গাড়িতে অতিরিক্ত ওজন বহন করলে অনধিক ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ট্যাক্স টোকেন না থাকার শাস্তি হবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। হেলমেট না পরলে কিংবা ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সিটবেল্ট না বাঁধলে, চলন্ত অবস্থায় চালক মোবাইল ফোনে কথা বললে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
গাড়ি চালিয়ে ইচ্ছেকৃতভাবে কাউকে খুন করলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩০২ ধারানুযায়ী সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হবে, বেপরোয়া গাড়ি চালনা দ্বারা কাউকে আহত বা নিহত করলে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান নতুন আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, রাস্তার উল্টোদিকে গাড়ি চালানো, লেন ভঙ্গ, মোটরসাইকেলে একজনের বেশি সহযাত্রী বহন, গাড়ির ছাদে যাত্রী তোলা, ফুটপাতে গাড়ি চালানোর মতো অনিয়মগুলোকেও কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া গাড়ির ওজন ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কের ব্যবহার, গাড়ির নিবন্ধন, রুটপারমিট ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া, মোটর ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা ও প্রশিক্ষণ, গণ-পরিবহনের আসনসংখ্যা ও ভাড়া নির্ধারণ- নিয়ন্ত্রণ, নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলোও এই আইনে গুরুত্ব পেয়েছে।
আলোচিত মিথিলা
৪ নভেম্বর (সোমবার) নির্মাতা ইফতেখার আহমেদ ফাহমির সঙ্গে অভিনেত্রী ও গায়িকা রাফিয়াত রশিদ মিথিলার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মিথিলা। এরপর নানান জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সৃজিত মুখার্জিকে বিয়ে করেন মিথিলা। নিয়ম মেনে ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিয়ে করেন তারা। এ ঘটনা সম্প্রতি সময়ে ভালোই আলোচনায় ছিলো।
বিতর্কিত নুরুল হক নুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ তুলে ৪ ডিসেম্বর (বুধবার) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডাকসু ভবনে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এর আগে ভিপি নুরুলের পদত্যাগ ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ডাকসু ভবনের সামনে মানববন্ধন করে কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। পরে বিকেল পাঁচটার পর নেতা-কর্মীদের নিয়ে তালা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করেন নুরুল হক।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে নুরুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে দু’জন ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও প্রচারিত হয়। সেই অডিও ক্লিপে নুরুল হককে এক ব্যক্তির কাছে ব্যাংক গ্যারান্টি করতে সহযোগিতা চাইতে শোনা যায়। শেষে আরেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহায়তার কথা বলা হয়। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ ভিপি নুরুলকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে আখ্যা দেয়।
অডিও ক্লিপটির বক্তব্য নিজের বলে জানিয়েছেন ভিপি নুরুল হক। তবে ফোনালাপের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ একটি অংশ কেটে প্রচার করা হয়েছে। এই ‘মিথ্যা’ অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারলে ডাকসু থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন বলেও জানান তিনি।
পেঁয়াজকাণ্ড
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৫০ টাকা কেজি দরে। এখন দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যেসব ক্রেতা আগে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতেন এখন তারাই পেঁয়াজ কিনেন ২৫০ গ্রাম।
সরকারের নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কমছে না পণ্যটির দাম। জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি দেশ থেকে প্লেনে করে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে, তবুও ক্রেতা নাগালের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যটি। এবার পেঁয়াজের ঝাঁজে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রধান নায়ক এবার পেঁয়াজ। সাধারণ, খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূতখাতে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন দেশবাসী।
সামনে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ উঠলেই মূল্যস্ফীতির হার কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজাকারের তালিকা নিয়ে তোলপাড়
বছরের শেষটা ছিল রাজাকারের তালিকা নিয়ে ক্ষোভ-প্রতিবাদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এবার বিজয় দিবস উদযাপনের আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকার-আলবদরসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রকাশ করে।
সেই তালিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইবুনালের প্রধান আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় এনিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। প্রয়াত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা প্রতিবাদে নেমেছিলেন। তারা এমন তালিকা তৈরির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি দাবি করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করলে শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তালিকা স্থগিত করা হয়। তবে এনিয়ে বিতর্কের জের রয়ে যায়।
কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় আগুন
১১ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ উপজেলার চুনকুটিয়ার হিজলতলা এলাকার প্রাইম পেট অ্যাণ্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ২২ জন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেদিনই কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করেন। বাকিরা পরে হাসপাতালে মারা যান।
একতলা টিনশেড ওই কারখানায় ওয়ান টাইম প্লেট, কাপসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হত। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানা মালিক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত একজনের ভাই।
নুরের বিরুদ্ধে মামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্র ডিএম সাব্বির হোসেন মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫ থেকে ২০ জনকে।
পুলিশ জানায়, ডাকসু ভবনে অনধিকার প্রবেশ করে হত্যার চেষ্টা ও মালামাল চুরিসহ একাধিক অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে ডাকসু ভিপি নুরকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান রেজিস্ট্রি ডাকযোগে স্বরাষ্ট্রসচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ও প্রক্টর বরাবর এ নোটিশ পাঠান।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, নোটিশ গ্রহণের সাত দিনের মধ্যে ভিপি নুরুল হকের জীবনের জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এতে ব্যত্যয় হলে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, নুরুল হক নুরের ওপর এ নিয়ে সাতবারের মতো হামলা চালানো হয়েছে। অতীতের এসব ঘটনায় তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হয়নি।
এর আগে গত রোববার ডাকসু ভিপি নুরুল হককে তার কক্ষে ঢুকে আলো নিভিয়ে পেটানোর অভিযোগ ওঠে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এই মঞ্চের অনেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্তত ৩০ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
এ ঘটনায় গত সোমবার রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে শাহবাগ থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। মামলায় (৩৪ নম্বর) আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।মামলাটির বাদী শাহবাগ থানার এসআই মোহাম্মদ রইচ উদ্দিন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে