ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঘরবন্দি সাঈদ খোকন!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:১০  
আপডেট :
 ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৫৩

ঘরবন্দি সাঈদ খোকন!

নিজ বাসভবনে স্বেচ্ছাবন্দি থেকে অনেকটা একাই সময় কাটাচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন তিনি। তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে।

অনেকে মনে করছেন, দায়িত্ব পালনকালে ঢাকাবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল না হওয়া ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারায় এই নির্বাচনে প্রার্থীর পরিবর্তন হয়েছে। তবে মেয়রের দাবি, কর্তব্যে কখনও তিনি অবহেলা করেননি।

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মেয়র সাঈদ খোকন। অনেকটা হতাশাজনক ভঙ্গিতে বলেছেন, রাজনীতিতে অনেক কিছু হয়। নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

তিনি জানান, কিছুদিন একান্তে পরিবারের সঙ্গে বাসায় সময় কাটাতে চাচ্ছেন।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত সাঈদ খোকন। তার বাবা মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র। রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে গত ২৫ জুলাই এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র খোকন।

তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের যে তথ্য এসেছে সেটি কাল্পনিক তথ্য। এটা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক, বিভ্রান্তিমূলক। ছেলে ধরা, সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাঁথা।’ মেয়রের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দলের ভেতরে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এছাড়া ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আজিমপুরের পার্ল হারবাল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশের পাশেই মেয়র সাঈদ খোকন পাল্টা কর্মসূচি দেন। পরে ওই সমাবেশস্থলের সামনে ট্রাকে করে সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ঘটনায় মেয়রকেই দোষারোপ করা হয়।

ওই ঘটনায় তখন তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র খোকনের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তা নিয়েও দলীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাঈদ খোকন।

ঢাকা দুই সিটিতে বিভক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র পদে আসীন হন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের এক সময়ের জনপ্রিয় মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। এরপর পেরিয়ে গেছে সাড়ে চার বছর। এ সময়কালে দক্ষিণের মেয়র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিস্তর, বাস্তবায়ন হয়নি এগুলোর ন্যূনতমও।

জানা যায়, সাঈদ খোকনের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও। গুটিকয় ছাড়া দক্ষিণের অধিকাংশ কাউন্সিলরই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দলের হাইকমান্ডেও রয়েছে তাকে নিয়ে অসন্তোষ।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া সাঈদ খোকনের নিজের কৃতকর্মেরই মাশুল।

গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর সাঈদ খোকনকে পুনরায় মনোনয়ন দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়।

এছাড়া গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন ‘জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য এবং ভোটারদের কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন প্রার্থীদের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেয়া হবে।’

ওবায়দুল কাদেরের এমন ঘোষণার পর মেয়র খোকনের মনোনয়ন নিয়ে নানা কানাঘষা শুরু হয়। এরপর দলীয় মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত ও কাউন্সিলরদের সমর্থন চূড়ান্ত করতে শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।

বোর্ড সদস্যরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে মতামত দেন। বৈঠকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ডাকা হয়। তবে দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও নির্ধারিত সময়ে গণভবনে যাননি। পরে ফোন করে তাকে ডেকে আনা হয়।

গণভবনে মঞ্চের পাশে একটি চেয়ারে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন তিনি। পরে তাকে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ডাকা হয়। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এ সময় তার চেহারায় মলিনতা লক্ষ্য করা যায়।

তাই ধারণা করা হচ্ছে, নানা বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণেই মেয়র খোকনকে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণে সাড়ে চার বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী সাঈদ খোকনের ওপর আওয়ামী লীগ আস্থা রাখতে না পারলেও ঢাকা উত্তরে মাত্র ৯ মাস মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী আতিকুল ইসলামেই ফের আস্থা রাখতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত