ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নিচ্ছে সরকার

ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নিচ্ছে সরকার

ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যদিও চলতি অর্থবছরের অর্ধেক সময়ও এখনো পার হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে পুরো বছরের জন্য সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় শেষ হওয়ার পথে। রোববার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে মোট ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথা।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পাক্ষিক প্রধান অর্থনৈতিক সূচকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ০১ জুলাই থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৪১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে। অর্থাৎ গত পাঁচ মাসের মধ্যেই সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বাজেটে টার্গেটের সিংহভাই ঋণ নিয়ে ফেলেছে। দ্রুতই হয়তো পুরো বছরের ঋণের লক্ষ্যমাত্রার পুরো টাকাটাই হয়তো নিয়ে ফেলবে।

সরকারের ঋণ নেওয়ার এই প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।

এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ফারিয়া নাইম বিবিসি বাংলাকে বলেন, এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অর্থনীতির দুর্বলতাগুলো আরো বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তার ভাষায়, ‘ঘাটতি মেটাতে এক বার বা দুবার ঋণ নেয়া যায়, বার বার নেয়া যায় না।’

ফারিয়া নাইম আরও বলেন, সরকারের ঋণ বেড়ে গেলে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের তহবিল পেতে সমস্যা হয়। ফলে বিনিয়োগ বাড়ে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে উৎপাদনও বাড়ে না। যার ফলে বাধাগ্রস্ত হয় সামগ্রিক অর্থনীতি। আর বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাসের ঝুঁকি তৈরি হয়।

সরকারের এত বেশি ঋণ নেয়ার কারণ

এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, জিডিপিতে ৫ শতাংশ হারে ঘাটতি হতে পারে এমনটা ধরে নিয়েই সাধারণত সরকারের বাজেট ঘাটতি হিসাব করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাজেটেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হচ্ছে যে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কর আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকারও বেশি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৮ ভাগ বেশি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন,অনেক সময় সরকারের মেগা প্রকল্প এবং নানা ধরণের উন্নয়ন প্রকল্প কাট-ছাট করা সম্ভব হয় না, ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের দিকে ঝুঁকে পড়তে সরকারকে বাধ্য হতে হয়।

ড. সায়মা হক বিদিশা মনে করছেন, চলতি বছর আগে ভাগেই সরকার ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে বা আর কয়েক দিনের মধ্যেই পূরণ করে ফেলবে। ফলে সরকারের বাজেট ঘাটতি পূরণে পরিকল্পনার চেয়ে আরো বেশি ঋণ নেয়া প্রয়োজন হতে পারে।

তার মতে, ‘এ অবস্থায় ব্যয় কাট-ছাট করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আর এ কারণে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ পড়ে যেতে পারে।’

এছাড়া, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি টাকা নিয়ে নিলে ব্যক্তিগত খাতে ঋণের সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ না পেলে অনেক সময় সরকারকে চড়া সুদে বিদেশি উৎস থেকেও ঋণ নিতে হয় যা পরবর্তীতে চাপ তৈরি করে। কারণ সেটা পরিশোধ আসলে দেশ এবং দেশের মানুষকেই করতে হয়।

আর ড. বিদিশা মনে করেন, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারের আয় বাড়াতে হবে।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত