ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা দিল মজনু
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৩৫ আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৫৪
রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট ছিল বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)। এর আগেও সে বহু নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার দুপুরে কাওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেললনে এ তথ্য জানায় র্যাব।
র্যাবের মুখপাত্র সারওয়ার বিন কাশেম জানান, কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের আগেও মজনু বেশ কয়েকজনকে ধর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। এর আগেও তিনি এই কাজ করেছেন। রাস্তায় প্রতিবন্ধী নারী, ভিক্ষুকদের ধর্ষণ করত মজনু।
আরো পড়ুন: নারী ভিক্ষুকদেরও ধর্ষণ করত মজনু
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মজনু আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল ঘটনাস্থলে। ঘটনার দিন মজনু কুর্মিটোলা হাসপাতাল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার পর মেয়েটিকে দেখতে পায়। এরপরই সে আলোচিত হয়। পরে মেয়েটিকে অনুসরণ করে তার পিছু পিছু যায়। তারপর মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় সে। এরপর ঝোপের এক পাশে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর ওই ছাত্রীর রেখে যাওয়া মোবাইল-ব্যাগ নিয়ে যায় সে। এক পর্যায়ে অরুণা নামে পরিচিত এক নারীর কাছে ছাত্রীর মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে দেয়। আমরা প্রথমে ফোনের সূত্র ধরে সন্দেহভাজন একজনকে আটক করি। পরে তার দেয়া তথ্যমতে অরুণাকে আটক করি। শেষমেষ ধর্ষক মজনুকে শেওড়া রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরো যোগ করেন, এর আগেও একই জায়গায় কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে সে। প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন নারীদের সে আটকে রেখে ধর্ষণ করতো। তাদের হত্যার হুমকিও দিত।
আরো পড়ুন: মোবাইলের সূত্র ধরেই ধর্ষক মজনুকে গ্রেপ্তার
কাশেম বলেন, মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। ঢাকায় আসার পর বিভিন্ন রেল স্টেশনে কিংবা এর আশপাশে থাকতো। সে একজন মাদকাসক্ত। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হযে যায়। ১২ বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে তার দুটি দাঁত ভেঙে যায়। তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। তার বাবার নাম মৃত মাহফুজুর রহমান। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর দেওয়া বক্তব্য ও আমাদের তদন্তে মজনুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় মঙ্গলবার দিনগত রাতে।’
এর আগে ওই ছাত্রীর দেওয়া চেহারার বর্ণনা অনুযায়ী, ধর্ষকের একটি স্কেচ আঁকা হয়। সেই স্কেচ ধরে অনুসন্ধানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ছবি দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ভিকটিম বলেছে, সব চেহারা ভুলে গেলেও এই চেহারা তিনি কোনোদিন ভুলবেন না।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ধর্ষক সন্দেহে মজনুকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে আটক করে র্যাব। পরে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর জবানবন্দি মোতাবেক তাদের ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এরপরই তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। নিয়ে আসা হয় র্যাব মিডিয়া সেন্টারে।
আরো পড়ুন: ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রীর লোমহর্ষক বর্ণনা
উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে রাজধানীর শেওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী ক্যাম্পাস থেকে রওনা হন। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে ভুল করে কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকায় নেমে পড়েন ওই ছাত্রী। পরে হেটে শেওড়া যাওয়ার পথে তাকে ফলো করেন ধর্ষক। তাকে সড়ক থেকে তুলে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ওই ছাত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। তিন ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে পেলে বন্ধুদের সহায়তায় হাসপাতালে যান ওই ছাত্রী। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে ফরেনসিক পরীক্ষায় তার ধর্ষণের আলামত মিলেছে।
এ ঘটনায় পরদিন শাহবাগ ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় দুটি মামলা হয়।
ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়ের করা মামলায় ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, ধর্ষক যুবকের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি, গায়ের রং শ্যামলা। স্বাস্থ্য মাঝারি। ঘটনার সময় তার চুল ছোট ছোট ছিল। স্যান্ডেল পরা এই যুবকের পরনে পুরাতন জিন্সের প্যান্ট ছিল। গায়ে ময়লা কালো রঙের ফুলহাতা জ্যাকেট ছিল।
এদিকে, সহপাঠী ধর্ষণের শিকার হওয়ার খবর প্রকাশের পর রোববার রাত থেকে ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরএ