মুসল্লিতে মুখর তুরাগ তীর
হৃদয় আলম
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৪১ আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:১৫
মেঘলা আকাশ ও শীতের প্রকোপ উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নেমেছে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগপাড়ে। বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের পদচারণে মুখর পুরো ইজতেমা ময়দান।
শুক্রবার সকালে ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ আলমের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই পর্বের ইজতেমা। এ পর্বে ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা।
প্রথম পর্বে ইজতেমা চলবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি। চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। গত বছরের ২৮ অক্টোবর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মুসল্লিরা দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন বুধবার থেকেই। এর মধ্যে আজ শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় মানুষের ঢল।
সকালে ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, দলে দলে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা। তাদের কারো মাথায়, কারো কাঁধে, আবার কারো হাতে একাধিক ব্যাগ। অনেকে এরই মধ্যে খিত্তায় থাকার জায়গা প্রস্তুত করে নিয়েছেন।
এছাড়া বৃষ্টি ও শীতের বিষয় মাথায় রেখে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন অনেকে। অনেক মুসল্লির সাথে বৃষ্টি প্রতিরোধী পলিথিন দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার শীতের একাধিক পোশাকও নিয়ে এসেছেন সঙ্গে করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং স্পিডবোটসহ তিন স্তরের বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের ইজতেমাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই। হেলিকপ্টার এবং ড্রোনের মাধ্যমে আকাশপথে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে প্রশাসনের।
তাছাড়া আজ মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে বিশ্ব ইজতেমার আশপাশের সড়ক দিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইজতেমা ময়দানের চারপাশে র্যাব ও পুলিশের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কড়া নজরদারি চলছে। আগতদের দেহ তল্লাশি করে ময়দানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।
প্রথম পর্বের গণমাধ্যম বিষয়ক সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, প্রায় দুই মাস ধরে প্রস্তুতির কাজ চলেছে। তুরাগের দুই তীরেই আগত পুণ্যার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নদের পূর্ব ও পশ্চিম তীরের বিস্তৃত ভূমিতে চটের তৈরি বিশাল শামিয়ানা ৯২টি খিত্তায় বিভক্ত করে বিভিন্ন জেলার মুসলিমদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মেহমানের থাকার ব্যবস্থা রেখে আন্তর্জাতিক নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের প্রতিবন্ধী মুসলিমদের জন্য পৃথক নিবাস তৈরি করা হয়েছে।
আগত বিদেশি মেহমানদের সব ধরনের সেবাদানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে জহির জানান, তাদের নিজ দেশীয় আবহাওয়া ও রুচির দিকে লক্ষ রেখে থাকার ব্যবস্থা ও শতাধিক আইটেমের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া তুরাগের এপার-ওপার দুই তীরে সহজ যাতায়াতের জন্য সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ সাতটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৯ হাজার পুলিশ সদস্যসহ র্যাব ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। ময়দানের চারপাশে প্রায় ৪০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য ৩১টি ভবনে আছে ৮ হাজার ৩৩১টি শৌচাগার। ১৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে মুসল্লিদের। তিনটি গ্রিড থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ৪টি শক্তিশালী জেনারেটর প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে এবং সব ট্রেনের টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়ার কথা আছে। এবার পুরো ইজতেমাকে ৯২টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলার লোকজন খিত্তা অনুসারে বসবেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে