ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভিসিরা দুর্নীতিতে জড়ালে অবস্থা কী হবে: রাষ্ট্রপতি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৩

ভিসিরা দুর্নীতিতে জড়ালে অবস্থা কী হবে: রাষ্ট্রপতি

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের (ভিসি) সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শনিবার রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম সমাবর্তনে দেয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উপাচার্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আপনারা (ভিসিরা) নিজেরাই যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে, তা ভেবে দেখবেন?’

আক্ষেপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শুনি শিক্ষকরা ছাত্রদের কাছে নকল সাপ্লাই করে। অনেক জায়গায় শোনা যায় অভিভাবকরা নকল সাপ্লাই করে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এদের কী শাস্তি হতে পারে। মনটা চায় আর কইলাম না... বুইঝ্যা নিয়েন... ।’

পরীক্ষায় নকল প্রবণতা ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের কারণে দেশ ও জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচন করি। সে নির্বাচনে আমি ছিলাম গোটা পাকিস্তানে সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী। সত্তরের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যেতে পারিনি।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘রাজনীতির কারণে যথাসময়ে ডিগ্রি পাস করতে পারিনি। ১৯৬৯ সালে ডিগ্রি পাস করি। ৭১ সালে ল’ পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে তা সম্ভব হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালে ল’ পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। চার পেপারে পরীক্ষা। তখন সারাদেশের পরীক্ষা হয়েছিল জগন্নাথ কলেজে। আমিও সেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পরীক্ষা যখন দিতে গেলাম দেখলাম সবাই মোটা মোটা বই দেখে লিখে যাচ্ছে। বই সামনে ছাড়া খুব কমই দেখেছি। আমি তখন বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য। ভাবলাম, আমি যদি এই কাজটি করি তাহলে কেমন হয়! মাঝে মাঝে সাংবাদিকরাও আসছে। তারা যদি কিছু লেখে! পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, কপালে যা আছে হবে কিন্তু বই দেখব না। যা পারি তাই লেখলাম। ফলাফলে চার সাবজেক্টের মধ্যে দুই সাবজেক্টে পাস করি আর দুই সাবজেক্টে ফেল করি। পরে অবশ্য ১৯৭৪ সালে ভালোভাবে পড়াশোনা করে ল’ পরীক্ষা দিয়ে পাস করি।’

আরো পড়ুন: বহুবার ফেল করেছি, নকল করিনি: রাষ্ট্রপতি​

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি যদি তখন নকল করতাম আর পত্রিকায় আসতো তাহলে তো আজ তোমরা বলতে, বেটা নকল করে পাস করেছ, এখন বড় বড় কথা বলো।’

ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান

রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতায় ট্রাফিক আইন মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘প্রায় সাত বছর ধরে জেলখানারই মতোই বঙ্গভবনে আছি। রাস্তায় স্বাধীনভাবে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে টেলিভিশনে দেখি, ওভারপাস আছে অথচ ঝুঁকি নিয়ে সমানে নিচ দিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডিসিপ্লেন না মানলে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। তোমাদেরকে অনুরোধ, মানুষকে এ ব্যাপারে বোঝাও। এভাবে যত্রতত্র রাস্তা ক্রস করা ঠিক না। যেখানে ব্যবস্থা নেই সেখানে অন্য কথা। সবাইকে নিজে সচেতন হতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি জানান, বিদেশিরা এসে আমাদের চাল-চলন দেখে হতাশ হয়। এজন্য সবার প্রতি অনুরোধ, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ

সমাবর্তনে সভাপতির বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি তার রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। বলেন, ‘তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক আগে থেকে। আমি একটা ছাত্র সংগঠন করতাম। জেলা সভাপতি ছিলাম। কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে আমি তখন ভিপি ছিলাম। তখন জগন্নাথে ২৪/২৫ হাজার ছাত্র ছিল। ভিপি ছিলেন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। কাজী ফিরোজ রশিদও তখন ছাত্রলীগ করতেন।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জগন্নাথের ছাত্ররা না গেলে ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রাম পূর্ণাঙ্গ হতো না, জমতো না। আন্দোলন-সংগ্রামে জগন্নাথ কলেজের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমিও পারি না।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘আজ আমি আবদুল হামিদ, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, ফিরোজ রশিদ, আজ আমাদের তিনজনের পথ তিন দিকে। রাজু সংসদ সদস্য, তিনি একটা দল করেন। ফিরোজ রশিদও সংসদ সদস্য, তিনি আরেকটা দল করেন। আর আমি কোনো দলেই নাই। আমি সব দলই করি, আবার কোনোটাই করি না। আজ তিনজনের পথ তিন দিকে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত