ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

আসল নকলের ভিড়ে বেসামল জনগণ

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:০৪

আসল নকলের ভিড়ে বেসামল জনগণ

ফতুল্লা থেকে ৩ জন ‘ভুয়া র‍্যাব’ সদস্যকে আটক করা কয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকার চৌরঙ্গি পাম্পের কাছ থেকে তাদের আটক করে র‍্যাব-১০ এর সদস্যরা।

আটকরা হলেন, সেলিম মিয়া (৪০), আব্দুর রহিম (৪২) এবং ভুয়া র‍্যাব বহনকারী মাইক্রোবাসের চালক জাকির হোসেন (৩৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে কাছ থেকে ওয়াকিটকি, হাতকড়া, র‍্যাবের পোষাক ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। তারা প্রত্যেকেই কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা।

এর আগে ৫ জন ব্যক্তি নিজেদেরকে র‍্যাব পরিচয় দিয়ে সাইনবোর্ড মোড়ে সিগারেট কোম্পানির মাহবুব আলম (২৮) ও সোহাগ (২২) নামের দুই যুবককে গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো চ ১১-৩১৪৪) করে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় এলাকাবাসী তাদেরকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এসময় দু’জন পালিয়ে গেলেও আটকে রাখা হয় তিন জনকে। পরে র‍্যাব-১০ এর সদস্যরা খবর পেয়ে তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়।

এসময় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। র‍্যাব-১০ এর সদস্যরাও আসে। পরে র‍্যাব তিন জনকে আটক করে নিয়ে যায়।

তাদের পরনে ছিলো অবিকল র‍্যাব-পুলিশের পোষাক। হাতে অস্ত্র আর ওয়াকিটকিও থাকে। অনেকের হাতে আবার ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল লাইটও দেখা যায়। দেখে বোঝার কোন উপায় নেই আসল না নকল। তবে তারা অনেক বড় ধরনের অপরাধ ঘটাতে পারদর্শী।

সম্প্রতি বিভিন্ন অপরাধ ঘটাতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের আসল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অনেক নকল বা ভুয়া র‍্যাব-পুলিশ। আবার অনেক ভুয়া পুলিশকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনাও ঘটেছে।

সচেতন মহলের মতে, খাঁটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আর ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চেনা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের এখনই কঠোর হওয়া উচিৎ।

জেলার নবাগত পুলিশ সুপার বলছেন, সাদা পোশাকে পুলিশের একাধিক টিম রয়েছে, কাজ করছে ভুয়াদের ধরতে।

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ঘটে আরেক ঘটনা। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নম পার্ক থেকে সামান্য দূরে। এক ভদ্রলোক ড্রাইভারের সাথে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ চার জন লোক গাড়িটি ঘিরে ধরেন। তাদের কারও হাতে ওয়াকিটকি, কারও পরনে পুলিশের পোশাক। তারা নিজেদের পুলিশের সদস্য বলে পরিচয় দেন এবং লোকটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জোর করে গাড়িতে উঠে পরেন।

সঙ্গে সঙ্গে ছুটতে শুরু করে গাড়িটি। পথে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে গাড়িটি ভুইঘর পৌঁছতেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। সেইসঙ্গে গাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসে ‘বাঁচাও! বাঁচাও’ আর্তচিৎকার। জনতা ছুটে আসে। এর ফাঁকে পুলিশ পরিচয়ধারী লোকগুলো তাদের ওয়াকিটকি-পিস্তল ফেলেই লাপাত্তা হয়ে যান। আটক করতে সক্ষম হয় শামীম নামের এক যুবককে। অপহৃত হতে যাওয়া লোক ও গাড়িটিকে উদ্ধার করা হয়। তারপর পুলিশ আসে। জনতা জানতে পারে, পুলিশগুলো ভুয়া।

এরপরই ৬ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির সময় নারায়ণগঞ্জে বসবাসকারী ২ যুবকসহ ৩ জনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছিল স্থানীয়রা।

এরপর ৮ জানুয়ারি রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় ফ্যাফকন টেক্সটাইল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ২ জন কর্মকর্তা ও চালক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাচ্ছিলেন। পথে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একদল ছিনতাইকারী অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩৯ লাখ টাকাসহ প্রাইভেটকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়।

এর আগে ৭ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মো. আলমগীর খাঁ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, সে নিজেকে সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর দুই দফা দুই বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ব্যর্থ হয়ে হত্যার চেষ্টা করে।

৯ জানুয়ারি সোনারগাঁ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকসহ ৩৭টি গরু ছিনতাই করা হয়। ১০ জানুয়ারি সোনারগাঁ থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাত দলের সর্দার জাকির হোসেন, তার সহযোগী রবিন, মামুন ও নবী হোসেনকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী পরদিন (১১ জানুয়ারি) ঢাকার খিলগাঁও নাসিরাবাদ এলাকায় নবী হোসেনের গরুর খামার থেকে ওই ৩৭টি গরু উদ্ধার করা হয়।

১০ জানুয়ারি গাড়িতে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগিয়ে মাদক পাচার করার সময় নরসিংদী থেকে ২ জনকে আটক করেছে নারায়ণগঞ্জের র‍্যাব সদস্যরা। সেসময় গাড়ি থেকে ৮৭৩ বোতল ফেনসিডিল ও ১৭০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

১২ জানুয়ারি র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে ফতুল্লার ভুইঘর থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক এসআই (উপ-পরিদর্শক) রাশেদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি সাইনবোর্ড এলাকায় ভুয়া র‍্যাব সন্দেহে আরো ৩ ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানিয়রা। পরবর্তিতে র‍্যাব-১০ এর সদস্যরা এসে তাদের আটক করে নিয়ে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, এখন নারায়ণগঞ্জে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে, খাঁটি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য আর ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চেনা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি তাদের পেছনে সরকারের কারো হাত রয়েছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পবিত্র মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এদের (ভুয়া) বিরুদ্ধে এখনই কঠোর হওয়া উচিৎ।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেন, ভুয়া পুলিশ, র‍্যাব কিংবা সেনাবাহিনীর সদস্য যাই হোক না কেন, এদের ধরতে হাইওয়েগুলোতে সাদা পোশাকে পুলিশের একাধিক টিম রয়েছে। এছাড়া ঘণবসতি এলাকাগুলোতেও পুলিশ কাজ করছে।

নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান, এমন কাউকে সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কিংবা ‘৯৯৯’ এ ফোন দিতে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত