ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

সিটি নির্বাচন: পোস্টার-মাইকে জনভোগান্তি

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:২৭  
আপডেট :
 ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ২০:১৪

সিটি নির্বাচন: পোস্টার-মাইকে জনভোগান্তি

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৭দিন। ৩০ জানুয়ারির নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও পূজার কারণে তা দু’দিন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় গান বিকৃত করে প্রার্থীদের গুণকীর্তন করে মাইকে বাজানো হচ্ছে। কিন্তু অব্যাহত প্রচারণা ও মাইকের অপব্যবহার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের কাছে পরিণত হয়েছে রীতিমতো উপদ্রবে।

কিন্তু সিটি করপোরেশন (নির্বাচনী আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী কোনো প্রার্থী দুপুর ২টার আগে এবং রাত ৮টার পরে প্রচারণায় মাইক ব্যবহার করতে পারেন না।

অন্যদিকে প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো পোস্টারে ছেয়ে রয়েছে ঢাকা। এই পোস্টার যেখানে সেখানে ঝরে গিয়ে পরিবেশও দূষণ হচ্ছে। প্রচারণার সময় কর্মীরাও রাস্তাঘাটে আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন।

মেয়র ও কাউন্সির প্রার্থীদের সরবরাহ করা তথ্যানুযায়ী, মোট প্রায় ৫০ লাখ পোস্টার ছাপা হয়েছে। এসব পোস্টারের বেশিরভাগই রাস্তায় ঝুলছে এবং ছিঁড়ে যাওয়াগুলো সড়কে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু জায়গায় পোস্টারগুলো এতোই নিচু করে লাগানো হয়েছে যে এগুলো পথচারীদের চলার সময় মাথায় লেগে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও পোস্টারগুলো বাস-ট্রাক চলার সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অনেক সময় পোস্টারগুলো যাতে না ছিড়ে যায় সে জন্য গাড়িগুলোকে ধীরে ধীরে চলতে দেখা যায়।

যিনি প্রচারণার সময় সচেতন নন, নিজের শহরের দেখভাল করার জন্য এমন নির্বাচিত প্রতিনিধি চান কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

যে প্রার্থীরা একটি সুন্দর শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তারা প্লাস্টিকের আবরণ দেয়া হাজার হাজার পোষ্টার অথবা রাতের বেলার লাউড স্পিকারের পরিবেশ দূষণ করছেন!

পরিবেশবাদীরা বলছেন, যাদের হাতে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগরী গড়ার দায়িত্ব যাবে, তারাই যদি নগরীর পরিবেশের ক্ষতিকর কার্যক্রমে জড়িয়ে যান, তাহলে এ নগরী রক্ষা করবে কে, পরিচ্ছন্ন রাখবে কে? এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলেও অভিযোগ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, পলিথিনই বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবারের নির্বাচনে ভয়াবহ আকারে পলিথিনের ব্যবহারের কারণে সামনের বর্ষায় ঢাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। যদিও সিটি নির্বাচনের প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনের পর তারা এসব অপসারণ করবেন।

কল্যাণপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরমান বলেন, স্লোগানের সাথে প্রার্থীদের কাজের কোনো মিল নেই। তারা পরিবেশের কথা চিন্তা না করে যেভাবে পলিথিন ব্যবহার করেছেন তা এক কথায় জঘন্য।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, আচরণবিধিতে সাদাকালো পোস্টারের কথা বলা হয়েছে। পোস্টার লেমেনেটিংয়ের বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে না। তবে এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

ডিএসসিসির সচিব মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করছেন এটা আমাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আমি এটার বিরোধী।

নির্বাচনের পোস্টার প্লাস্টিক লেমিনেট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় সারা দেশে, বিশেষ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় ছাপা পোস্টার, ব্যানার বা প্ল্যাকার্ড প্লাস্টিক আচ্ছাদিত (লেমিনেট) করে ব্যবহার বা প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হলে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) রুলসহ এ আদেশ দেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক ও সুলায়মান হাওলাদার একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন।

রুলে সারা দেশে নির্বাচন ও অন্যান্য পলিথিন আচ্ছাদিত পোস্টার ছাপানো ও এর প্রদর্শন বন্ধ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি), নির্বাচন কমিশন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘ঢাকা সিটির ভোটের প্রচারে প্রার্থীদের অনেকেই পলিথিনে মোড়া পোস্টার ব্যবহার করছেন। পলিথিন কিন্তু পচে না, নষ্ট হয় না। এত পোস্টার যখন পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়বে তখন তা ঢাকার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হবে। এগুলো ড্রেন ও নর্দমায় জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা হবে পরিবেশের জন্য বিশাল ক্ষতি। মানবস্বাস্থ্যের জন্যও তা হবে ক্ষতিকর।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নজরে আনলে আদালত রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের পোস্টার ছাপা ও তা টাঙানো বন্ধ রাখতে হবে। তবে এখন যেসব পোস্টার আছে সেগুলো এভাবেই থাকবে। আর নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব পলিথিন মোড়ানো পোস্টার যথাযথভাবে সরিয়ে তা ধ্বংস করতে বলা হয়েছে আদেশে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত