ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাতের আঁধারে শতবর্ষী পুকুর ভরাট প্রভাবশালীদের

  পিরোজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:৪৯  
আপডেট :
 ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:৫৬

রাতের আঁধারে শতবর্ষী পুকুর ভরাট প্রভাবশালীদের

পিরোজপুরের কাউখালী সরকারি বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শতবর্ষী পুকুরটি রাতের আঁধারে বালু ভরাট করে দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে রাতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ভরাট করে পুকুরটি দখল করা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদরের ওই বিদ্যালয়টিতে ২টি পুকুর ছিলো। শিক্ষার্থীরা ওই পুকুর ২টিতে গোসলসহ স্থানীয়রা তাদের পানির চাহিদা মিটাতেন। কিন্তু গত প্রায় ১৫ বছর আগে বিদ্যালয়ের সামনের পুকুরটি ভরাট করা হয়। এতে তাদের রান্নার পানিসহ গোসলের অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হয় স্থানীয়দের।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকরা জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা বিদ্যালয়ের পিছনে থাকা একমাত্র পুকুরটি ইতিমধ্যে বারবার দখলের চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট করার কাজ শুরু করেন।

উপজেলা সদরের একাধিক ব্যবসায়ীসহ ওই বিদ্যালয়সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, পুকুরটির পানি স্থানীয়রা রান্নাসহ গোসলের কাজে ব্যাবহার করেন। তাছাড়া ওই বিদ্যালয়সংলগ্ন থাকা দেড় শতাধিক দোকান-পাটে কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে আগুন নেভাতে প্রয়োজনীয় পানির একমাত্র উৎস ওই পুকুরটি। কিন্তু শনিবার সকালে উঠে হঠাৎ পুকুরটি ভরাট দেখেন তারা। এ পুকুরটি ভরাট হলে বিদ্যালয়টির ঐতিহ্য হারানোসহ মারাত্মকভাবে ঝুঁকির সম্মুখিন হতে হবে। তা ছাড়া পুকুরটি দখল হলে স্থানীয় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে বলে জানান তারা।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই পুকুরে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলার কারণে পুকুরের পানি উপচে পাড় তলিয়ে গেছে। পাশেই ড্রেজারের পাইপ রাখা।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকী বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, এ খবর শুনে ওই রাতে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম পাঠানো হয়েছিলো। ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে গিয়ে কাউকে পায়নি।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর আলী তালুকদার জানান, রাতের আঁধারে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিদ্যালয়ের শতবর্ষী এ পুকুরটি দখলের চেষ্টায় ভরাট করছেন। এ ব্যাপারে আমি অসহায় হয়ে আমার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। পুকুর ভরাটের ব্যাপারে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে একজন বলেন, ভাই নাম প্রকাশ না করলে দখল কাজে জড়িতদের নাম বলতে পারি। তবে আমি বলছি এমন কথা জানতে পারলে আমাদের প্রাণে শেষ করে দিবে। দখল কাজে জড়িতরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কেহই দখল কাজে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করতে চান না। তবে যতদুর জানা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইয়্যাদ মো. মনু, ভাইস চেয়ারম্যান মৃদুল আহম্মেদ সুমন ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হোসেন মিল্টন দখলের চেষ্টা ও ভরাট কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইয়্যাদ মো. মনুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, ওই পুকুরটিতে প্রচুর ময়লা থাকায় তা নিষ্কাশনের জন্য চেষ্টা চলছে। রাতের আঁধারে কেন এ কাজ চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ের টাকা ব্যাপকভাবে লুটপাট করছেন। তাছাড়া তিনি স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত, এ সব বিষয় নিয়ে নিউজ করেন। এ ব্যাপারে (পুকুর ভরাট) নিউজ করা লাগবে না।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃদুল আহম্মেদ সুমনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই আমিও একজন সাংবাদিক। এ ব্যাপারে পরে আপনার সাথে কথা বলবো। এখনই কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। এটা কোন নিউজই না। তাছাড়া এ দখলের চেষ্টার সাথে আমি জড়িত এমন কথা আপনার কাছে কে বলছে?

ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা বলেন, শুক্রবার রাতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুরটি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু দিয়ে ভরাট করছে এমন খবর শুনে সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেই। কিন্তু আমি চলে আসার পর ভোর রাতে আবার সেখানে বালু দিয়ে ভরাটের কাজ চলে। কারা কি কারণে ভরাট করছে তা কিছুই জানি না। আমি এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত