ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

পুলিশের সাথে সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ২০:১৩

পুলিশের সাথে সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত

পঞ্চগড়ে পুলিশের সাথে পাথর শ্রমিকদের সংঘর্ষে জুমার উদ্দিন (৬০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় র‌্যাব ও পুলিশের ১১ সদস্যসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।

রোববার এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত জুমার উদ্দিন বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের গনাগছ এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাতে মাটি খনন করে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবিতে ঢাক পিটিয়ে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয় তেঁতুলিয়ার ভজনপুর এলাকার পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। কথামতো রোববার সকাল থেকে ভজনপুর বাজারে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার পাথর শ্রমিক। তারা লাঠি শোঠা নিয়ে পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে ওই এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ অবরোধকারীদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করলে মারমুখী হয়ে তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে ক্ষুব্ধ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ও লাঠি নিয়ে আক্রমণ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। সংঘর্ষে পুলিশ ও র‌্যাবের ১১ জন সদস্যসহ কমপক্ষে আহত হন ৩০ জন। গুরুতর আহত ৪ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা হলেন, ভজনপুর এলাকার আজিবুদ্দিন (৩৫), বুড়াবুড়ি-বালাবড়ি এলাকার শহিদুল (৪০), দেবনগর-হাওয়াজোত এলাকার ভোম্বল (৪৫), ভজনপুর এলাকার করিমুল (৫২)।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যরা হলেন, নায়েক মেহেদী হাসান (২৬), কনস্টেবল জয়ন্ত কুমার (২১) ও ইমতিয়াজ (২১)।

পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্থানীয় অন্যান্যরা হলেন, তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মূর্খাগছ এলাকার অটোভ্যান চালক মোনাজুল (৩০), নিজবাড়ি এলাকার মাহবুব (৩০), কাউরগছ এলাকার নাজমুল হক (৪০), তেঁতুলিয়ার সিপাই পাড়া এলাকার জুমের আলী (২৫)।

আহত র‌্যাব সদস্যরা হলেন, নীলফামারী র‌্যাব-১৩ এর ডিএডি আবু বক্কর, র‌্যাব সদস্য ফেরদৌস রনি ও সাইদুল ইসলাম। র‌্যাব সদস্যরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকের অফিসার ডা. সিরাজউদ্দোলা চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক পাথর শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার শরীরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তবে কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, বোমা মেশিন চক্রের সদস্যরা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। তারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের দাবি করছে। রোববার সকাল থেকে তারা ভজনপুর এলাকায় জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ দেখেই তারা লাঠিসোঠা নিয়ে আক্রমণ করে এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এমনকি আহত পুলিশদের হাসপাতালে নিতেও বাঁধা দেয়।

তিনি বলেন, চারপাশ থেকে তারা পুলিশদের ঘিরে ফেলে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ ও র‌্যাবের ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তবে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি কিভাবে মারা গেছেন তা এখনো আমরা নিশ্চিত নই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে আসছিলো একটি চক্র। স্থানীয় প্রশাসনসহ সব প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করেই তারা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের পাথর উত্তোলন ব্যবসা। এই ব্যবসাকে পুঁজি করে অনেকেই কোটিপতি বনে গেছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে পঞ্চগড়ে পুলিশ সুপার হিসেবে মোহাম্মদ ইউসুফ আলী যোগদান করার পর থেকেই মাটি খনন করে সব ধরণের পাথর উত্তোলন বন্ধে শক্ত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু বোমা মেশিন চক্র আবারো সচল হওয়ার জন্য চক্রান্ত চালিয়ে যেতে থাকে। এমনকি পাথর-বালি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংগঠনের অনেক নেতাই পর্দার আড়ালে থেকে তাদের সমর্থন দিচ্ছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত