ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

যশোরে গণপিটুনিতে ৩ সপ্তাহে ৬ মৃত্যু

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ২২:০৭

যশোরে গণপিটুনিতে ৩ সপ্তাহে ৬ মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

গণপিটুনি রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে যশোর পুলিশ। সম্প্রতি গণপিটুনিতে যশোরে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয় সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে। যশোরে গণপিটুনিতে গত তিন সপ্তাহে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে অভয়নগরে।

সাধারণ মানুষ বলছে, হয় মানুষের নৈতিক অধঃপতনের কারণ এটা ঘটছে, অথবা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সমাধান না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠছে মানুষ। প্রতিশোধপরায়ন হয়ে নিজেরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর থেকে সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে।

এদিকে গণপিটুনির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যশোরের পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। গণপিটুনি রোধে পুলিশ নানাবিধ প্রচার চালাচ্ছে। আর চুরি রোধ করার জন্য প্রত্যেকটি গ্রামে নজরদারি বাড়ানো জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি নিহত ইলিয়াস শেখ অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের হাকিম শেখের ছেলে। গত কয়েক মাস ধরেই শুভরাড়া ইউনিয়নের মাঠপাড়া এলাকায় বেশ কিছু ভ্যান চুরির ঘটনা ঘটে। এ কারণে লোকজন রাতে টহলের ব্যবস্থা করে। শুক্রবার ভোররাতে গ্রামের টহলদল হাজি আসাদ ভূঁইয়ার বাড়ির সামনে ছিল। এসময় একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানসহ ইলিয়াস শেখকে দেখলে তাদের সন্দেহ হয় এবং তাকে আটক করে।

স্থানীয়দের দাবি, এক পর্যায়ে টহলদলের সঙ্গে ইলিয়াসের উত্তেজিত বাগবিতণ্ডা হলে এলাকাবাসী তাকে পিটুনি দেয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে ইলিয়াস উপজেলার ঋষিপাড়া গ্রামের মুকুন্দর বাড়ি থেকে ভ্যানটি চুরি করেন বলে স্বীকার করেন। এরপর এলাকাবাসী ফের ইলিয়াসকে গণপিটুনি দিলে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের সুন্দলীবাজারে গণপিটুনিতে নিহত হয় মামুন রশিদ (৩০) নামের এক ব্যক্তি। তিনি উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা গ্রামের সোবহান বিশ্বাসের ছেলে। মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাকে গণপিটুনি দেয়া হয়।

গত ১৩ জানুয়ারি ভোররাতে প্রেমবাগ ইউনিয়নের প্রেমবাগ গ্রামে গরু চোর সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই রাতে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের গাইদগাছি গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে খোরশেদ আলমের তিনটি গরু চুরি হয়। চুরির ঘটনা টের পেয়ে গ্রামবাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে চোরদের দেড় কিলোমিটার ধাওয়া করে পাশের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রামের মজুমদারপাড়ায় ধরে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহতরা হলেন, খুলনার খানজাহান আলী থানার রেলগেট এলাকার সোহেল (২৭), সৈকত (৩০) ও জনি (৩০)। এ ঘটনায় পুলিশ বাগেরহাট জেলার কাটাখালী গ্রামের জনিকে আটক এবং চোরাই গরু ও গরু বহনের পিকআপ জব্দ করে।

গত ২৩ জানুয়ারি গণপিটুনিতে নিহত হন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামে ইলিয়াছ (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। এ সময় আব্দুল্লাহ (৩০) নামের এক ব্যক্তি আহত হন। দেড়টার দিকে উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের ইনসান আলীর বাড়ির তিনটি গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ইলিয়াছ ও আব্দুল্লাহকে ধরে পিটুনি দেয় জনতা। পরে ইলিয়াছ মারা যান।

এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাইটস্ যশোরের নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেছেন, এটা বেআইনি এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মানুষের নৈতিক অধঃপতনের কারণে এমন ধরনের ঘটনা বাড়ছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মানুষকে আইনের দিকগুলোকে বুঝাতে হবে এবং পুলিশের হাতে অপরাধীতে সোপর্দ করতে হবে। এটা না হলে দিনকে দিন এই ধরনের অপরাধ বাড়বে।

এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে আশু সমাধান এবং প্রতিরোধকল্পে যশোরের প্রত্যেকটি থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ক্যাম্প ও তদন্ত কেন্দ্রেগুলোর সহযোগিতায় প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে পুলিশ। রাত্রীকালিন পাহারার ব্যবস্থা ও নজরদারি বৃদ্ধির জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করা, দফাদার চৌকিদার, গ্রামপুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের নেতাদের সাথে প্রতিনিয়ত সচেতনাতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। সভা, উঠান বৈঠন, মাইকিং ও পোস্টারিং করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মানুষ অপরাধ করলে তাকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে হবে। তাকে আঘাত করা অপরাধ। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দুষ্ট লোক ঢুকে পড়ছে এবং মারপিটে উৎসাহিত করছে।

তিনি বলেন, এমনও সংবাদ পাওয়া গেছে যে- চোর সন্দেহে মানুষ আটক হয়েছে, তাকে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের উষ্কানিতে গণপিটুনি দেয়া হয়েছে। এই ধরনের কাজ যাতে না হয়, সেজন্য জনপ্রতিনিধিদের সাথে পুলিশের নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে।

তৌহিদুল ইসলাম আরও বলেন, মানুষের মধ্যে হিংস্রতা চলে আসছে। যে কারণে কোন বিবেচনা না করে সাধারণ মানুষকে পেটাচ্ছে। এই ধরণের অপরাধরোধে মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের কাজে লাগানো হচ্ছে। আশা করি এই অপরাধ যশোরে আর হবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত