ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

চার খুন: আরো এক নারীর মৃত্যু

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৫৪

চার খুন: আরো এক নারীর মৃত্যু

বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল চা বাগানে প্রতিবেশীর দায়ের কোপে গুরুতর আহত কানন বালাও (৩৪) অবশেষে মারা গেছেন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ছয় জন।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান। এ চা বাগানে গত ১৯ জানুয়ারী স্ত্রী, শাশুড়িসহ চার জনকে খুন করে নির্মল কর্মকার নামের এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। ওই দিনের ঘটনায় আহত ছিলেন কানন বালা।

সোমবার দুপুরে বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এবং পাল্লাথল চা-বাগানের হ্যাড ফ্যাক্টরি ক্লার্ক অঞ্জন দাস কানন বালার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত রোববার ভোরে প্রতিবেশী নির্মল কর্মকারের দায়ের কোপে কানন বালা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। একই ঘটনায় নিহত হন কাননের স্বামী ও মেয়েসহ চারজন।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় জানা গেছে, গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) ভোর রাতে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির পাল্লাথল চা বাগানে পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্মল কর্মকার নামে এক ব্যক্তি দা দিয়ে কুপিয়ে তার স্ত্রী জলি বুনার্জিকে হত্যা করে। এসময় জলিকে বাঁচাতে গিয়ে নির্মলের দায়ের কোপে নিহত হন জলির মা লক্ষ্মী বুনার্জি।

স্ত্রী ও শ্বাশুড়িকে হত্যা করেও ক্ষ্যান্ত হয়নি নির্মল। তাদের বাঁচাতে এসে ঘাতকের দায়ের কোপে নিহত হন প্রতিবেশী বসন্ত বক্তা এবং বসন্তের মেয়ে শিউলী বক্তা। এসময় গুরুতর আহত হন বসন্তের স্ত্রী কানন বালা। ঘটনার সময় পালিয়ে বেঁচে যায় জলির নয়বছরের শিশুকন্যা চন্দনা বুনার্জি। একে একে সবাইকে হত্যার পর নিজেকেও শেষ করে দেয় নির্মল। প্রথমে নিজেই নিজের মাথায় দা দিয়ে কোপ দেয়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতবস্থায় কানন বালাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং নিহতদের লাশ মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় রোববার রাতেই পাল্লাথল বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।

পাল্লাথল চা বাগানের হ্যাড ফ্যাক্টরি ক্লার্ক অঞ্জন দাস সোমবার দুপুরে বলেন, এই ঘটনায় পুরো বাগানবাসী স্তব্ধ। একসাথে এতজনের মৃত্যু, ভাবতেই কষ্ট লাগছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে, নির্মলের হাত থেকে তার স্ত্রী জলিকে বাঁচাতে গিয়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু বিষয়টি।

বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন সোমবার দুপুরে বলেন, কানন বালা চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আজ সকালে মারা গেছেন। সিলেট কতোয়ালি থানা পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করবে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি পাল্লাথল চা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পাঁচজনের মৃত্যুর পর আহত আরেক নারী সকালে মারা গেছেন। ঘটনাটি মর্মান্তিক। ঘটনার সময় ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে থাকার কারণে সেখানে যেতে পারিনি। ঢাকা থেকে এসেই রোববার পাল্লাথল চাবাগানের শোকাহত শ্রমিকদের সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা অনেকগুলো সেবা নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা চা শ্রমিকদের সাথে বৈঠক করেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহযোহিতায় চা শ্রমিকদের মেডিক্যাল চেকআপ এবং ফ্রি মেডিসিন দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রাপ্ত কম্বল ১০০জন শ্রমিকের মধ্যে এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত শীতবস্ত্র নিহত জলি বুর্নার্জির মেয়ে চন্দনাসহ বাগানের ৬২জন শিশুর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ১০৫জন চা-শ্রমিকের মধ্যে অনুদানের চেক দেয়া হয়েছে। নিহত জলি বুনার্জির মেয়ে চন্দনা বুনার্জির ব্যাপারে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সে যাতে শিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবে সমাজে বেড়ে উঠতে পারে এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত