ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

​যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার হুমকি

  বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:৩৬  
আপডেট :
 ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:৪৬

​যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার হুমকি

বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ছেলেপক্ষ শুধু আসবাবপত্রই নিয়েছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকার। বিয়ের দুই মাসের মাথায় মেয়ের বাবার আরও ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া গিয়েছিল ছেলে। সেখানে যুৎসই কাজ না পাওয়ায় ব্যবসা করার অজুহাতে মেয়ের বাবার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে ছেলের পরিবার। সেই টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা না নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকলে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় মেয়ের বাবা কবির হোসেন সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দিলে বিয়েই অস্বীকার করে প্রবাসী কামরুল ইসলাম ও তার পরিবার।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মরিয়ম আক্তারের সঙ্গে ঘটেছে এ অমানবিক ঘটনা। মরিয়ম উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম পাংশা গ্রামের গ্রাম পুলিশ কবির হোসেন হাওলাদারের মেয়ে। আর কামরুল একই এলাকার বিজিবি সদস্য হারুন অর রশিদের ছেলে।

মেয়ের বাবা কবির বলেন, প্রেমের সম্পর্কে উভয় পরিবারের সম্মতিতে গত ২০১৮ সালের ১৪ মে বরিশালে নোটারী পাবলিকের আদালতে এবং পরদিন ১৫মে বরিশালের ৩০নং ওয়ার্ড কাজী অফিসে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। এরপর মরিয়মকে তুলে নেওয়ার সময় পাত্রপক্ষের চাহিদা মোতাবেক সেগুনসহ দামি কাঠের খাট, আলমারি, শোকেস, ডাইনিং টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, আলনা, ওয়ারড্রবসহ সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে গৃহসজ্জার যাবতীয় আববাবপত্র বানিয়ে দেয়া হয়।

কামরুল বেকার থাকায় তাকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে কামরুলের পরিবার। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী মালয়েশিয়া যাবার ভিসাসহ যাবতীয় খরচ আমার কাছে দাবি করে কামরুলের পরিবার। মেয়ের সুখের জন্য নিজের জমি বিক্রি করে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ২০১৮ সালের ২২ জুলাই কামরুলকে মালয়েশিয়া পাঠাই। বিদেশে যাবার পর থেকেই সেখানে ভালো কাজ না পাওয়ার অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে টাকা নিতো কামরুলের পরিবার। বিদেশে বেকার জামাইয়ের থাকা-খাওয়ার খরচ, শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের খরচ ইত্যাদি বাহানায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অংকের টাকা আদায় করে কামরুলের বাবা হারুন অর রশিদ তালুকদার, মামা বশির হাওলাদার ও বড়ভাই মেহেদি হাসান।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করার বাহানায় কামরুলের জন্য আরও নগদ ১০ লাখ টাকা চান তারা। ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ৩ জন মিলে আমার মেয়ে মরিয়মকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে ওইদিনই বাড়ি থেকে বের করে দেন। দাবিকৃত ওই টাকা না এনে বাড়িতে উঠলে তাকে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন কামরুলের বাবা ও বড়ভাই।

বিয়ের কাবিননামায় ছেলেপক্ষের উকিল স্বাক্ষী ছেলের চাচা ফিরোজ তালুকদার বলেন, উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৮ সালের ১৫ মে বরিশালের ৩০নং ওয়ার্ড কাজী অফিসে বসে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। সেখানে ছেলের মা-বাবা ও ভাইসহ আমাদের পরিবারের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পরে নবদম্পতি ছেলের বাড়িতে প্রায় ২ মাস ঘর-সংসারও করেছে। বিয়েতে ঘর সাজানোর যাবতীয় ফার্নিচারসহ বিদেশ যাবার খরচের টাকাও মেয়ের বাবা দিয়েছে। এরপরেও ছেলের পরিবার এখন কীভাবে সেই বিয়েটাকেই অস্বীকার করে তা আমার বোধগম্য নয়।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাহিদ বিন আলম জানান, ঘটনাটি পারিবারিক ও প্রবাসী ছেলের পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির অভিযোগ আসায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য উভয়পক্ষের সম্মতিতে গত সোমবার বিকেলে সালিশের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে ছেলেপক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় সুরাহার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। রাতেই মেয়ের বাবা বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এখন বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় মাধবপাশা ইউপি সদস্য ফকরুল ইসলাম রোকন খলিফা বলেন, প্রবাসী কামরুলের পরিবার লোভী প্রকৃতির। মেয়ের বাবাকে সহজ-সরল পেয়ে এতোদিন ইচ্ছামতো ভেঙেচুরে খেয়েছে। তাদের লোভ এতোটাই বেড়ে গেছে যে এখন ১০ লাখ টাকা নগদ চাইছে। টাকা না নিয়ে বাড়িতে আসলে মেয়েকে পুড়িয়ে মরবে বলে আমার সামনেই হুমকি দিয়েছে ছেলের বাবা। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় এখন বিয়ে আর কাবিননামাও অস্বীকার করছে তারা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইদ্রিস হোসেন বলেন, কবির হোসেনের অভিযোগের ভিত্তিতে তার জামাতা কামরুলের বাড়িতে গেলে প্রথমে বিয়ের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করে আসামী পক্ষ। পরে তাদের বাড়িতে যৌতুক নেওয়া নতুন ফার্নিচার দেখে জিজ্ঞেস করা হলে মালামাল নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিয়ের কাবিননামা এবং হলফনামার কথা অস্বীকার করেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে কামরুলের বাবা বিজিবি সদস্য হারুন অর রশিদকে ফোন করা হলে তিনি কর্মস্থলে এবং পুত্রবধূ মরিয়মকে চেনেন না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিয়ের কাবিননামার স্বাক্ষী কামরুলের মা মেহেরুন্নেসা ডিনা পুত্রবধূর কাছে যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করলেও বিয়ে এবং গৃহসজ্জার ফার্নিচার গ্রহণসহ তার ছেলের বিদেশ যাবার সময় মেয়ের বাবার আর্থিক সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত