ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

বাংলা ভাষা চর্চায় নিরলস কাজ করছেন লক্ষ্মীপুরের ফাহাদ

  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৩৫

বাংলা ভাষা চর্চায় নিরলস কাজ করছেন লক্ষ্মীপুরের ফাহাদ

বাংলাভাষার ব্যবহার সর্বত্র নিশ্চিতে নিজ উদ্যোগে নিরলস কাজ করে চলছেন লক্ষ্মীপুরের তরুণ সংগঠক ফাহাদ বিন বেলায়েত। ‘ভাষার প্রদীপ’ নামে নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠনের মাধ্যমে এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

নিজ ভাষাপ্রেমী সম্ভাবনাময়ী সংগঠক ফাহাদ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর গ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মী মরহুম বেলায়েত হোসেন রিপনের ছেলে ।

সম্প্রতি তিনি এ কার্যক্রম সম্পর্কে নিজের মত প্রকাশ করে সংবাদকর্মীদের জানান, বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে বাবার মুখে ছোটবেলায় অনেক কথা শুনেছেন তিনি। এরপর পাঠ্যবই ও বিভিন্ন লেখকদের বই পড়েও বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ইতিহাস জেনেছেন। সেই থেকেই নিজের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্মায় তার।

তিনি আরও জানান, শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চা ও বাংলার সংস্কৃতি- ঐতিহ্য রক্ষায় ছোটবেলা থেকেই একটু একটু করে সচেতনতামূলক কাজ করার চেষ্টা করেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজ শুরু করেছেন ২০০৫ সাল থেকে।

মানুষকে বাংলাভাষা চর্চায় উদ্বুদ্ধকরণে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘দেশ টেলিকম’কে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। এ প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের বাংলাভাষায় নিজ মোবাইল নম্বর বললেই পুরস্কৃত করা হতো। নিজের ভাষা চর্চায় আগ্রহী হওয়ার প্রণোদনামূলক এ যাত্রায় অল্প সময়ে সুফল মিলতে শুরু করেছে। অন্যদিকে এভাবে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানটিও বেশ পরিচিতি লাভ করে।

সর্বত্র বাংলা ভাষা চর্চা অভ্যস্ত করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে একাজটি ছড়িয়ে দেয়ার চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই তিনি এটিকে পৃথক প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযজ্ঞে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর আলোকে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ‘ভাষার প্রদীপ’ নামের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা করেন ২০০৮ সালে। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্কুল-কলেজ, দোকান ও পার্কে শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। বাংলার ঐতিহ্য মাটির বাসন-খেলনা, কলম ও শিক্ষা-উপকরণ পুরস্কার হিসাবে বিজয়ীদের দিয়েছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ‘মায়ের ভাষায় মাকে লিখি’ ব্যতিক্রমধর্মী চিঠি লেখার আয়োজন করেন ২০১৪ সালে। এতে শিক্ষার্থীরা মায়ের ভাষায় ছোট ছোট শব্দে আবেগ, অনুভূতি, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, সুখ-দুঃখের কথা প্রকাশ করছেন। যাত্রা শুরুর পর থেকেই ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চার হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী মাকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিগুলো সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে বই প্রকাশ করা ও গুরুত্বপূর্ণ চিঠিগুলো মায়েদের কাছে পৌঁছে দেযার পরিকল্পনা রয়েছে তার। ইতোমধ্যে ৭০টি চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও পর্যায়ক্রমে সারাদেশের স্কুল-কলেজগুলোতে এ কার্যক্রম পরিচালনা করার ইচ্ছা রয়েছে তার। সেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ফেলে দ্রুত বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

জানা যায় , ফাহাদের ‘ভাষার প্রদীপ’ সংগঠনটিতে বর্তমানে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। কয়েকমাস পূর্বে চীনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে মা’ এর কাছে চিঠি লেখার এ প্রতিযোগিতা উক্ত প্রতিষ্ঠান এর ব্যানারে আয়োজন করানো হয়েছে। এছাড়া ‘ভাষার প্রদীপ’ সংগঠনটির মাধ্যমে পথশিশুদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

ফাহাদ বিন বেলায়েত বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাভাষার প্রতি আমাদের অতিমাত্রায় শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ মাসে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে পালন করি । কিন্তু বছরের অন্য সময় আধুনিকতার অজুহাতে বিদেশী ভাষা চর্চায় আমরা মেতে থাকি।

তিনি আরো বলেন, চর্চায় অনভ্যস্ততার ফলে বতর্মান প্রজন্ম বাংলাভাষা ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ভুলতে বসেছে যেন। এ অবস্থায় ভেস্তে যাচ্ছে মাতৃভাষা চর্চা ও দেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণে সরকারের নানা উদ্যোগ।’ তাই তিনি অপ্রয়োজনে ভিনদেশীভাষা ও সংস্কৃতি ব্যবহারজনিত চর্চা থেকে ফিরে নিজের মাতৃভাষা চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে সকলে প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত